সন্তানের মরদেহ কোলে নিয়ে হাসপাতালের সিঁড়িতে মায়ের বিলাপ

সন্তানের মরদেহ কোলে নিয়ে হাসপাতালের সিঁড়িতে মায়ের বিলাপ

‘মোর দুইডা পোলার পরে আল্লাহ মোরে একটা মাইয়া দিছিলো, ডাক্তার-নার্সদের অবহেলায় মাইয়াডা মইররা গেছে স্যার। মোর অসুইখ্যা (অসুস্থ) মাইয়াডারে ডাক্তার কইছে সুস্থ আছে। মুই ওহন (এখন) কি করমু স্যার? কোইলজাডা ফাইট্টা যায়, মোর মাইয়াডা আর বাইচ্চা নাই।’ এভাবেই আয়শা নামে ১৪ দিনের নবজাতকের মরদেহ কোলে নিয়ে ভোলা সদর হাসপাতালের প্রধান ফটকের সিঁড়িতে বসে বিলাপ করছিলেন মা নুরজাহান বেগম।

‘মোর দুইডা পোলার পরে আল্লাহ মোরে একটা মাইয়া দিছিলো, ডাক্তার-নার্সদের অবহেলায় মাইয়াডা মইররা গেছে স্যার। মোর অসুইখ্যা (অসুস্থ) মাইয়াডারে ডাক্তার কইছে সুস্থ আছে। মুই ওহন (এখন) কি করমু স্যার? কোইলজাডা ফাইট্টা যায়, মোর মাইয়াডা আর বাইচ্চা নাই।’ এভাবেই আয়শা নামে ১৪ দিনের নবজাতকের মরদেহ কোলে নিয়ে ভোলা সদর হাসপাতালের প্রধান ফটকের সিঁড়িতে বসে বিলাপ করছিলেন মা নুরজাহান বেগম।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনে মেয়ের মরদেহ কোলে নিয়ে এ ঘটনার বিচার চেয়ে হাসপাতাল গেটে অবস্থান নিয়েছিলেন ওই মা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা।

নিহত নবজাতক আয়শা ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছিরমাঝি গ্রামের রিকশাচালক মো. শাহাদাত ও নুরজাহান দম্পতির তৃতীয় সন্তান।

নুরজাহান বেগম বলেন, ‘ডাক্তার-নার্সেরা যদি কইতো, তাইলে মোর মাইয়াডারে অন্য ডাক্তারের কাছে নিয়া দেখাইতাম। তাইলেও তো মাইয়াডারে বাঁচাইতে পারতাম। ডাক্তার যদি ভালো করে চিকিৎসাডা দিতো আর নার্সরা যদি একটু খেয়াল রাখতো তাইলে আর মোর মাইয়াডা মরতো নাহ, মোর বুকটাও খালি হইতো নাহ। যারা মোর অবুঝ মাইয়াডারে মারছে মুই অগো বিচার চাই। ওরা মোর মাইয়ার মৃত্যু সনদও দেয় নাই। নার্সেরা তাড়াতাড়ি ওয়ার্ড থেকে বাইর কইরা দিছে।’

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শিশু আয়শা জন্মের পর থেকে ১১ দিন পর্যন্ত সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ১২তম দিন থেকে অসুস্থ হয়ে মায়ের বুকের দুগ্ধ পান ও পায়খানা-প্রসাব করতে শিশুটির অসুবিধা হচ্ছিল। তাই শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে শিশুটিকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর আজ (সোমবার) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ডাক্তার ও দায়িত্বে থাকা নার্সদের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই নবজাতকের দাদা মো. হানিফ বলেন, আমার নাতিনি শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করাই। চিকিৎসকরা তিনটি টেস্ট দিলে সেই টেস্টগুলো করানো হয়। পরে টেস্টের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা জানান তার জন্ডিসের সমস্যা আছে। তাই সে নিজে টেনে দুগ্ধ পান করতে পারছে না আর তার পায়খানা প্রসাবেও সমস্যা আছে। কিন্তু ১ দিন পরেই চিকিৎসকরা বলেন যে সে সুস্থ হয়ে গেছে। তাকে বাড়ি নিয়ে নেন, রিলিজ দেওয়া হবে। পরে আর রিলিজ দেয়নি। আজ সকালে আমার নাতিন মারা গেলো। তাহলে ডাক্তার কি চিকিৎসা করলো? নার্সরা কেন আমার নাতিনের দিকে একটু ফিরেও তাকায়নি।

ভোলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ (স্কানু) নিরাশা রানী দে জানান, নবজাতক আয়শার জন্ডিসের সমস্যা নিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। ওর থেরাপি চলছিল। আজ সকালে আমি ডিউটিতে আসার পর দেখি বাচ্চাটির শরীর কালো হয়ে গেছে। অবস্থা খারাপ দেখে অক্সিজেন দেওয়া হয়। পরে বাচ্চাটি মারা যায়। নার্সদের চিকিৎসার অবহেলার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ।

এদিকে মৃত নবজাতকের মৃত্যুসনদ না দিয়ে মরদেহ ওয়ার্ড থেকে বের করার বিষয়ে জানতে সরেজমিনে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গেলে, নার্সরা বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে বেলা ১১টার দিকে ওই শিশুর পরিবারকে মৃত্যু সনদ দেওয়া হয়।

ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাইদ আবু আহমেদ সাফি জানান, নবজাতক আয়শার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করে চিকিৎসায় কারো গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান পাটোয়ারি ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুনেছি চিকিৎসা অবহেলায় নবজাতকটি মারা গেছে। তবে এ ঘটনায় এখনও ওই শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *