যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ রিয়াদ, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ রিয়াদ, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারাতে বসেছেন চট্টগ্রামের পটিয়ার ইমরানুল হক রিয়াদ (২৪)। গুলিবিদ্ধ রিয়াদ বাম চোখে দেখতে পেলেও ডান চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছেন না। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারাতে বসেছেন চট্টগ্রামের পটিয়ার ইমরানুল হক রিয়াদ (২৪)। গুলিবিদ্ধ রিয়াদ বাম চোখে দেখতে পেলেও ডান চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছেন না। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার।

আহত রিয়াদের বাড়ি উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হরিনখাইন এলাকায়। তিনি আলী হোসেন চৌকিদার বাড়ির প্রবাসী আহমদ নবী ও গৃহিণী শাহনাজ বেগম দম্পতির বড় ছেলে। রিয়াদ চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানাধীন নোমান কলেজের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। গত ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট এলাকায় আন্দোলনের সময় পুলিশের ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দিন সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই সময় আন্দোলনে অংশ নেন রিয়াদ। কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে।

এ সময় রিয়াদের চোখে, মুখে, মাথায় ও সারা শরীরে ৩৯টি গুলি লাগে। তখন গুলিবিদ্ধ রিয়াদকে গুরতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর তার শরীর থেকে ৩৩টি ছররা গুলি বের করা হয়। আরও ৬টি গুলি থেকে যায় রিয়াদের নাকে চোখে মাথায় ও মুখে। সেগুলো অপারেশন করা ছাড়া বের হওয়া সম্ভব হবে না বলে চিকিৎসকেরা জানান।

সেদিন রাতেই রিয়াদকে তার স্বজনেরা নিয়ে যান বিশেষায়িত পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট ও ২৮ আগস্ট রিয়াদের চোখে অপারেশন করা হয়। কিন্তু কোনোভাবেই চিকিৎসকেরা গুলি বের করতে পারেনি। কারণ গুলিগুলো হাড়ের সাথে গেঁথে আছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বলা হলেও অর্থাভাবে শেষ পর্যন্ত  চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন রিয়াদ। বর্তমানে গুলির ক্ষত আর যন্ত্রণা নিয়ে বাড়িতে বিছানায় পড়ে থাকলেও অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা না করাতে পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তার পরিবার। 

আহত রিয়াদের মা শাহনাজ বেগম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তার ছেলে চোখ, মুখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। পুরো শরীরজুড়ে রয়েছে ছররা গুলির ক্ষত-বিক্ষতের চিহ্ন। তার ডান চোখে, নাকে, মুখে ও মাথায় আরো ৬ গুলি রয়েছে। এসব গুলি বের করতে অপারেশন করতে হবে। আর প্রয়োজন হবে ৮-১০ লাখ টাকা। কিন্তু সে টাকা তো আমার হাতে নেই। ইতোমধ্যে ছেলে চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে।

ছেলেকে চিকিৎসা করাতে না পারায় আক্ষেপ করে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত সিংহভাগ শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করলেও আমার ছেলেটার বেলায় তা জোটেনি। ছেলের সুস্থতা ও ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক এটাই অন্তবর্তী সরকারের কাছে কামনা করি।

আহত ইকরামুল হক রিয়াদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৩ জুলাই আবু সাঈদকে হত্যার পর থেকেই সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলাম। ৫ আগস্ট চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট মোড়ে আন্দোলনে যোগ দিতে আসার সময় পুলিশের এলোপাতাড়ি ছররা গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হলে আমাকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বলা হলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। চোখ ও মাথার যন্ত্রণায় খুব কষ্ট পাচ্ছি। বমি হচ্ছে আর প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভালোভাবে ঘুমাতে পারছি না। চোখ দিয়ে অবিরাম পানি ঝরছে। তবে জীবনে কিছু পাই বা না পাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে যেমনটা ছিলাম আগামীদিনেও দেশের জন্য একই দাবিতে আছি এবং থাকব। 

তিনি আরও বলেন, আমি সুস্থ হয়ে লেখাপড়ার শেষ করে ভালো একটি চাকরি করে বাবা মা ও পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। আহত হওয়ার পর থেকেই সমন্বয়কদের সহায়তা পেয়েছি ৩০ হাজার টাকা। 

আহত রিয়াদের প্রতিবেশী রবিউল হোসেন বাদশা বলেন, ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে রিয়াদ পুলিশের গুলিতে আহত হন। গত দুই মাসেরও বেশিসময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটির অভাব অনটনে পড়েছে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আরও অন্তত ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এতো সামর্থ্য নেই পরিবারটির। তাই অন্তর্বর্তী সরকার ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের কাছে রিয়াদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানাচ্ছি। না হয় অকালে এ মেধাবী ছাত্রটি চোখ হারিয়ে ফেলবে এমনকি মাথায় গুলি থাকার কারণে যেকোনো মুহূর্তে প্রাণহানিও ঘটতে পারে।

আরএমএন/এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *