বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে ভারতের ইনফ্লুয়েন্সাররা : বিবিসি

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে ভারতের ইনফ্লুয়েন্সাররা : বিবিসি

“ভবন পুড়ছে, ভয়ঙ্কর সহিংসতা চলছে এবং সাহায্যের জন্য নারীরা কাঁদছে।”— এগুলো এমন ভিডিও যেগুলো দিয়ে প্রচার করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ‘হিন্দু গণহত্যা’ চলেছে।

“ভবন পুড়ছে, ভয়ঙ্কর সহিংসতা চলছে এবং সাহায্যের জন্য নারীরা কাঁদছে।”— এগুলো এমন ভিডিও যেগুলো দিয়ে প্রচার করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ‘হিন্দু গণহত্যা’ চলেছে।

টমি রবিনসনের মতো (ব্রিটিশ) উগ্রডানপন্থি ব্যক্তিও বাংলাদেশের এসব ভিডিও শেয়ার করেছেন।

তবে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়ে যেসব ভিডিও ও তথ্য ছড়ানো হয়েছে সেগুলোর বেশিভাগই ভুয়া। আর এসব ভিডিও ও তথ্য ছড়িয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের উগ্র ডানপন্থি ইনফ্লুয়েন্সাররা। এতে করে সত্যিকার ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

বিবিসি বেশ কয়েকটি ভিডিও ও তথ্যের সত্যতা যাচাই করেছে। যেগুলোর প্রায় সবই ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

যার মধ্যে অন্যতম হলো চট্টগ্রামের নবগ্রহ মন্দির। এই মন্দির নিয়ে ভারতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে ইসলামপন্থিরা নবগ্রহ মন্দিরে আগুন দিয়েছে। কিন্তু বিবিসি যাচাই করেছে ওই মন্দিরে নয়; আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে পাশেই অবস্থিত আওয়ামী লীগের একটি অফিসে।

মন্দিরের দায়িত্বে থাকা স্বপন দাস নামের এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন, “৫ আগস্ট বিকেলে মন্দিরের পেছনে আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। তারা অফিসের ফার্নিচার বের করে এগুলোতে আগুন দেয়।”

এছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে আগুন দেওয়ার বিষয়টি যে গুজব ছিল সেটিও জানিয়েছে বিবিসি। আদতে আগুন দেওয়া হয়েছিল মুসলিম ক্রিকেটার ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজার বাড়িতে। কিন্তু ভারতে এটিকে লিটন দাসের বাড়ি বলে চালানো হয়েছে।

একটি স্কুলে আগুন দেওয়ার বিষয়টিও তদন্ত করেছে বিবিসি। এতে দেখা গেছে স্কুলে আগুন দেওয়ার বিষয়টির সঙ্গে ধর্মীয় কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি পুরোটিই রাজনৈতিক।

এই ভিডিওর বেশিরভাগই একাধিক অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করা হয়েছে। যার মধ্যে অনেক অ্যাকাউন্টই হিন্দু-জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করে।

বিশ্বব্যাপীও ছড়িয়েছে এসব ভুল তথ্য

ব্রিটিশ নাগরিক টমি রবিনসন এক হিন্দু নারীর একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। টমি যুক্তরাজ্যে কয়েকদিন আগে হওয়া রায়ট নিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছিলেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে এই উগ্রপন্থি লিখেছেন, “হিন্দুদের জন্য আওয়াজ তুলুন। যখন ইসলাম মূল হয় তখন অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য এটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়। আমার দেশে এসব বন্ধ করতে চাওয়ায় আমি ক্ষমা চাইব না। তারা আমাকে যা ইচ্ছা তাই বলুক।”

তবে বিবিসি যাচাই-বাছাই করে দেখেছে ওই নারীর বাড়ি এবং সেখানে থাকা একটি মন্দির পুরোপুরি অক্ষত রয়েছে। আর যে ভিডিওটি তৈরি করে ছড়ানো হয়েছে সেটি মূলত জমিজমা সংক্রান্ত একটি ঝামেলার।

স্থানীয় কিছু শিক্ষার্থী বিবিসিকে ওই নারীর বাড়ি ও মন্দির অক্ষত থাকার প্রমাণও দেখিয়েছে।

বার্তাসংস্থা এএফপির বাংলাদেশি ফ্যাক্টচেকার কাদেরউদ্দিন শিশির বিবিসিকে বলেছেন, “হিন্দু মালিকানাধীন সম্পত্তিতে হামলা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ডানপন্থি অ্যাকাউন্টে রাজনৈতিক এসব হামলাকে ধর্মীয় হামলা হিসেবে তথ্য ছড়াচ্ছে।”

অলাভজনক সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান পরিষদ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সহিংসতায় পাঁচজন হিন্দুর মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে দুজন সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে কেউ যেন মন্দির এবং হিন্দুদের সম্পত্তিতে হামলা না চালাতে পারে সেজন্য যে মুসলিমরা পাহাড়া দিয়েছে সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির এই প্রতিবেদনে।

সূত্র: বিবিসি

এমটিআই

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *