বাগমারার এক পরিবারের চারজন নিহত, বাড়িতে চলছে আহাজারি

বাগমারার এক পরিবারের চারজন নিহত, বাড়িতে চলছে আহাজারি

‘মা আগেই চলে গেছে। এবার বাপ, ভাই গেল। আমাদের আর কেউ থাকলো না। আমরা এখন কি নিয়ে বাঁচব। ও বাপ, ও ভাই তুমরা কতি গেলা’- এভাবেই আহাজারি করছিলেন রূপভান বেগম (৩০)।

সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বাবা, মা ও দুই ভাইয়ের মরদেহ বাড়িতে আসার পর বিলাপ করছিলেন রূপভান। তিনি নিহত জসিমের মেয়ে এবং জামাল ও কামালের ছোট বোন।

বিলাপ করতে করতে রূপভান বলেন, আমার আব্বা চলে গেল, ভাইও চলে গেল। আমার ভাই চলে গেল তোমরা এখানে বসে আছ কেন। আল্লাহ আমার ভাইকে নিয়ে নিলো। আল্লাহ আমরা এখন কি করবো!

এর আগে সোমবার (১৯ আগস্ট) দিনগত রাত ৩টার দিকে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের হাটিকুমরুল মৎস্য আড়তের সামনে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়ে সিরাজগঞ্জের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মাইক্রোবাসের চালক।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- জসিম উদ্দিন (৬৪), তার দ্বিতীয় স্ত্রী নার্গিস খাতুন (৪১), জসিম উদ্দিনের বড় ছেলে জামাল উদ্দিন (৪৫) ও ছোট ছেলে কামাল হোসেন (৩২)।

সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে নিহতদের মরদেহ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামে নিলে এলাকায় শোকের ছায়া নামে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারী হয়ে ওঠে।

দেখা গেছে, বাড়ির আঙিনায় তিন এলাকা থেকে এনে একে একে চারটি খাটিয়া রাখা হয়েছে। পাশেই পড়ে আছে চারটি নিথর দেহ। নিহত জসিমউদ্দীন, তার দুই ছেলে ও স্ত্রীর মরদেহ শেষ বারের মতো দেখতে কয়েক গ্রামের হাজারো মানুষের ঢল নামে ওই বাড়িতে। 

বাবা, মা ও ভাইদের লাশ দেখে বিলাপ করতে করতে বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন রূপভান বেগম (৩০)।  রূপবানের বড় বোন সোনাভান (৪৫) নির্বাক হয়ে বসে ছিলেন। মুখে কথা না থাকলেও চোখ দিয়ে ঝরছে কান্নার পানি। যেন প্রতিবেশী ও স্বজনদের কোনো শান্তনায় কাজে আসছে না বাবা, ভাই হারা দুই বোনের।

তাদের স্বজন শামসুল হক বলেন, বাগমারা উপজেলার ইতিহাসে এমন ঘটনায় এই প্রথম এক পরিবারের চারজনের মৃত্যু হলো। নিহত জসিমউদ্দিনের আর ছেলে সন্তান থাকলো না। জসিমের দুই ছেলের স্ত্রী, একজনের দুই মেয়ে ও অপরজনের এক মেয়ে আছে।

আছিয়া বেগম বলেন, পুরো পরিবারটাই পুরুষ শূন্য হয়ে গেল। এখন পরিবার দুইটিতে শুধু নারীরাই থাকলো। আমরা নিহতদের দুই মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই। আশেপাশে গ্রামের হাজারো মানুষ দেখতে এসেছেন। সবাই শুধু আফসোস করছেন।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম বলেন, মরদেহগুলো তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তার বিষয়টি দেখা হবে।

শাহিনুল আশিক/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *