সরকারি জমিতে অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট, আতঙ্কে ব্যবসায়ী-পর্যটকরা

সরকারি জমিতে অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট, আতঙ্কে ব্যবসায়ী-পর্যটকরা

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নামার ঠিক আগমুহূর্তে বেড়িবাঁধ অতিক্রম করতেই রাস্তার দুপাশে নজরে পড়বে জরাজীর্ণ এলোমেলো এবং ঝুঁকিপূর্ণ শতাধিক টিনশেড ছোট-বড় মার্কেট ও দোকানপাট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সরদার মার্কেট নামের একটি দোতলা টিনশেড মার্কেট। এ মার্কেটের নিচতলায় রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানপাট এবং দোতলায় একপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে আবাসিক হোটেল এবং অন্য পাশে রয়েছে দুটি রেস্টুরেন্ট।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নামার ঠিক আগমুহূর্তে বেড়িবাঁধ অতিক্রম করতেই রাস্তার দুপাশে নজরে পড়বে জরাজীর্ণ এলোমেলো এবং ঝুঁকিপূর্ণ শতাধিক টিনশেড ছোট-বড় মার্কেট ও দোকানপাট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সরদার মার্কেট নামের একটি দোতলা টিনশেড মার্কেট। এ মার্কেটের নিচতলায় রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানপাট এবং দোতলায় একপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে আবাসিক হোটেল এবং অন্য পাশে রয়েছে দুটি রেস্টুরেন্ট।

পরিবেশকর্মী ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, জরাজীর্ণ এলোমেলো এই টিনশেড ঘরগুলো সৈকতের পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি আগত পর্যটকরাও রয়েছে নানা ঝুঁকিতে। এগুলো অপসারণ করে সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ পর্যটকবান্ধব করার জোর দাবি জানান তারা। এদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে সরকারি খাসজমিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট, অচিরেই করা হবে অপসারণ।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পাশে সরজমিনে দেখা যায়, সৈকত লাগোয়া প্রায় এক একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে সরদার মার্কেট নামের একটি বিশাল দোতলা টিনশেড মার্কেট। মার্কেটটিতে ঢুকতেই চোখে পড়বে লোহার এঙ্গেল,বাঁশ, কাঠসহ নানা যন্ত্রাংশের ওপর দাঁড়িয়ে আছে টিনশেড এই মার্কেটটি। বিদ্যুতের এলোমেলো লাইনগুলো দেখলে মনে হয়, এটি যেন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। দোতলায় থাকা আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্টের ময়লা পানি সবসময়ই পড়ছে নিচে মার্কেটে আসা পর্যটকদের গায়ে। এমনকি টয়লেটের এলোমেলো পাইপগুলো ফেটে বিভিন্ন জায়গা থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ ও ময়লা।

অবাক করার বিষয় হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এই মার্কেটটিতে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই চোখে পড়বে সুন্দর একটি রেস্টুরেন্টের। হঠাৎ দেখলে যে কেউ মনে করবে এটি যেন বিলাসবহুল হোটেল বা রিসোর্টের কোনো রেস্টুরেন্ট। প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ একসঙ্গে বসে খেতে পারে এখানে। এই রেস্টুরেন্টের মেঝেতে বসানো হয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের নান্দনিক টাইলস। এই টাইলসগুলো মূলত কাঠের সিলিংয়ের ওপর ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে দুই ইঞ্চি পরিমাণ ঢালাই করে এই টাইলসগুলো বসানো হয়েছে। এদিকে দোতলার আর একটু পেছনে গেলেই চোখে পড়বে আবাসিক হোটেল নির্মাণের মহা কর্মব্যস্ততা। যেখানে চলছে লোহার অ্যাঙ্গেলে ঝালাইয়ের মাধ্যমে জোড়াতালির কাজ। এদিকে মার্কেটের মূল স্তম্ভের খুঁটিগুলো অধিকাংশই ভেঙে দুর্বল হয়ে গেছে। মূলত সমুদ্রে জোয়ার এলে সেই ঢেউয়ের পানি মার্কেটের নিচে সরাসরি আঘাত করে। এভাবে সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে মার্কেটের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের খুঁটিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় আবাসিক হোটেল নির্মাণে কাজ করা ঝালাইমিস্ত্রি মনু মিয়ার সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, লোহার খুঁটি এবং কাঠের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে পুরো মার্কেট তৈরির জন্য। মার্কেটটি দোতলা করতে প্রতি ছয় ফুট পর পর লোহার অ্যাঙ্গেল এবং লোহার বক্স ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর সেই লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর কাঠ বিছিয়ে ঢালাই দিয়ে টাইলস বসানো হয়েছে। মূলত মার্কেটের দোতলায় পেছনের দিকে আবাসিক রুম তৈরি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মার্কেটের দোতলায় থাকা রেস্টুরেন্ট মালিক নুরুজ্জামান নুরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিজেই মার্কেটের এলোমেলো বিদ্যুতের তারগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছি। এটা আসলেই খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আমি মার্কেটের অন্যান্য দোকানদারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমি নিজে মার্কেট মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি যেন বিদ্যুতের এলোমেলো তারগুলো ঠিক করা হয়।

তিনি আরও বলেন, মার্কেটটির দোতলায় হাঁটার সময় একটু দোলে কিন্তু ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ।

মার্কেটের বার্মিজ আচার ব্যবসায়ী মো. রাসেল বলেন, মাঝেমধ্যে এত পরিমাণ দুর্গন্ধ আসে যে পর্যটক দোকানে এলে দাঁড়াতে পারে না। আর যদি পর্যটক দোকানে না দাঁড়ায় তাহলে আমাদের বেচাকেনা হয় না। তার থেকেও বড় সমস্যা হচ্ছে প্রায় সময়ই উপরের রেস্টুরেন্ট এবং বাথরুমের পাইপ থেকে ময়লা পানি পড়ে। এই বিষয়গুলো আমরা মালিককে একাধিকবার জানালেও এখন পর্যন্ত ঠিক করে দিচ্ছে না।

মার্কেটের আরেক ঝিনুক সামগ্রী ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত চার বছর আগে একবার এই মার্কেটে আগুন লেগেছিল, তখন অধিকাংশ দোকান এবং দোকানের মালামাল পুড়ে গিয়েছিল। গত এক বছরে ৪ থেকে ৫ বার শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুন লেগেছে এই মার্কেটে। প্রতিবারই মার্কেট ব্যবসায়ীরা নিজেদের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এখন আমাদের একটাই দাবি আমরা যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছি, তারা যেন নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবসা করতে পারি।

পাবনা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক বেলায়েত হোসেন বলেন, আমি পরিবার নিয়ে এই মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছি। কিন্তু এই মার্কেটটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। লোহার অ্যাঙ্গেল এবং কাঠের ওপর এত বড় একটি মার্কেট তৈরি করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। পর্যটকরা আতঙ্ক নিয়ে কেন একটি মার্কেটে অবস্থান করবে। একজন পর্যটক হিসেবে আমার দাবি হচ্ছে এগুলো ভেঙে সরকারিভাবে যেন সুন্দর মার্কেট তৈরি করা হয়।

তবে এ বিষয়ে সরদার মার্কেটের মালিক সাজেদুল ইসলাম হিরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মার্কেটটি কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবুও যদি উপজেলা প্রশাসন এবং কুয়াকাটা পৌর প্রশাসন বলে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ তাহলে আমি মার্কেট ভেঙে সরিয়ে নেব।

কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক কৌশিক আহমেদ বলেন, মার্কেটগুলো আমরা দেখেছি, জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা আইন অনুযায়ী সমুদ্র সৈকতে যে দুর্গটা আছে, সে অনুযায়ী আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। আর এই মার্কেটগুলোতে পৌরসভার পক্ষ থেকে অচিরেই আবার পরিদর্শন করা হবে। পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার টিম রয়েছে তারা যদি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এটি পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ প্রমাণিত হলে পর্যটকদের সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হবে এবং ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আশ্রয় চলে যেতে অনুরোধ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সৈকতের পাশে থাকা এই সমস্ত মার্কেটগুলো একে তো ঝুঁকিপূর্ণ, অন্যদিকে সৈকত এলাকার পরিবেশও নষ্ট করছে। মার্কেটের সম্পূর্ণ জমি সরকারি সম্পত্তি। সকল রেকর্ডে এগুলো সরকারের খাসজমি। এখন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মামলা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই জায়গাগুলো অপসারণ এবং মার্কেটগুলো উচ্ছেদ করতে পারছি না। তবে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে মামলাগুলো চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে খুব দ্রুত এগুলো অপসারণ করে কুয়াকাটা সৈকতের পরিবেশ সুন্দর করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, সামনে যেহেতু দুর্যোগকালীন মাস নভেম্বর-ডিসেম্বর আসছে, সেহেতু ঘূর্ণিঝড় হলে এই মার্কেটে প্রাণহানির সম্ভাবনা আছে।

এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *