বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিকানা ইস্যুতে হঠাৎ তোলপাড় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন দলটির সাবেক মালিক সারোয়ার চৌধুরী।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিকানা ইস্যুতে হঠাৎ তোলপাড় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন দলটির সাবেক মালিক সারোয়ার চৌধুরী।
রাজধানীর পল্লবী থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মাশরাফির কার্যালয়ে বসে সারোয়ার চৌধুরীর মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সের মাদার প্রতিষ্ঠান ফিউচার স্পোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিকানা কেড়ে নেয় সিলেট স্ট্রাইকার্সের সহ-মালিক হেলাল বিন ইউসুফ শুভ্র।
অভিযোগ উড়িয়ে দিলো সিলেট স্টাইকার্স
মামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে। এর মধ্যেই সিলেট স্টাইকার্সের ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতিতে মাশরাফির মালিকানা দখলের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিলেট স্ট্রাইকার্সের এক শতাংশের মালিকানাও মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার কখনো ছিল না। এখনও নেই। জোর করে মালিকানা লিখে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানার যে কাগজপত্র বিসিবির কাছে আছে, সেখানেও মাশরাফির নাম নেই।
সিলেটের ব্যাখ্যা দেওয়া ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো-
‘এবার আপনাদের একটি গল্প শোনাই। বিপিএলের প্রথম আসরে অংশ নিয়েই সাড়া জাগিয়েছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। মাশরাফির নেতৃত্বে আমরা রানার্স আপ হয়েছিলাম। মাঠের ভেতরে-বাইরে আমাদের পেশাদারিত্ব, সিলেট সর্বস্তরের মানুষ থেকে শুরু করে সারা দেশের সমর্থকদের সম্পৃক্ত করতে পারা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আমাদের উপস্থাপনা, সবকিছুই ছিল দারুণ প্রশংসিত। তার পরও দ্বিতীয় মৌসুমে আমাদের দল গঠন প্রক্রিয়ায় কেন ধস নামে?
শুরুতে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ৬০ শতাংশের মালিকানা ছিল সারোয়ার গোলাম চৌধুরীর। সহ-স্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে সক্রিয় হয়ে তিনি কাজ করছিলেন। কিন্তু যখন ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচের পালা আসে, ক্রমে তাকে পিছু হটতে দেখা যায়। অনেক ক্রিকেটার ও ম্যানেজমেন্টের কয়েকজন সদস্যের পারিশ্রমিক, পরিচলন খরচ ও আরও বিভিন্ন খাতে তার অংশের কয়েক কোটি টাকা বাকি রেখেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। তার সঙ্গে যোগাযাগ করা হলে বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ তিনি নেননি।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের ক্রিকেটার, কোচ, ম্যানেজমেন্টের অন্যান্য সদস্য ও সংশ্লিষ্ট অনেকেরই এটা জানা।
শেষ পর্যন্ত পাওনা টাকা শোধ করতে না পেরে গত বছরের আগস্টে তিনি নিজ থেকেই অন্যান্য স্বত্বাধিকারীর ওপর মালিকানা ছেড়ে দেন। বিসিবিকেও তিনি ই-মেইল দিয়ে নিজের সরে যাওয়ার কথা জানান।
পরের মৌসুমের বিপিএলের আগে পুরোনো সেসব দেনা শোধ করতেই নতুন স্বত্বাধিকারীদের হিমশিম খেতে হয়। এটিও ফ্র্যাঞ্চাইজি সংশ্লিষ্ট সবারই জানা।
সব মিলিয়ে পুরোনো দেনা শোধ করতেই আমাদের এতটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় যে, দ্বিতীয় মৌসুমে ভালো দল গড়ার মতো যথেষ্ট তহবিল আমাদের ছিল না। সীমিত বাজেটের মধ্যেই কোনোরকমে আমরা দল গড়ে টুর্নামেন্ট পাড়ি দেওয়ার চিন্তা করি। খুব ভালো মানের বিদেশি ক্রিকেটার আমরা আনতে পারিনি। এজন্য সিলেটের ক্রিকেট অনুসারী থেকে শুরু করে সমর্থকদের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি আমাদের হতে হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল আমাদের জন্য কঠিন।
এখন সাম্প্রতিক পালাবদলের পর দেশ যখন নতুন যুগের সন্ধিক্ষণে, তখন পরিস্থিতির ফায়দা নিয়ে কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করছে। তাই সিলেট স্ট্রাইকার্সের ভক্ত-সমর্থক ও দেশের ক্রিকেট অনুসারীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরলাম। আইনী ব্যাপার আমরা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করব।’
উল্লেখ্য, মামলাটিতে মাশরাফি ছাড়াও হেলাল বিন ইউসুফ শুভ্র, মো. ইমাম হাসান, অজ্ঞাতপরিচয় (রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানির এক কর্মকর্তা), কে এম রাসেল, বাবলুসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এফআই