ফেডারেশন-ক্রীড়া সংস্থার স্টাফদের বেতনহীন দিনযাপন

ফেডারেশন-ক্রীড়া সংস্থার স্টাফদের বেতনহীন দিনযাপন

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকায় পরিচিত মুখ ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার স্টাফ দুলাল। চিঠি-পত্র নিয়ে বিভিন্ন ফেডারেশন ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে প্রতিনিয়ত যাতায়াত তার। বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায় চাকরি করেই সংসার চলে। তবে গত দুই মাস বেতন পান না দুলাল।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকায় পরিচিত মুখ ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার স্টাফ দুলাল। চিঠি-পত্র নিয়ে বিভিন্ন ফেডারেশন ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে প্রতিনিয়ত যাতায়াত তার। বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায় চাকরি করেই সংসার চলে। তবে গত দুই মাস বেতন পান না দুলাল।

তাই বেশ কষ্টেই দিনকাল চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘কোনো কমিটি না থাকায় আমাদের বেতনও আটকে গেছে। স্বল্প বেতনে খুব কষ্টে চলি, সেটাও দুই মাস আটকে যাওয়ায় অনেক সমস্যায় আছি। কোনো কমিটিও নেই, স্যাররাও (কর্মকর্তা) আসেন না। স্যাররা আসলেও একটা ব্যবস্থা হতো, সেটাও হচ্ছে না। এভাবে আর বেশিদিন চলা সম্ভব নয়।’

৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। এর সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সকল জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙে দিয়েছে। প্রায় দেড় মাস হলেও এখনও জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলো পুনগর্ঠিত হয়নি। ফলে অনেক জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার স্টাফরা কষ্টে চলছেন বেতন ছাড়াই।

ফেডারেশন, জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায় সাধারণত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ এই তিনজনের দুই জনের স্বাক্ষরে ব্যাংকে লেনদেন হয়। জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায় কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় ব্যাংক লেনদেনে সংকট তৈরি হয়। বিষয়টি অনুধাবন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সম্প্রতি জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনারকে একক এখতিয়ার প্রদান করেছে স্টাফ বেতন ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন আলমগীর অবশ্য বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা করেছেন, ‘চট্টগ্রামে বিভাগ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্টাফরা অবশ্য বেতন পাচ্ছে। চট্টগ্রামে এই সমস্যা না থাকলেও অধিকাংশ জেলা-বিভাগীয় সংস্থার স্টাফরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছে।’

নরসিংদী জেলা ক্রীড়া সংস্থায় পাঁচজন স্টাফ। দুই মাস বেতন নেই তাদেরও। নিজেদের কষ্টের কথা তুলে ধরলেন তাদের একজন আরিফ, ‘প্রতিটি দিনই আমাদের কষ্টের মধ্যে যাচ্ছে। এমনিতে বেতন পাই না, তারপরও অফিস যেতে হয়। দুইদিন ডিসি অফিসে গিয়েছিলাম। আমাদের বিষয়টি এখনও সমাধান হয়নি।’ 

জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার চিত্র বেশি করুণ। তবে কয়েকটি ফেডারেশনেও একই অবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনকে অব্যাহতি প্রদান করেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু ও কোষাধ্যক্ষ জামাল হোসেন দুই জনই পদত্যাগ করেছেন। ফলে ফেডারেশনের চেকে স্বাক্ষর করার মতো কেউ নেই। তাই ফেডারেশনের স্টাফরা দেড় মাস বেতনের অপেক্ষায়। একে তো বেতন নেই, এরপর অফিস পরিচালনায় কিছু ব্যয়ও নিজেদের বহন করতে হচ্ছে। ‘ইন্টারনেট, পত্রিকা বিল সহ টুকটাক খরচ তো থাকেই। সামনে কমিটি যারা আসবে তাদের বুঝিয়ে সেই খরচ নিতে হবে,’ বলেন অফিস সহকারী তালহা। 

কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে অপসারিত করেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এই দুই পদ শূন্য থাকায় কোষাধ্যক্ষ থাকলেও ফেডারেশন স্টাফদের বেতন প্রদান করা সম্ভব হয়নি। কাবাডি ফেডারেশনের অফিস সহকারী সেকান্দার দুর্দশা বর্ণনা করলেন এভাবে, ‘দুই মাস বেতন নেই। আমাদের পরিবার বেতনের ওপরই নির্ভরশীল। পারিবারিক অনেক কাজই সীমিত অথবা বাদ দিতে হচ্ছে বেতন না পাওয়ায়।’ ফেডারেশন ও জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার স্টাফদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন সনাতন ধর্মের। তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের সময়ও অনেকে বেতন-বোনাসহীন।  

জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে খেলাধুলা একেবারে স্থবির। খেলাধুলা যেমন নেই, তেমনি স্টাফরাও অবর্ণনীয় কষ্টে রয়েছেন। বিষয়টি অনুধাবন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সোমবার থেকে জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারদের জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা কমিটি প্রেরণের তাগিদ দেবে। জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা গঠন হলে স্টাফদের বেতন সংকট কাটবে, খেলাও ফিরবে মাঠে।

৫ আগস্টের পর ক্লাবগুলোতেও ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। সেখানে কর্মকর্তা রদবদল হলেও শূন্যতা না থাকায় স্টাফদের বেতন নিয়ে সমস্যা হয়নি। 

এজেড/এএইচএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *