রংপুর মহানগরীসহ জেলায় কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। এর ফলে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও কমছে না আলুর দাম।
রংপুর মহানগরীসহ জেলায় কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। এর ফলে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও কমছে না আলুর দাম।
গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতাসহ সচেতন মহল। এজন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং কোল্ড স্টোরেজে তদারকি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তারা।
সরেজমিনে রংপুর সিটি বাজার, মাহিগঞ্জ, সাতমাথা, সাহেবগঞ্জ, কেরানীরহাট, লালবাগ, মডার্ন, ধাপ ও তামপাটসহ মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে কার্ডিনাল জাতের আলু ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম গাইবান্ধা ও নীলফামারীসহ এ অঞ্চলে চলতি অর্থ বছরে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ টন। যা গত বছরের তুলায় ৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ৩৮টি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। এসব স্টোরেজে ধারণক্ষমতা রয়েছে ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৭ টন। সেই অনুযায়ী এখনো বেশির ভাগ আলুই রয়েছে স্টোরেজে।
পাইকারি বিক্রেতারা জানান, এই সময়টাতে গৃহস্থ বা আলু উৎপাদনকারীদের ঘরে আলু থাকে না। যা আছে স্টোরে রয়েছে। গত বছর ২৫০ টাকা বস্তা প্রতি ভাড়া থাকলেও কোনো কারণ ছাড়াই এ বছর নেওয়া হচ্ছে ৩৮০ টাকা। এই কারণে কোনোভাবেই বাজারে আলুর দাম কমছে না। মূলত বিদ্যুতের দাম বেশির অজুহাতে সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়ানো হচ্ছে, যা অযৌক্তিক।
রংপুর নগরীর লালবাগ বাজারে কথা হয় আলুর পাইকারি বিক্রেতা নুর আলম ও জলিল মিয়ার সঙ্গে। তারা বলেন, বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু রয়েছে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে। তারা দাম ছাড়ছেন না। স্টোরেই প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ৪৬ টাকা। সেই আলু রিকশায় আনা-নেওয়া খরচসহ ১ টাকা বেশি দরে বিক্রি করলেও ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আপনারই বলুন ৫০ কেজি আলুর বস্তা ভাড়া কেমন করে ৩৮০ টাকা হয়।
ক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, আলু খাবার তালিুকায় নিত্যদিনের পণ্য। প্রতিটি সংসারে কমবেশি প্রতিদিন আলু রান্না হয়। কিন্তু বর্তমানে আলুর বাজার সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছে। রংপুরের উৎপাদিত আলুর দাম যদি এত হয় তাহলে চলবে। এজন্য কোল্ড স্টোরেজের সিন্ডিকেট ভাঙা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এদিকে অতিরিক্ত হিমাগার ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ ও ভাড়া কমানোর দাবি তুলেছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বুধবার দাবি আদায়ে রংপুরের মাহিগঞ্জ নব্দীগঞ্জ এলাকার ঢাকা-কুড়িগ্রাম সড়ক সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরোধও করেন তারা।
আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলুর হিমাগার ভাড়া অন্য জেলায় ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। কিন্তু রংপুরের হিমাগারগুলোতে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতি জুন থেকে বিভিন্ন সময় হিমাগার ভাড়া ২৮০ টাকা করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করলেও মালিকপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি।
পীরগাছার নব্দীগঞ্জ এলাকার আলু চাষি রেজাউল করিম বলেন, ‘হামরা রোদে পুড়ি আবাদ করি লাভ পাই না। আর হিমাগার মালিকেরা কেজিতে ছয়-সাত টাকা নেয়। আগোত তো এতো দাম আছলো না। ৯০ কেজি বস্তা ৩০০ টাকা নিছলো। এ্যালা ৫০ কেজির বস্তা ৩৬০ টাকা নেওছে। এমারে জন্যে আলুর দাম বাড়লেও লাভ হামরা পাই না। ওই জন্যে রাস্তাত দাঁড়াছি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, চলতি বছর রংপুরসহ সারা দেশে চাষিদের কাছ থেকেই বেশি দামে আলু বাজারে এসেছে। হিমাগারে রাখা আলুর দামও বেশি পড়ছে। বিদ্যুতের দাম বেশি, পরিবহন মজুরিসহ অন্যান্য খরচ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। গত বছর আলুর যে সংকট হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য বাড়তি যে উৎপাদন দরকার ছিল সেটা হয়নি।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর