বাংলাদেশ তার সীমায় পৌঁছেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান

বাংলাদেশ তার সীমায় পৌঁছেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চ-পর্যায়ের এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলার সময় মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে সেটিও তুলে ধরেন ড. ইউনূস।

ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে সহানুভূতি দেখিয়েছে, এই পরিস্থিতির সাথে জড়িত — সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত — মূল্যও যথেষ্ট। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ তার সীমায় পৌঁছেছে এবং (রোহিঙ্গাদের) প্রত্যাবাসনই চলমান সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গাদেরকে অত্যন্ত সহানুভূতির সাথে আতিথেয়তা দেওয়া সত্ত্বেও এই ইস্যুতে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ভাবে অনেক বেশি মূল্য দিচ্ছে। এটি আমাদের জন্য প্রথাগত এবং অপ্রথাগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্পষ্টতই, বাংলাদেশ তার সীমায় পৌঁছেছে, তাই বাংলাদেশ মানবিক দিক বা ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কাজ করলেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই দীর্ঘস্থায়ী এই সংকটের একমাত্র সমাধান।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক রেজুলেশনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে। তবে সাত বছর আগে এই সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে, কোনও রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেননি। আর এটি বাস্তুচ্যুত এই সম্প্রদায় এবং তাদের আশ্রয়দাতাদের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, অন্যদিকে মানবিক সহায়তা হ্রাসের বিষয়টিও অব্যাহত রয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, “জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, মানবাধিকার কাউন্সিল এমনকি নিরাপত্তা পরিষদের মিয়ানমার সংক্রান্ত রেজুলেশনে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। দুঃখের বিষয়, মিয়ানমারে সংকটের মূল কারণগুলোর সমাধান করা হয়নি। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাও তাদের দেশে ফিরতে পারেনি।”

তিনি আরও বলেন, “সামগ্রিক এই দৃশ্যপট জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের, তাদের আশ্রয়দাতাকে এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য বৈশ্বিক মনোযোগ ও মানবিক সহায়তাও হ্রাস পাচ্ছে।”

প্রধান উপদেষ্টা এই অঞ্চলের অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মিয়ানমারে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন যেখানে সমস্ত জাতিগত গোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারবে। এছাড়া সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলা করতে এবং রাজনৈতিক প্রচেষ্টার সমন্বয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নেতাদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, “বিক্ষিপ্ত গোষ্ঠীগুলোর লড়াই এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডসহ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং অস্থিতিশীলতার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জনগণ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই রাখাইন প্রদেশের এই সংকটটি সতর্কতার সাথে পুনর্বিবেচনার যোগ্য।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “মিয়ানমারে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ যেখানে সমস্ত জাতিগত সম্প্রদায় শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে পারবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, আসিয়ান এবং মিয়ানমারের অন্যান্য মিত্রসহ সমস্ত আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় নেতাদের তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি স্বীকার এবং অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরা জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে বলব, বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রচেষ্টার সমন্বয়ের জন্য।”

এছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত “গণহত্যামূলক অপরাধের” জন্য সমর্থন, ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করার আহ্বানও জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

টিএম

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *