শেরপুরে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন লোকজন

শেরপুরে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন লোকজন

শেরপুরে বৃষ্টি না হওয়াতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানিও কমতে শুরু করছে। পানি নেমে যাওয়াতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। তবে নিচু এলাকায় প্লাবিত হওয়ায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। নিচু এলাকায় দুর্ভোগ এখনো কাটেনি। তবে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন।

শেরপুরে বৃষ্টি না হওয়াতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানিও কমতে শুরু করছে। পানি নেমে যাওয়াতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। তবে নিচু এলাকায় প্লাবিত হওয়ায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। নিচু এলাকায় দুর্ভোগ এখনো কাটেনি। তবে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন।

বুধবার (৯ অক্টোবর) নালিতাবাড়ী উপজেলার অনেককে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরতে দেখা গেছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের খলিশাকুরা গ্রামের পরেশ বলেন, ৪ তারিখ সকাল হঠাৎ করে পানি আসে আমরা বুঝতে ওঠার আগেই। ছেলে-মেয়ে পরিবার নিয়ে কোন দিক যাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। ঘড়-বাড়ি রেখেও যেতে ইচ্ছা করে নাই। যা কিছু আছিলো সব ওইভাবে রেখে বের হই আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া জন্য। এখন পানি নেমে গেছে তবে ক্ষতি যা হয়েছে সেটা দেখা যাচ্ছে। আমার বাড়িতে এসে দেখি সব শেষ। 

পাশের গ্রাম জাঙ্গালিয়ার অঞ্জনা তারও এই অবস্থা। তিনি বলেন, পানি বেড়ে ঘরের মধ্যে এক কোমর পানি হয়ে যায়। পানির বাড়তে থাকায় কোন উপায় না পেয়ে সন্ধ্যার সময় বাড়ির পাশে একটা উচ্চ ব্রিজে আশ্রয় নেই। পরে ওখান থেকে আশেপাশের লোকজন উদ্ধার করে একটি স্কুলে নিয়ে যায়। এখন পানি কমে যাওয়ায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসেছি। দেখছি সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।

কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলার ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ৬ হাজার ৭১টি। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরকারি হিসেবে প্রায় ৭১ কোটি টাকা হলেও তা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। জেলার অন্তত পৌনে দুই লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত অধিকাংশ এলাকার ঘর-বাড়ির বিধ্বস্ত রূপ ভেসে উঠছে। পানি কমলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এলাকাগুলোর বেশির ভাগ সড়ক ভেঙে গেছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট। গৃহপালিত গরু-মহিষসহ গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষ।

সবজি ক্ষেতসহ মাঠ ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঘাসের অভাব। এছাড়া বাড়িঘরে পানি ওঠায় নষ্ট হয়ে গেছে খড়ের গাদা। ফলে একদিকে খাদ্য সংকট, অন্যদিকে মাথার ওপর চাল না থাকায় বহু মানুষ চরম কষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, পাহাড়ি নদী ভোগাই, চেল্লাখালি, মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলাসহ সদর উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকেও পানি ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। এতে দু’একদিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে।

জেলা খামার বাড়ির উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলতি মৌসুমে সাড়ে ৯৩ হাজার হেক্টর আমনের জমিতে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার হেক্টর। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার-বীজ দেয়া হবে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

এ বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আর তাদের মাঝে বিতরণের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো বিতরণ করা হবে।

নাইমুর রহমান তালুকদার/আরকে 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *