রাজবাড়ীতে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় হিন্দু যুবক আটক, যা বলছে পুলিশ

রাজবাড়ীতে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় হিন্দু যুবক আটক, যা বলছে পুলিশ

রাজবাড়ীর বড়পুুলে পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় রানাপদ সরকার (২৬) নামে এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তাকে আদালতে তোলা হলে তিনি এর দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

রাজবাড়ীর বড়পুুলে পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় রানাপদ সরকার (২৬) নামে এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তাকে আদালতে তোলা হলে তিনি এর দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাত সোয়া ৯টায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন।

আটক রানাপদ সরকার রাজবাড়ী সদর উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের রতন কুমার সরকারের ছেলে। তিনি শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সুপার শামিমা পারভীন জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে রাজবাড়ী শহরের বড়পুলে জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপের অফিসের পাশে সজ্জনকান্দা মধ্যপাড়ায় সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির উদ্যোগে একটি অস্থায়ী দুর্গাপূজার মণ্ডপ তৈরি করা হয়। ওই মণ্ডপে দুর্গাসহ মোট পাঁচটি দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয়। গত ৭ অক্টোবর দিনগত রাত দেড়টা থেকে ৮ অক্টোবর সকাল ১১টার মধ্যে যে কোনো সময় অজ্ঞাত এক বা একাধিক ব্যক্তি ওই মণ্ডপের পাঁচটি দেব-দেবীর প্রতিমার অংশবিশেষ ভেঙে ফেলেন। যা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করাসহ তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। এ ঘটনায় ৮ অক্টোবর পুলিশ রাজবাড়ী সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে এবং ৯ অক্টোবর মণ্ডপ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাধন কুমার দাস বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

তিনি জানান, ঘটনার পর থেকেই রাজবাড়ী সদর থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একাধিক টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটনের কাজে নামে। অনুসন্ধান ও তদন্তের একপর্যায়ে ওই পূজা মণ্ডপসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণকালে কমলা রঙের টি-শার্ট এবং কালো ট্রাউজার পরিহিত একজন ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম বুধবার (০৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সজ্জনকান্দা এলাকা থেকে রানাপদ সরকারকে আটক করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি একজন অসচ্ছল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তার এমআইএস নম্বর-০৩৮২০০০৮১৬১।

পুলিশ সুপার জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রানাপদ সরকার প্রতিমা ভাঙচুরের দায় স্বীকার করেছেন। তিনি জানায়, পূজার ফুল সংগ্রহের জন্য ৮ অক্টোবর ভোর আনুমানিক ৫টার সময় মণ্ডপ সংলগ্ন এলাকায় যান রানাপদ। ফুল সংগ্রহ শেষে কৌতূহলবশত তিনি ওই মণ্ডপে প্রবেশ করেন। মণ্ডপে প্রবেশের সময় তিনি গণেশের প্রতিমার সঙ্গে ধাক্কা খান এবং ওই প্রতিমার মাথা ভেঙে ফেলেন। এ সময় তিনি মণ্ডপে থাকা দেব-দেবীর প্রতিমা স্পর্শ করেন। একপর্যায়ে তিনি অবচেতন মনে বিভিন্ন প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত করেন। তিনি একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় রাজবাড়ী সদর থানার ৮ তারিখের জিডি মূলে বৃহস্পতিবার রাজবাড়ী জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এ হাজির করা হলে তিনি বিজ্ঞ আদালতে ওই প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত করার বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

প্রতিবন্ধী বিবেচনায় বিজ্ঞ আদালত রানাপদ সরকারকে তার পরিবারের জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেন। প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত করার বিষয়ে তিনি কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়েছেন কিনা তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *