বরিশালে সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ভারী বর্ষণে শহরে জলাবদ্ধতা

বরিশালে সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ভারী বর্ষণে শহরে জলাবদ্ধতা

ভারতের জলাধারের বাঁধ খুলে দেওয়ায় হু হু করে পানি বাড়ছে বরিশাল বিভাগের সবগুলো নদ-নদীর। সেই সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে শহর-উপশহর জলাবদ্ধ হয়ে জনজীবনে বেড়েছে ভোগান্তি।

ভারতের জলাধারের বাঁধ খুলে দেওয়ায় হু হু করে পানি বাড়ছে বরিশাল বিভাগের সবগুলো নদ-নদীর। সেই সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে শহর-উপশহর জলাবদ্ধ হয়ে জনজীবনে বেড়েছে ভোগান্তি।

নদ-নদীর সবগুলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা নেই।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার ৪২টি উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। স্বাভাবিক কাজকর্মে কেউ বের হতে পারছেন না। স্কুলকলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, শ্রমিকরা দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে আছেন।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বাসিন্দা শোভন কর্মকার বলেন, তিনদিন ধরে আমাদের বসতঘর প্লাবিত। একটু একটু করে পানি বাড়ছে। গুরু-ছাগল সব ঘরে এনে নিজেদের বিছানার কাছে বেধে রেখেছি। ফেনী-লক্ষ্মীপুরে যে অবস্থা হয়েছে তেমন হলে যেন অন্তত অবলা প্রাণীদের বাঁচাতে পারি।

বরগুনা জেলার আমতলা উপজেলার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঝড়, বন্যা আর প্লাবনের সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু এবার অস্বাভাবিকভাবে পানি বেড়েছে। ভারত বাঁধ খুলে দেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বরিশাল নগরীর বসুন্ধরা হাউজিংয়ের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, শহরের প্রধান প্রধান সড়কে পানি উঠে তলিয়ে গেছে। আমাদের হাউজিংয়ের কিছু অংশে রাস্তার সমান পানি চলে এসেছে।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি আর নদীর পানি ড্রেন হয়ে এসে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। যত দ্রুত পানি নেমে যাবে ততই সবার জন্য ভালো।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরিশালের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, জল অনুসন্ধান প্রতিবেদন বলছে বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ১২টি পয়েন্টে সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর মধ্যে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি গতকাল বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজকে বিপৎসীমার সমানে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষখালী নদীর পানি ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলা পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বরগুনা সদর উপজেলা পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটা উপজেলা পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, বেতাগী উপজেলা পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার, আমতলী উপজেলা পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলায় মেঘনা নদীর দৌলতখান উপজেলা পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টে ৮৭ সেন্টিমিটার, ভোলা সদর উপজেলার খেয়াঘাট পয়েন্টে তেঁতুলিয়া নদী ৩ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার, পিরোজপুর সদর উপজেলার বলেশ্বর নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার ও উমেদপুর পয়েন্টে কঁচা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পানির উচ্চতা কিছুটা কমেছে। যদিও বিপৎসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে সবগুলো নদী। আশা করা যাচ্ছে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পানি স্বাভাবিক স্তরে চলে আসবে। পানি বৃদ্ধিতে বেড়িবাঁধ, মাছের ঘের, ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পানি নেমে গেলে ভাঙন দেখা দেবে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক প্রনব কুমার রায় বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক অবস্থা। সাধারণত উজানের ঢল দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অনুসারে দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধি হলেও বন্যার সম্ভাবনা নেই।

তিনি জানান, বরিশালে ২৪ ঘণ্টায় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এরপরে বৃষ্টি কমে আসবে। সমুদ্র বন্দরে কোনো সতর্ক সংকেত নেই। তবে নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় এবং একদিন আগে পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে বরিশালে পানি বৃদ্ধি ও অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *