ছোট ফেনী ও সিলোনিয়া নদী তীরবর্তী এলাকার ৪০ স্থানে ভাঙনের ভয়াবহ রূপ দেখছে ফেনীর উপকূলীয় সোনাগাজী উপজেলার মানুষ। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে রাস্তা-ঘাট, শ্মশান, ফসলি জমি ও বসতভিটা। নদী ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে।
অন্যদিকে ভাঙন নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, মুছাপুর রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ না করা পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আগামী বর্ষায় নদী ভাঙন আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন নদী তীরের মানুষরা। নদী ভাঙনের একই চিত্র দেখা গেছে ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরবর্তী এলাকাতেও।
ক্ষতিগ্রস্ত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগামী বর্ষার আগে ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে অন্তত আরো হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে সোনাগাজীর নবাবপুর, চরদরবেশ, আমিরাবাদ, বগাদানা, চরমজলিশপুর, চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদী ও কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরবর্তী অংশের অন্তত ২০০ পারিবার বসতভিটা ও কৃষি জমি হারিয়েছেন। নদী ভাঙনে প্রায় ৪১ হেক্টর কৃষি জমি বিলীন হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ছোট ফেনী ও সিলোনিয়া নদীর ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৪০টি স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে নদী ভাঙন ঠেকাতে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যাপ্ত বরাদ্দ না আসায় সব ভাঙন সংস্কার করা যাচ্ছে না।
চর সাহাভিকারী এলাকার বাসিন্দা রেহানা আক্তার বলেন, নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছি। একমাস ধরে পরিবার নিয়ে পাশ্ববর্তী একটি জায়গায় ঝুপড়ি ঘরে থাকছি। কিন্তু নদীতে জোয়ার এলে এখানেও ঘরের বিছানা পর্যন্ত পানি উঠে যায়। খুবই কষ্টে দিন পার করছি।
ইমতিয়াজ নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা বলেন, বন্যার পর থেকে ভাঙন চলছে। গত দুই মাসে অনেকে এসে দেখে গেছেন, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। এভাবে হলে আমাদের জনপদ নদীগর্ভে চলে যাবে। ভাঙনরোধে কারোই তেমন গুরুত্বও নেই।
নবাবপুর এলাকার বাসিন্দা রেজিয়া আক্তার বলেন, এ এলাকায় নদী ভাঙনে গত দুই মাসে বসতি বিলীন হয়ে প্রায় শতাধিক পরিবার বাস্তুহারা হয়েছেন। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তারা এখন যাযাবরের মতো মানবেতর দিনযাপন করছেন।
চরদরবেশ ইউনিয়নের নদীর পাড়ের বাসিন্দা লতা মালেক বলেন, এখানের অন্তত ৬০-৭০টি পরিবার গত দেড় মাসে নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তারা সকলে কৃষি জমি হারিয়ে এখন চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জসিম উদ্দিন কাঞ্চন নামে স্থানীয় এক সংবাদকর্মী বলেন, ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড অল্প কিছু বরাদ্দ প্রদান করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ছোট ফেনী নদীর মুছাপুর থেকে শুরু হয়ে সোনাগাজী ও দাগনভূঞা পর্যন্ত অন্তত ২০টি স্থানে নদীতে বাঁক রয়েছে। ওই বাঁকগুলো সোজা করা হলে ও ভেঙে যাওয়া মুছাপুর ক্লোজার ড্যামের কাছাকাছি স্থানে নতুন করে একটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হলে বিস্তীর্ণ জনপদ রক্ষা পেতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাউবো ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার পর থেকে নদী ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে মুছাপুর রেগুলেটর না করা পর্যন্ত ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। আগামী বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত এটি তৈরি করার সম্ভাবনা নেই। ততদিন কার্যক্রম থামিয়ে না রেখে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হবে।
তারেক চৌধুরী/এনএফ