বন্যার দুই মাস পেরোলেও তালিকাতেই সীমাবদ্ধ কৃষকের প্রণোদনা 

বন্যার দুই মাস পেরোলেও তালিকাতেই সীমাবদ্ধ কৃষকের প্রণোদনা 

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কৃষক মির্জা আমিন বাদশা। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দফা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তার তিন একর জমিতে আবাদ করা আমন ধান। অর্থ ও নতুন করে বীজ না পাওয়ায় সেই আবাদি জমিগুলো এখন খালি পড়ে রয়েছে।

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কৃষক মির্জা আমিন বাদশা। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দফা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তার তিন একর জমিতে আবাদ করা আমন ধান। অর্থ ও নতুন করে বীজ না পাওয়ায় সেই আবাদি জমিগুলো এখন খালি পড়ে রয়েছে।

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বন্যার পর ধান আবাদ করেছিলাম, কিন্তু পরবর্তীতে আবারও পানিতে ডুবে গেছে। মুছাপুর ক্লোজার না থাকায় পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশে ও তেমুহনী এলাকায় জমিতে এখনো পানি জমে আছে। এখন বীজ ও অর্থের অভাবে নতুন করে কিছু করতে পারছি না।

সোনাগাজীর চরচান্দিয়া এলাকার কৃষক মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, বন্যায় সাত একর জমির আউশ ধান ও ১০ একর জমিতে লাগানো আমান ধান নষ্ট হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় নাম নিলেও এখনো কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি। তবে ঘুরে দাঁড়াতে নিজ উদ্যোগে ১০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদের চেষ্টা করছি।

শুধু বাদশা ও ফরিদই নন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলার হাজারো কৃষক বীজ-সার ও অর্থসংকটে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। বন্যায় কৃষিখাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হলেও তালিকা তৈরিতেই এখনো সীমাবদ্ধ রয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রণোদনা কার্যক্রম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বন্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কৃষক পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের প্রণোদনার জন্য তালিকা তৈরির কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে সরকারি সহায়তার জন্য আশায় বসে না থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন উদ্যোমে চাষাবাদ শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। অন্যদিকে মুছাপুর রেগুলেটর বিলীনের প্রভাবে দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে জমিতে পানি জমে থাকায় আগাম চাষাবাদে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষি কর্মকর্তা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় তিন ধাপে ৮৭ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে ২৩ হাজার কৃষককে শীতকালীন সবজির বীজ ও নগদ অর্থ প্রণোদনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আরও দুই ধাপে শীতকালীন সবজি চাষে ৪৩ হাজার কৃষককে বীজ, সার ও নগদ অর্থ এবং তৈল ও ডাল জাতীয় ফসল চাষে ১২ হাজার কৃষককে বীজ ও সার প্রদান করা হবে।

তবে সরকারি সহায়তার আশায় বসে না থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন উদ্যোমে চাষাবাদ শুরু করেছেন ফেনীর কৃষি উদ্যোক্তারা। এবারের ভয়াবহ বন্যায় ১৭ একর জমিতে প্রায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ে আউশ আবাদ নষ্ট হয়ে যায় সোনাগাজীর কৃষক রাশেদের। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হাল ছাড়েননি এ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা না পেলেও আবার নতুন করে জমিতে আবাদ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে জমিতে লাগানোর জন্য টমেটো, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ক্যাপসিকামের চারা তৈরি করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে সবজির চারা রোপণ করতে পারব।

সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় জোয়ার-ভাটার প্রভাবে কিছু জমিতে এখনো পানি জমে আছে। এতে আগাম চাষাবাদে বিলম্ব হচ্ছে।

লেমুয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিপন চৌধুরী বলেন, লেমুয়ার কৃষকরা ট্রাক ভাড়া করে কিশোরগঞ্জ, রংপুর, জয়পুরহাট, নেত্রকোণা ও গাইবান্ধা থেকে বিভিন্ন জাতের ধানের চারা কিনে ৩৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ করেছেন। এ ছাড়া এই ব্লকের পাঁচ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। কিছু কৃষক ইতোমধ্যে লাউ, টমেটো, মুলা ও লালশাক আবাদ করেছেন। কিছুদিনের মধ্যে সেসব খাওয়ার উপযোগী হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একরাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের প্রণোদনার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। কবে নাগাদ তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। তবে দ্রুত এ তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

জেলা প্রশাসক ও জেলা পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বসতবাড়িতে শাকসবজি চাষের জন্য ৮ ধরনের শীতকালীন সবজির বীজ এবং উৎপাদন ও রোপণের জন্য কৃষকপ্রতি এক হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

তারেক চৌধুরী/এমজেইউ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *