বাংলাদেশের ১১, মহিউদ্দিনের ১০ অলিম্পিক 

বাংলাদেশের ১১, মহিউদ্দিনের ১০ অলিম্পিক 

প্যারিসের এক প্রান্তে ভারোত্তোলনের ভেন্যু সাউথ প্যারিস অ্যারেনা। সেখানে পৌঁছাতে তিন মেট্রোরেল বদলাতে হলো। ভারোত্তোলন স্টেডিয়ামে ঢুকতেই শোনা গেল শোরগোল। মিডিয়া ট্রিবিউনে প্রবেশের পর গ্যালারির পরিপূর্ণ রূপ চোখে পড়ল। 

প্যারিসের এক প্রান্তে ভারোত্তোলনের ভেন্যু সাউথ প্যারিস অ্যারেনা। সেখানে পৌঁছাতে তিন মেট্রোরেল বদলাতে হলো। ভারোত্তোলন স্টেডিয়ামে ঢুকতেই শোনা গেল শোরগোল। মিডিয়া ট্রিবিউনে প্রবেশের পর গ্যালারির পরিপূর্ণ রূপ চোখে পড়ল। 

ভারোত্তোলনের দুটি অংশ রয়েছে– একটি ক্লিন এন্ড জার্ক, আরেকটি স্ন্যাচ। দুই অংশের মাঝে মিনিট দশেকের বিরতি। সেই বিরতির সময় টেকনিক্যাল জাজ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের দেখা গেল বাংলাদেশের ক্রীড়া সংগঠক মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। কয়েক মিনিট আলাপ করে আবার সবাই যার যার পজিশনে। 

৩ আগস্ট বাংলাদেশের প্যারিস অলিম্পিক মিশন শেষ হয়েছে। এর একদিন পরই প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন এসেছেন আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশনের অতিথি হয়ে। তার সকল খরচ আন্তর্জাতিক সংগঠনই বহন করছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন ও ফেডারেশনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আরচ্যারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল বিশ্ব আরচ্যারি এবং ব্যাডমিন্টন আম্পায়ার এজাজ বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের আমন্ত্রণে এসেছিলেন।

বাংলাদেশ ১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করছে। সর্বোচ্চ তিনবার অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন সাঁতারু ডলি আক্তার। মহিউদ্দিন আহমেদ ছাড়া কোচ ও কর্মকর্তাদের কন্টিনজেন্টের মধ্যে কারও ৩-৪টি’র বেশি অলিম্পিকে অংশগ্রহণ নেই। মহিউদ্দিনের অলিম্পিক যাত্রা শুরু ১৯৮৮ থেকে অদ্যাবধি। কখনও ভারোত্তোলনের টেকনিক্যাল অফিসিয়াল, কখনও অতিথি এবং কখনও কর্মকর্তা হয়ে। 

সাউথ প্যারিস অ্যারেনায় আঙিনায় দাঁড়িয়ে মহিউদ্দিন বলেন, ‘১৯৮৮ সালে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সেক্রেটারি ছিলাম। সেই সময় জিমন্যাস্টিকসের সভা ছিল অলিম্পিকের সময়। ওই অলিম্পিক থেকে শুরু, এরপর প্রতিটি অলিম্পিকেই এসেছি।’

সাধারণ সম্পাদক পদে দীর্ঘদিন ভারোত্তোলন ফেডারেশনে ছিলেন। কর্মকর্তা হলেও তার টেকনিক্যাল জ্ঞান অনেক সমৃদ্ধ। তাই অলিম্পিকের মতো আসরে টেকনিক্যাল অফিসিয়াল হিসেবে এসেছেন কয়েকবার। এ নিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, ‘তিনবার অলিম্পিকে টেকনিক্যাল অফিসিয়াল হিসেবে এসেছি। বেশ সম্মানের সঙ্গেই কাজ করেছি।’

ফুটবল, ক্রিকেটে আম্পায়ার-রেফারি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলা পরিচালনায় অনেক প্রচার পান। অলিম্পিকের মতো আসরে টেকনিক্যাল অফিসিয়াল থাকলেও এটা অনেকের অজানা ক্রীড়াঙ্গনে। এ নিয়ে অবশ্য আফসোস নেই মহিউদ্দিনের, ‘ফেডারেশন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ-সহ ক্রীড়াঙ্গনের অনেক স্তরে কাজ করেছি। দেশকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করেছি। এটাই প্রাপ্তি ও অর্জন। প্রচার-প্রসার দরকার নাই আমার।’

টেকনিক্যাল অফিসিয়ালের পাশাপাশি কখনও কর্মকর্তা আবার কখনও অতিথি হয়ে অলিম্পিকে এসেছেন। আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় মূলত সম্ভব হয় এটা। বাংলাদেশের মতো আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনেও ক্ষমতার বদল হলেও সমস্যা হয় না মহিউদ্দিনের, ‘আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলনে সবাই আমার ঘনিষ্ঠ। মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে আমি সেই স্থান করেছি। ফলে শীর্ষ বা গুরুত্বপূর্ণ পদে যেই আসুক ভারোত্তোলনের স্বার্থেই আমাকে আমন্ত্রণ করে।’

খেলোয়াড়দের নানা রেকর্ড রয়েছে। টানা ১০ অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব– এটাও বিশেষ রেকর্ড। অদূর ভবিষ্যতে এই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবে বলে মনে করেন না মহিউদ্দিন, ‘সামার অলিম্পিকে দশ আর ইয়ুথ অলিম্পিকে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের শেফ দ্য মিশন ছিলাম। খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তা তিন ভূমিকায় অংশ নিলেও এত অলিম্পিকে অংশগ্রহণ কষ্টসাধ্য।’

অলিম্পিক ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ পর্যায়। সেই পর্যায়ে নানা দায়িত্বে দশবার প্রতিনিধিত্ব করে অনেক অভিজ্ঞ মহিউদ্দিন। আরচ্যারি থেকে সরাসরি দুই বার অলিম্পিক খেললেও ভারোত্তোলন ওয়াইল্ড কার্ড নিয়েও আসতে পারছে না। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনুশীলন ভেন্যু, সরঞ্জাম ও খেলোয়াড় বিদেশ পাঠানো সব কিছুতেই প্রতিবন্ধকতা। সরকারের সহায়তা না পেলে ভারোত্তোলনে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।’

ফেডারেশনের অভিভাবক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। মহিউদ্দিন আহমেদ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে পরিচালক ক্রীড়া, প্রশাসনসহ নানা দায়িত্ব পালন করেছেন। স্টেডিয়াম ও ক্রীড়াঙ্গনের সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে তাই খানিকটা আক্ষেপ তার, ‘ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আমি সবচেয়ে সিনিয়র। নীতি-নির্ধারনী কোনো কমিটিতেই আমি নেই।’

এজেড/এএইচএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *