‘ব্রিজ না থাকায় ছেলে-মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে হয় না’

‘ব্রিজ না থাকায় ছেলে-মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে হয় না’

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নাংলা, কুলিয়া ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পারাপারের অবলম্বন ভাঙা বাঁশের সাঁকো। রাস্তার এমন অবস্থার কারণে ছেলে-মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারছেন না হরিপুর এলাকার জহুরুল ইসলাম। শুধু তিনি নন, ১৫ গ্রামের হাজারো বাসিন্দা এমন অনেক সমস্যায় জর্জড়িত।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নাংলা, কুলিয়া ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পারাপারের অবলম্বন ভাঙা বাঁশের সাঁকো। রাস্তার এমন অবস্থার কারণে ছেলে-মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারছেন না হরিপুর এলাকার জহুরুল ইসলাম। শুধু তিনি নন, ১৫ গ্রামের হাজারো বাসিন্দা এমন অনেক সমস্যায় জর্জড়িত।

হরিপুর এলাকার জহুরুল ইসলাম বলেন, এই ব্রিজের জন্য আমরা ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে পারি না। অনেক বিয়ের ঘর আসে। কিন্তু রাস্তা দেখে চলে যায়। এ জন্য আমাদের বিরাট অসুবিধা পোহাতে হয়। ব্রিজটি নির্মাণ হলে আমরা অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পাবো।

সাঁকোটি চিনিতোলা তালতলা বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে হরিপুর এলাকায় মাদরদহের শাখা নদীর উপর অবস্থিত। যুগ যুগ ধরে ওই এলাকার মানুষ এই একটি সাঁকোর জন্য চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নে এলাকাবাসীর উদ্যোগে পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। মাদরদহের শাখা নদীর উপর ভাঙা বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হন ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পারাপারের সময় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাও ঘটে। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও জীবনের ঝুঁকি এই সাঁকো দিয়েই চলাচল করেন। আবার অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে স্কুলেই যেতে চায় না। এতে তাদের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন অভিভাবকরা। শুকনো মৌসুমে সাঁকো দিয়ে সহজে পার হওয়া গেলেও বর্ষার মৌসুমে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিতে আরও চরমে পৌঁছায়। সময় মতো নৌকা না পাওয়া আর নৌকা ডুবির মতো দুর্ঘটনাও ঘটে ওই স্থানটিতে। আবার অনেক সময় বাঁশ ভেঙে বা পিছলে পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এসব এলাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজে বাজারজাত করতে না পারাসহ ন্যায্য দাম পান না কৃষকরা।

হরিপুর হোসেনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিথি মনি বলেন, বর্ষার সময় এখানে নদীর মতো হয়ে যায়। ঝুঁকি নিয়ে কেউ পারাপার হতে চান না জন্য নৌকাও চলাচল করে না। এই সাঁকো দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়। আমরা চাই এটি উন্নত হোক যাতে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে চলাচল করতে পারে।

এদিকে ওই ১৫ গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। বাঁশের সাঁকোর কারণে সহজে এ্যাম্বুল্যান্স বা অন্য কোনো যানবাহন যেতে পারে না। রোগীকে কোলে বা কয়েকজন মিলে ভাঁড় সাজিয়ে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। এতে রোগী নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় স্বজনদের।

সেখানের বাসিন্দা সামিরন বেগম বলেন, কোনো নারীর প্রসব ব্যথা উঠলে তারা খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে পারেন না। বৃদ্ধদেরও এই সাঁকো দিয়ে পারাপারে অনেক কষ্ট হয়। ব্রিজ নির্মাণের জন্য অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

নাংলা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মাজহারুল ইসলাম মিস্টার বলেন, আমাদের এখানে হাইস্কুল, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বর্ষাকালে এই সাঁকো দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা পার হতে পারে না। এটির কারণে আমাদের অনেক বেশি সমস্যা পোহাতে হয়। এটির কারণে তালতলা বাজারে যাওয়া যায় না, বৃদ্ধ মানুষ যারা আছে তারা কোনোভাবেই পার হতে পারেন না। এছাড়া নৌকা দিয়ে পারাপার হওয়ার সময় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। অতি দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান সাবেক এই ইউপি সদস্য।

এই ভাঙা বাঁশের সাঁকো দিয়ে উপজেলার নাংলা ইউনিয়নের হরিপুর, তালুকদারপাড়া, পাথালিয়া, বাগুরপাড়া নাংলা, বয়রাডাংগা, কুলিয়া ইউনিয়নের চিনিতোলা, তেঘরিয়া, পীরগাছা, সাদিপাটি, ভালুকা, পুগলিপাড়, সিরিঘাট ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের বানিয়াবাড়ী, ঠেংগেপাড়া, পয়লা গ্রামসহ আরও কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পারাপার হয়ে থাকেন।

হরিপুর পূর্বপাড়ার কৃষক সুরুজ্জামান বলেন, আমাদের এলাকায় প্রচুর পরিমাণ কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়। কিন্তু এখানে ব্রিজ না থাকার কারণে যানবাহন আসে না। তাই আমরা শাক-সবজি, ফল, কৃষি পণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারি না। আমাদের কৃষি পণ্য অনেক কম দামে বিক্রি করতে হয়।

বাঁশের সাঁকোর জন্য ৫ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলায় যেতে হয়। ওই জায়গায় একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হলে উপজেলায় যেতে তিন কিলোমিটার রাস্তা কমবে। এতে যাতায়াত খরচের পাশাপাশি ভোগান্তিও কমবে সাধারণ মানুষের।

হরিপুর এলাকার মো. খুমির মিয়া বলেন, আমরা এলাকার মানুষ মিলে চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাফেরা করি। এই দিক দিয়ে রোগী পার করা যায় না। আমাদের অনেক কষ্ট হয়। বর্ষাকালে এই কষ্ট আরও বেড়ে যায়। নৌকাও পাওয়া যায় না। এখানে একটি ব্রিজ দিলে আমাদের অনেক উপকার হবে।

এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শুভাশীষ রায় বলেন, চিনিতোলা থেকে হরিপুরে যাওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি ব্রিজের নির্মাণ করা প্রয়োজন। ৬০ মিটারের একটি ব্রিজের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটির কাজ চলমান আছে। দরপত্র আহ্বানের অনুমোদন পেলেই এটি নিয়ে কাজ শুরু করা হবে।

এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *