রিশাদের কণ্ঠে এখন শুধুই বাঁচার আকুতি

রিশাদের কণ্ঠে এখন শুধুই বাঁচার আকুতি

স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবে। ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করার। আলোকিত মানুষ গড়ার মতো হাজারো স্বপ্ন ছিল রিশাদ কবিরের মনে। আজ সেই স্বপ্নগুলো অধরার পথে। তার দুইটি কিডনি বিকল হওয়ায় এখন শুধুই বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছেন না তিনি।

স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবে। ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করার। আলোকিত মানুষ গড়ার মতো হাজারো স্বপ্ন ছিল রিশাদ কবিরের মনে। আজ সেই স্বপ্নগুলো অধরার পথে। তার দুইটি কিডনি বিকল হওয়ায় এখন শুধুই বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছেন না তিনি।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে থেকে বাঁচার আকুতিতে প্রতিনিয়ত কাঁদছেন রিশাদ। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের নওয়াগাড়ী গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা আল-আমিন সরকার স্থানীয় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, আর মা সাবনা বেগম একজন গৃহিণী।

অল্প আয়ে টেনেটুনে চলা রিশাদের বাবার সংসারে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। ছেলের দুটি কিডনি বিকল হওয়ায় দিশেহারা অসহায় আল আমিন-সাবনা দম্পতি। সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে পথে বসতে হয়েছে তাদের। এখন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করলেও রিশাদের বাঁচার ইচ্ছে পূরণে নিজের কিডনি দিতে প্রস্তুত বাবা আল আমিন সরকার। কিন্তু সেটি প্রতিস্থাপনের জন্যেও প্রয়োজন ৩৫ লাখ টাকা।

জানা গেছে, মেধাবী শিক্ষার্থী রিশাদ কবির এখন মৃত্যুপথের যাত্রী। মাত্র ছয় বছর বয়সে তার শরীরে কিডনি জটিলতা ধরা পড়ে। ওষুধ সেবনে ভালোই চলছিল জীবনের স্বপ্নময় দিনগুলো। কিন্তু হঠাৎ ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বর্তমানে রিশাদ কবির রাজধানীর সিকেডি হাসপাতালে কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুল হাসানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মোবাইল ফোনে কথা হলে রিশাদ জানান, এক মাস ধরে রংপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কয়েকদিন আগে তার পরিবার তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বর্তমানে চিকিৎসক কামরুল হাসানের তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি। তার বাবা আল আমিন সরকার তাকে বাঁচাতে কিডনি দিতে ইচ্ছে পোষণ করেছেন। কিন্তু কিডনির টিস্যুগুলো তার শরীরে ম্যাচিং হবে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

রিশাদ কবির আরও জানান, কিডনি ম্যাচিং হলে প্রতিস্থাপন করতে সমস্যা হবে না। কিন্তু এখন কিডনি প্রতিস্থাপন করতেই প্রায় ৩৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। যা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারসহ সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়ত তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সেই স্বপ্নে একেকটা দিন গুনছেন রিশাদ।

এদিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রিশাদকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন যথাযথ চিকিৎসা। উন্নত চিকিৎসার জন্য দরকার অন্তত ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু রিশাদের বাবার পক্ষে এত টাকা বহন করা সম্ভব না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেধাবী শিক্ষার্থী রিশাদ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে। তিনি বিভাগীয় রেজাল্টে প্রথম সেমিস্টার থেকে প্রথম হয়ে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৮০ পেয়ে বিবিএ শেষ করেন। এমবিএ প্রথম সেমিস্টারের তার সিজিপিএ ছিল ৩ দশমিক ৮৫। এমবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ হলেই প্রাইভেট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাবেন রিশাদ। এমনকি রিশাদের নামে জার্নাল অব ইকো হিউম্যান জার্নালে একটি আর্টিকেল প্রকাশ পায়। সুন্দর আগামীর সম্ভাবনা ঘিরে সমাজে আলো ছড়ানোর স্বপ্ন দেখা সেই রিশাদ কবির এখন শুধু বাঁচতে চান। তার অসহায় পরিবারের পাশে এগিয়ে আসবে সমাজ, সংগঠন ও রাষ্ট্র, এমনটাই চাওয়া রিশাদের কণ্ঠে।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে রিশাদের বাবা আল আমিন সরকার বলেন, বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছি। বেতনের টাকায় সংসার চালানোই কষ্টকর। তারপরও থেমে থাকিনি। কষ্ট হলেও রিশাদ ও ছোট মেয়েকে পড়াশোনার খরচ জোগান দিয়ে আসছি। গত একমাস ধরে রিশাদের কিডনির সমস্যা হলে দফায় দফায় রংপুরে চিকিৎসা আর ডায়ালাইসিস করতে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছেলেকে বাঁচাতে আমি আমার নিজের কিডনি দিতে চাই। কিন্তু এই কিডনি প্রতিস্থাপনে যে খরচ হবে সেটি বহন করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। আমার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য সরকারসহ বিত্তবানদের সাহায্য চাইছি। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যদি এগিয়ে এসে উদ্যোগ নেন তাহলেও আমার রিশাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন বাঁচবে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ উল হাসান বলেন, রিশাদ কবির অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি মার্কেটিং বিভাগে রেজাল্টেও সবার ঊর্ধ্বে। হঠাৎ তার এমন অসুস্থতার খবরে আমরা হতভম্ব। আমাদের পক্ষ থেকে রিশাদের চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছি। কিন্তু সেটি যৎসামান্য। রিশাদকে বাঁচাতে এখন অনেক অর্থের প্রয়োজন। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়ত রিশাদ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। অবদান রাখতে পারবে দেশ ও জাতির জন্য। 

এদিকে রিশাদ কবির ও তার পরিবারের আহ্বানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সহায়তার জন্য অনুদান সংগ্রহ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *