বাংলাদেশের হকিতে অর্ন্তদ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে ফেডারেশনের নির্বাচনে হকির এই কদর্য রূপ বরাবরই প্রকাশ পায়। তবে এবার সার্চ কমিটির সদস্য মেজর ইমরোজ আহমেদকে নিয়ে সাবেক হকি খেলোয়াড় ও সংগঠকরা পাল্টাপাল্টি অবস্থানে।
বাংলাদেশের হকিতে অর্ন্তদ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে ফেডারেশনের নির্বাচনে হকির এই কদর্য রূপ বরাবরই প্রকাশ পায়। তবে এবার সার্চ কমিটির সদস্য মেজর ইমরোজ আহমেদকে নিয়ে সাবেক হকি খেলোয়াড় ও সংগঠকরা পাল্টাপাল্টি অবস্থানে।
গত সপ্তাহে ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের গঠিত সার্চ কমিটির সদস্য মেজর ইমরোজ আহমেদের অপসারণ চেয়েছিলেন কয়েকজন সাবেক হকি খেলোয়াড়। সার্চ কমিটির হকি সংক্রান্ত সভায় আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে পক্ষপাত এবং ইমরোজ আহমেদকে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে আখ্যায়িত করে অপসারণ দাবি করেছিলেন কয়েকজন খেলোয়াড় ও সংগঠক। আজ রোববার সেই দাবির প্রতিবাদ জানিয়েছেন হকির অন্য সাবেক খেলোয়াড় ও সংগঠক এবং বর্তমান খেলোয়াড়রা।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নতুন ভবনের সামনে ‘মিথ্যা অপবাদ ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ’ নামক তিনটি ব্যানারে বর্তমান, সাবেক খেলোয়াড় ও সংগঠকরা দাড়িয়েছিলেন। তারা মেজর ইমরোজের সততা ও দক্ষতার প্রতি আস্থা পোষণ করেছেন। পাশাপাশি যারা ইমরোজকে অপসারণের দাবি তুলেছেন তাদের উপর উল্টো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন।
বর্ষীয়ান হকি খেলোয়াড় ও কোচ হোসেন ইমাম চৌধুরি শান্টা। তিনি ইমরোজ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি তার সিনিয়র হলেও এক সঙ্গে খেলেছি। সে ভালো মানের খেলোয়াড় ছিল এবং তার সাংগঠনিক দক্ষতা বেশ ভালো। দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গেমস ও টুর্নামেন্টে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি সবারই জানা। তার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত হকি খেলোয়াড় মামুনুর রশীদ ইমরোজের অপসারণ ইস্যুকে দুষ্ট চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন, ‘হকিতে গুটি কয়েক লোক রয়েছেন। যারা এই সুন্দর পরিবেশকে নষ্ট করছেন। তারা আসলে হকির ভালো চান না।’ মামুনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রফিকুল ইসলাম কামাল ইমরোজের অপসারণ দাবী করাদের শাস্তি চেয়েছেন।
হকি অঙ্গনের অন্যতম সজ্জন ব্যক্তি আবু জাফর তপন। সাবেক এই হকি খেলোয়াড় আজকের প্রতিবাদে এসে দু’টি প্রশ্ন উথাপন করেছেন, ‘আজ এখানে কারা এসেছে আর সেদিন কয়জন এবং কারা ছিল। এই দু’টি চিত্র দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ঠ। পাশাপাশি সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে এক মাস আগেই। এত দিন পর ইমরোজ ভাইকে নিয়ে প্রশ্ন কেন?’
সাবেক তারকা হকি খেলোয়াড়দের পাশাপাশি বর্তমান কয়েকজন খেলোয়াড়ও ছিলেন। বর্তমান খেলোয়াড়দের পক্ষে পুষ্কর ক্ষিসা মিমো বলেন, ‘দুই জন তিন জন খেলোয়াড় ও সংগঠক সার্চ কমিটির কর্মকান্ডকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। এজন্য আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।’
মেজর ইমরোজের অপসারণ দাবির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রাসেল খান বাপ্পী। তিনি হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি। সেই কমিটি পুর্নগঠনের দাবি জানিয়েছেন মিমো, ‘১৬-১৭ ধরে তারা সমিতি দখল করে আছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সেটা অবৈধ। আমরা হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি পুনগর্ঠন চাই।’
বর্তমান, সাবেক হকি খেলোয়াড়, সংগঠকদের একাংশ উপদেষ্টা বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব উপস্থিত না থাকায় সেটা পরিচালক ক্রীড়া শামসুল আলম গ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার আরেক পক্ষও চিঠি দিয়েছিল।
সার্চ কমিটির প্রধান সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন জোবায়েদুর রহমান রানা। হকির এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। ভুল হতেই পারে। আলোচনা-প্রতিবাদও আমরা গ্রহণ করব। কিন্তু সেই প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে ইতিবাচক। নোংরা শব্দ চয়ন কখনোই কাম্য নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।’
সার্চ কমিটি বেশ কয়েকটি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির খসড়া তৈরি করেছিল। এর মধ্যে হকিও আছে। এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানে খানিকটা দ্বিধান্বিত অবস্থায় সার্চ কমিটি, ‘এই রকম পরিস্থিতিতে আমাদের আরেকটু ভাবতেই হচ্ছে। কিছু বিষয় আমরা খতিয়ে দেখব। যদি সত্যতা না পাওয়া যায় তাহলে সেটা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।’
বৃহস্পতিবার মেজর ইমরোজের অপসারণ দাবিতে মোহামেডানের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছিল। আজ সেটার প্রতিবাদে মেরিনার্সের কর্মকর্তাদের আধিক্য ছিল বেশি। আজকের প্রতিবাদে কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়, সংগঠকের পাশাপাশি স্কুলের ছাত্রও ছিল।
এজেড/এইচজেএস