ফেনীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শহরতলীর শহীদ মেজর সালাহউদ্দিন মমতাজ বীর উত্তম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম আক্তার। গতকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সকাল থেকে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শ্রেণিকক্ষ থেকে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও রাজনীতি মুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবি জানিয়ে নানা স্লোগান দেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক মিলনায়তনে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে বাধ্য হয়ে সাদা কাগজে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তার। বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অর্চনা রানী চক্রবর্তীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন তিনি।
সাইদুল ইসলাম নামে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হয়েও সরাসরি ফেনী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদে ছিলেন। দলীয় পরিচয়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এসে এখানে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। যোগদানের পর থেকে আমাদের বিদ্যালয় সবদিক থেকে ক্রমাগত অবনতি হয়েছে। স্কুল ক্যাম্পাসেই দলীয় কার্যকলাপ পরিচালনা করতেন তিনি।
মিথিলা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি একজন নারী হয়েও বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় হেনস্তা করেছেন। বিদ্যালয়ে আমরা সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করেছি। আমরা সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই।
শহীদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, মেয়ের পড়াশোনার কারণে যখনই এ শিক্ষকের কাছে এসেছি তার দাম্ভিকতা ও স্বেচ্ছাচারিতায় আহত হয়েছি। তিনি কাউকেই সম্মান দিতেন না। তার পদত্যাগের খবরে খুশি হয়েছি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়া বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অর্চনা রানী চক্রবর্তী বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সকলের সহযোগিতা নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তার বলেন, আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম। বাধ্য হয়ে রাজনীতি করতে হয়েছে। তবে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সত্য নয়। আরেকবার সুযোগ দেওয়া হলে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে শিক্ষার মানোন্নয়ন কাজ করবো। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ পরিস্থিতিতে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্ল্যাহ বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ এ বিষয়ে অবগত করেনি। বিদ্যালয় পরিদর্শনে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। তাদের প্রতিবেদনসহ সার্বিক বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
তারেক চৌধুরী/এনএফ