সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের ১১১ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ

সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের ১১১ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তার পরিবারের নামে ১১১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তার পরিবারের নামে ১১১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

যার মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০ কোটি টাকা গচ্ছিত রাখার প্রমাণ মিলেছে। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের দালিলিক মূল্য শত কোটি টাকা, বাস্তবে মূল্য হবে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে অধিকাংশের প্রমাণ পাওয়া গেলেও বৈধ উৎস নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে মুস্তফা কামাল, তার স্ত্রী কাশমেরী কামাল ও সন্তানদের নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ শতাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, রাজউক, ঢাকা ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, রেজিস্টার অফিস ও ভূমি অফিসসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে নথিপত্র তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর কমিশনে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আগে থেকেই সাবেক অর্থমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিদেশে কর্মী পাঠানোর দুর্নীতির বিষয়ে কমিশনে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এবার যে অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, সেটির অধিকাংশের গোয়েন্দা সত্যতা মিলেছে।

জানা গেছে, দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফার নামে ঢাকার জোয়ারশাহারা, বাড্ডা, উত্তরা ও কুমিল্লায় জমি, বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা, শেয়ারে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ২০ কোটি ৪৮ লাখ ২৫ হাজার ২০৬ টাকা বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া লোটাস কামাল প্রপার্টিজ, অরবিটাল এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ, তার স্ত্রী কাশমেরী কামালের নামে কুমিল্লা, ঢাকার গুলশান ও বাড্ডাসহ বিভিন্ন জায়গায় জমি, প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে।

অন্যদিকে তার স্ত্রী কাশমেরী কামালের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা, শেয়ারে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয়পত্রে আরও ৩৮ কোটি ৮৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫০৬ টাকা, তার স্ত্রীর নামে লোটাস কামাল প্রপার্টিজ এবং সৌদি বাংলাদেশ কন্ট্রাকটিং কোং লিমিটেডসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে ২০ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার ৯৭২ টাকার বিনিয়োগ, তার নামে তিনটি গাড়ির সন্ধান মিলেছে।

এসব সম্পদের বাইরেও মুস্তফা কামালের দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলেও প্রাথমিক তথ্য রয়েছে।

তাছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তার পরিবার, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত ফি বাবদ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চক্রটি চাকরির ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাত্র দেড় বছরে তাদের মালিকানাধীন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখের মতো লোক পাঠিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ওই সময়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হলেও অতিরিক্ত ফি হিসেবেই প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হয়। এত শ্রমিক পাঠালেও অনেকেই কাজ করার অনুমতি না পাওয়ায় ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। এমন অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদকের উপ-পরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম কাজ করছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন ফেনীর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। তার মালিকানাধীন স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড লাইসেন্স নেওয়ার সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১০০ কর্মী বিদেশে পাঠায়। অথচ মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট চক্রে যোগ দেওয়ার পর গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার কর্মী পাঠায় স্নিগ্ধা ওভারসিজ। নিজাম হাজারীর মতো আরও দুজন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পরিবারের দুজন সদস্যের রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট চক্রে।

আরএম/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *