‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে’

‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে’

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেছেন, গণতন্ত্র হচ্ছে মানবজাতির কল্পনা করা সবচেয়ে শক্তিশালী ধারণাগুলোর একটি। এটি গত আড়াই হাজার বছর যাবত মানুষকে এর ভিত্তিতে পরিচালিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তবে বিভিন্ন সময় এর বিচ্যুতি ঘটে। এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই লালন এবং রক্ষা করতে হয়। জুলাই অভ্যুত্থান প্রেক্ষাপটে বর্তমান বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেছেন, গণতন্ত্র হচ্ছে মানবজাতির কল্পনা করা সবচেয়ে শক্তিশালী ধারণাগুলোর একটি। এটি গত আড়াই হাজার বছর যাবত মানুষকে এর ভিত্তিতে পরিচালিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তবে বিভিন্ন সময় এর বিচ্যুতি ঘটে। এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই লালন এবং রক্ষা করতে হয়। জুলাই অভ্যুত্থান প্রেক্ষাপটে বর্তমান বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত জুলাই অভ্যুত্থান পূর্ববর্তী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে  মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদসহ ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় তরুণদের আঁকা দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার।

ফলকার টুর্ক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দেশের তরুণ সমাজের একটি দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। বিগত ৮০ বছর যাবত তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভাষার অধিকার, জনগণের অংশগ্রহণমূলক প্রতিনিধিত্ব এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালীভাবে সংগঠিত হয়েছেন। বর্তমান সময়েও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সমতা ও জবাবদিহিতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজ সারা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার ও সমতার পক্ষে দাঁড়ানোর মাধ্যমে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার আমলে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে আমরা দেখেছি এ দেশের মানুষের জীবনের বেশিরভাগ সময় ধ্বংসাত্মক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল। বিগত সরকারগুলো প্রায়শই রাজনৈতিক বিরোধ, নাগরিকদের ভিন্নমত এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সহিংসভাবে দমন করেছে। অস্বীকৃতি এবং দায়মুক্তির চর্চার সঙ্গে মিলিত হয়ে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন যেমন বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক গুম, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতনের মতো ঘটনা অহরহ ঘটেছে।

অভ্যুত্থান পরবর্তীতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, যেই মুহূর্তে দেশের জনমানুষের সমৃদ্ধি, সুযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নাগালের বাইরে ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে তরুণরা বিশেষ একটি সংগ্রাম করেছে। শিক্ষার্থী-তরুণরা দেশকে একটি ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে একটি প্রকৃত গণতন্ত্র পুনর্নবীকরণ ও পুনরুজ্জীবিত করার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে। আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান, দেশকে এমন একটি সমতার ভিত্তির ওপর পুনর্গঠন করুন, যেখানে শ্রেণি, লিঙ্গ, জাতি, রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তির মতামত শোনা হবে এবং মূল্যায়িত হবে।

মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, নাগরিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং উত্তরণের প্রক্রিয়াগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করার কথা উল্লেখ করে ফলকার টুর্ক বলেন, বাংলাদেশের সামনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি দীর্ঘ স্থায়ীভাবে মোকাবিলা করা এবং রাষ্ট্রীয় প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকারের ওপর ভিত্তি করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যকর করতে হবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিক, শ্রমজীবী, সমাজকর্মী এবং অন্যান্য মানবাধিকার রক্ষকদের নির্বিঘ্নে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য একটি উন্মুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। বাংলাদেশের তরুণদের সংগ্রামের সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। এই তরুণদের যাত্রাপথের সঙ্গী হতে এবং সমর্থন করতে আমরা প্রস্তুত। তথ্য অনুসন্ধান বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের মাধ্যমে তরুণদের সঙ্গে ইতোমধ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে।

সভায় ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত জুলাই-আগস্টের নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে এ তদন্ত কমিটি জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলকে সম্ভাব্য সব সহযোগিতা প্রদান করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্র আন্দোলনের এপি সেন্টার হিসেবে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, এই আন্দোলনের সমন্বয়কারী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে এগিয়ে যেতে চাই। মানবাধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লব কর্নার স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া আয়োজন করা হবে একাডেমিক সম্মেলন ও কর্মশালা।

কেএইচ/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *