লাখ টাকা কমছে হজের খরচ

লাখ টাকা কমছে হজের খরচ

#প্রথম প্যাকেজে ৪০ হাজার, ‍দ্বিতীয়টিতে ১ লাখ টাকার বেশি খরচ কমছে

হজের খরচ কমাতে এবার দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে আজিজিয়া নামে একটি প্যাকেজ থাকবে, যেটিতে খরচ কমবে এক লাখ টাকার বেশি। অন্যটিতে খরচ কমবে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। দুটি প্যাকেজেই গত বছরের চেয়ে খরচ কমছে। এর ফলে চার বছর পর আবারও পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে হজ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা।

ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে ২০২৫ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সেখানে তিনি প্রথমবারের মতো দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করবেন। প্রথমটি থাকবে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার এবং দ্বিতীয়টি হবে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই দুই প্যাকেজের মূল্য ঠিক করেছে মন্ত্রণালয়। এটি চূড়ান্ত করতে রাতে ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে বসার কথা রয়েছে ধর্ম সচিবের। সেখানে কিছু সংশোধনী আসতে পারে। চূড়ান্ত হলে এ দুটি প্যাকেজের মধ্য থেকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হজ করতে যাবেন যাত্রীরা।

গত বছর সাধারণ হজের প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এবার সেটি কমিয়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। প্যাকেজটিতে মক্কা ও মদিনায় হেরেম শরীফ থেকে গড়ে দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। যা আজিজিয়া প্যাকেজ নামে অভিহিত হবে।

জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে হোটেল কাছে ও দূরের বিষয় থাকবে। একটি প্যাকেজে এক লাখ টাকার বেশি, অন্যটিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা কমছে এটা নিশ্চিত।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ জানিয়েছে, গত বছরের চেয়ে এবার বিমান ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ অংশে আরও কিছু সেবার দাম কমিয়ে আনা হচ্ছে। সৌদি অংশে দুটি খাতের খরচ কমানো হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার বিমান ভাড়া, বাড়ি ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, ভ্যাট-ট্যাক্স ও বেবিচকের বিভিন্ন ফি কমছে।

‘আজিজিয়া’ প্যাকেজে কমবে ১ লাখ টাকা

হজ অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় যে প্যাকেজটি থাকবে সেটির নাম হবে আজিজিয়া প্যাকেজ। মক্কার হেরেম শরিফ থেকে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে আজিজিয়া এলাকা। সেখানে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের হজযাত্রীরা অবস্থান করেন। বাংলাদেশিরা এখানে থাকতে চান না। কারণ, খাবার হোটেল ও যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকা। সেখানে তুলনামূলক হোটেল খরচ কম হওয়ায় এই প্যাকেজে খরচ কমছে এক লাখ টাকার বেশি। তবে এই প্যাকেজে কতজন হজযাত্রী পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন হজ এজেন্সি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মক্কার হেরেম শরিফ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে আজিজিয়া নামক স্থানের সঙ্গে মিল রেখে এ প্যাকেজের নাম ‘আজিজিয়া’ রাখা হচ্ছে। ২০২০ সালে তৎকালীন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত শেখ মো. আবদুল্লাহ এ প্যাকেজ চালুর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু করোনার কারণে তা আটকে যায়। দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে পুনরায় হজ চালু হলে এটি নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। কিন্তু ২০২৩ সালে হজের খরচ দেড় লাখ টাকা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে এ প্যাকেজ চালুর উদ্যোগ নেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিন্তু নানা কারণে সেই বছর সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। এবার সেই প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সৌদি সরকারের বিশেষ আগ্রহে ‘আজিজিয়া প্যাকেজ’ আনার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ। সৌদি সরকার চাইছে আজিজিয়া এলাকাকে হজযাত্রীদের আবাসন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে। সেজন্য গত কয়েক বছর ধরে আজিজিয়া এলাকায় নতুন নতুন ভবন ও হোটেল নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। সেখানে প্রচুর ভবনও নির্মিত হয়েছে।

নতুন এ প্যাকেজে বিমান ভাড়া, আবাসনসহ অন্য খরচ সমন্বয় করলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ কমে যাবে। এটি হলে সাড়ে ৫ লাখ টাকার মধ্যে হজ করা সম্ভব হবে। ফলে অনেকেই হজে যাওয়ার সাহস দেখাবেন বলে মনে করছেন হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা। এই প্যাকেজ জনপ্রিয়তা পেলে ভবিষ্যতে এর খরচ আরও কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মতিউল ইসলাম বলেন, হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এটি নিয়ে সমালোচনা ঝড় ওঠে। এজন্য এবার দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। যারা হেরেম শরিফ থেকে একটু দূরে থাকতে চান তাদের জন্য এ প্যাকেজ।

জানা গেছে, ২০২৪ সালে সরকারিভাবে যারা হজ করেছেন তাদের জন্য ৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা খরচ ধরে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। বিশেষ হজ প্যাকেজে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা খরচ হয়। এটি মূলত হেরেম শরীফের পাশে পাঁচ ও চার তারকা হোটেলে থাকার প্যাকেজ। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজ ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা।

এদিকে নিবন্ধনে সাড়া কম পাওয়ায় হজ প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়াকে দায়ী করেছে হজ এজেন্সিগুলো। এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে দেড় মাসে মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র ৯ হাজার ২৯৮ জন হজে যেতে চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন।

তবে হজ এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন, এবার হজের খরচ কমপক্ষে ৪০ থেকে ১ লাখ টাকা কমাতে পারলে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়বে। আগামী বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন। আগামী বছরের ১৩ জানুয়ারি সৌদি সরকারের সঙ্গে হবে হজ চুক্তি।

এনএম/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *