ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রাশিয়ার অভ্যন্তরে এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ট্যাংকসহ অন্যান্য ভারী অস্ত্র নিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশের এক সপ্তাহের মাথায় এই নিয়ন্ত্রণ নিলো তারা।
ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রাশিয়ার অভ্যন্তরে এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ট্যাংকসহ অন্যান্য ভারী অস্ত্র নিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশের এক সপ্তাহের মাথায় এই নিয়ন্ত্রণ নিলো তারা।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রায় রুশ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এটিই রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের সবচেয়ে গভীর এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুপ্রবেশ।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়ার এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার। কমান্ডার অলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেছেন, হামলা শুরু হওয়ার সাত দিন পরও ‘কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণাত্মক অভিযান পরিচালনা’ অব্যাহত রেখেছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া অন্যদের কাছে যুদ্ধকে নিয়ে গিয়েছিল এবং এখন সেই যুদ্ধ আবার রাশিয়ার কাছে ফিরে আসছে। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের এই আক্রমণকে ‘উসকানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ‘আমাদের ভূখণ্ড থেকে শত্রুকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিতে’ রুশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউক্রেনের এই অভিযান শুরুর পর পশ্চিম রাশিয়ান অঞ্চল থেকে আরও বেশি সংখ্যক লোককে তাদের নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিবিসি বলছে, ওই অঞ্চল থেকে আরও ৫৯ হাজার মানুষকে চলে যেতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় গভর্নর বলেছেন, ওই এলাকার প্রায় ২৮টি গ্রাম ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে চলে গেছে, ১২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং ‘পরিস্থিতি এখনও কঠিন’।
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনীয় সেনারা গত মঙ্গলবার রুশ ভূখণ্ডে বিস্ময়কর আক্রমণ শুরু করে। একপর্যায়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে ১৮ মাইল (৩০ কিলোমিটার) পর্যন্ত অগ্রসর হয়। এই আক্রমণটি ইউক্রেনের পক্ষে মনোবল বাড়িয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কৌশলটি ইউক্রেনের জন্য নতুন বিপদ ডেকে আনবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রিটিশ এক সামরিক সূত্র বিবিসিকে বলেছে, এই আগ্রাসনের ফলে মস্কো এতটাই ক্ষুব্ধ হবে যে— ইউক্রেনের বেসামরিক মানুষ এবং অবকাঠামোর ওপর রাশিয়া তার আক্রমণ দ্বিগুণ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন সোমবার বলেছেন: ‘শত্রুর সুস্পষ্ট লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো— বিভেদ, কলহ, মানুষকে ভয় দেখানো, রাশিয়ান সমাজের ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করা।’
কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ অবশ্যই আমাদের অঞ্চল থেকে শত্রুকে বিতাড়িত করা।’
অঞ্চলটির গভর্নর বলেছেন, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২১ হাজার লোককে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২ হাজার রাশিয়ান নাগরিক এই অঞ্চলের ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখলকৃত এলাকায় রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘তাদের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছে সে সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না’। এছাড়া তিনি মিসাইল থেকে নিরাপদ থাকতে জানালা ছাড়া এবং শক্ত দেয়ালের ঘরে আশ্রয় নিতে লোকদেরকে সতর্ক করেন।
কুরস্কের পাশের অঞ্চল বেলগোরোডেও প্রায় ১১ হাজার লোককে অন্যত্র চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেখানকার গভর্নর ব্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভ ক্রাসনায়া ইয়ারুগা জেলার লোকদের বলেছেন, ‘সীমান্তে শত্রুদের কার্যকলাপের’ কারণে তাদের সরানো হচ্ছে।
তিনি অনুরূপ ক্ষেপণাস্ত্রও সতর্কতা জারি করেছেন এবং লোকদের তাদের বেসমেন্টে আশ্রয় নিতে বলেছেন।
এদিকে নিজের রাত্রিকালীন ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আক্রমণের কথা স্বীকার করে বলেছেন: ‘পুতিন যদি এত খারাপভাবে যুদ্ধ করতে চায় তবে রাশিয়াকে অবশ্যই শান্তি স্থাপন করতে বাধ্য করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া অন্যদের কাছে যুদ্ধ নিয়ে গিয়েছিল, এখন এটি তার ভূখণ্ডে ফিরে আসছে। ইউক্রেন সবসময় শুধু শান্তি চেয়েছিল এবং আমরা অবশ্যই শান্তি নিশ্চিত করব।’
টিএম