সরকারি বন্ড বিক্রির ধুম, দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় মালদ্বীপ

সরকারি বন্ড বিক্রির ধুম, দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় মালদ্বীপ

ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়ায় এমনিতেই বেশ আর্থ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। এর মধ্যেই সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের সরকারি বন্ড সুকুক বিক্রির ব্যাপক হার এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছে।

ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়ায় এমনিতেই বেশ আর্থ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। এর মধ্যেই সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের সরকারি বন্ড সুকুক বিক্রির ব্যাপক হার এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছে।

মালদ্বীপের অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের সুকুক বিক্রির হার যদি শিগগিরই নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মালদ্বীপকে দেউলিয়া হওয়ার পথে পরিচালিত করবে।

প্রসঙ্গত, সুকুক ইসলামিক বন্ড নামেও পরিচিত। শরিয়া মেনে তৈরি এই সরকারি বন্ডের প্রচলন দেখা যায় মূলত ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোতে। গত এক দশকে বিশ্ব বাজারে সুকুকের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিন্তু চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে মালদ্বীপে ডলারের বিপরীতে সুকুকের দাম ৭০ শতাংশ কমে যাওয়ার পর দেশটির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই বন্ড ব্রিক্রি করে দেওয়ার ধুম শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মালদ্বীপের রিজার্ভের মজুত কমে যাওয়াই সুকক বন্ডের মূল্যহ্রাসের প্রধান কারণ।

দেশটির ডান্সকে ব্যাংকের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক সোয়েরেন মোয়ার্চ মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেন, “আমাদের ব্যাংকে যতগুলো সুকুক বন্ড ছিল, চলতি বছরের গ্রীষ্মের শুরুর দিকে সেগুলোর অধিকাংশই আমরা বিক্রি করতে পেরেছিলাম। কিন্তু ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীরা সুকুক বিক্রি করা শুরু করেছেন। যদি এটা বন্ধ না হয়, তাহলে অচিরেই মালদ্বীপের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তো শেষ হবেই, উপরন্তু বিনিয়োগকারীদের পাওনা মেটাতে সরকারকে বিপদে পড়তে হবে।”

গত ২৪ জুন একটি বিবৃতি দিয়েছিল মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেখানে এক বছর আগেও দেশটির রিজার্ভ ছিল ৭০ কোটি ডলার, সেখানে বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে নেমেছে ৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারে।

সংকট এখানেই শেষ নয়, কারণ যে অর্থ রয়েছে— তার বড় অংশই ব্যয় হবে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাবদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান রিজার্ভ থেকে বড়জোর ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যবহার করতে পারবে মালদ্বীপ।

অন্যদিকে, সুকুকের সব বিনিয়োগকারী যদি তাদের বন্ড বিক্রি করে দেন, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের অর্থ পরিশোধ বাবদ আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে মালদ্বীপকে। ডলারের মজুত ধরে রাখতে ইতোমধ্যে গ্রাহকদের ডলার ক্রয়-বিক্রয়ে বিধিনিষেধ জারি করা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে।

প্রসঙ্গত, মালদ্বীপের বিদেশি মুদ্রা উপার্জনের প্রায় একমাত্র খাত পর্যটন এবং প্রতি বছর যেসব বিদেশি পর্যটক মালদ্বীপে যান, তাদের একটি বড় অংশই ভারতীয়।

কিন্তু গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষা দ্বীপ সফরকে নিয়ে মালদ্বীপের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটুক্তি ও বিরূপ সমালোচনা দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করে। ভারতীদের অনেকেই সামাজিক যোগামোধ্যমে মালদ্বীপকে বয়কটের ডাক দেন। তারপর থেকেই দেশটিতে কমে গেছে ভারতীয় পর্যটকদের আগমনের হার।

সম্প্রতি অবশ্য ফের যাওয়া শুরু করেছেন মালদ্বীপে; কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে যে সংকট দেখা দিয়েছে— বিদেশি ঋণ ব্যাতীত তার সমাধান সম্ভব নয়।

“আমাদের একটি বড় সমস্যা হলো, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই আমদানি করতে হয়। রিজার্ভের মুদ্রার একটি বড় অংশই ব্যয় হয় এ খাতে,’ মার্কিন দৈনিক ব্লুমবার্গকে বলেছেন একজন অর্থনীতিবিদ।

সূত্র : ব্লুমবার্গ

এসএমডব্লিউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *