প্রধান বিচারপতির বাসভবন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের ঘোষণা

প্রধান বিচারপতির বাসভবন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের ঘোষণা

ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের উদ্যোগে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের উদ্যোগে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কেউ চাইলেও ভবনটি বহুতল ভবনে রূপান্তর বা স্থাপনার মূল নকশার পরিবর্তন করতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, ১৯ হেয়ার রোডস্থ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণার জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। গত ৫ আগস্ট সংঘটিত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষয়ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি স্থায়ীরূপে সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবনটির সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সুরক্ষা কীরূপে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে প্রধান বিচারপতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে দ্য এন্টিকুইটিস অ্যাক্ট, ১৯৬৮ বিধান প্রয়োগের মাধ্যমে বাসভবনটির মালিকানা ও ব্যবহার স্বত্ব বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে অক্ষুণ্ণ রেখে দৃষ্টিনন্দন ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি সংরক্ষণ করা হলে স্থাপনাটি জনমানসে একটি জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই স্থাপনার সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হবে- এরূপ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গত ২৫ সেপ্টেম্বর  প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সভাকক্ষে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয় সভায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলমসহ ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিক এই স্থাপনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা প্রদান করার প্রেক্ষিতে সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে।

সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ০৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ হতে পত্র পাঠানো হয়। সেই প্রেক্ষাপটে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯ হেয়ার রোডস্থ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করার কার্যক্রম গ্রহণের অংশ হিসেবে গত ০৯ অক্টোবর  প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রত্নতত্ত্ব) মো. আমিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ এর আঞ্চলিক পরিচালককে প্রধান বিচারপতির ১৯ হেয়ার রোডস্থ বাসভবন সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক সচিত্র প্রতিবেদন প্রস্তুতক্রমে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী ঢাকাতে স্থানান্তরিত হলে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য যেসব আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল তার মধ্যে ১৯ হেয়ার রোডস্থ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবন অন্যতম। ১৯০৮ সালে নির্মিত অনন্য এ স্থাপনার নির্মাণ শৈলিতে মোঘল ও ইউরোপীয় ধ্রুপদী স্থাপত্যরীতির মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যাওয়ার পর এই ভবনটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলেও ১৯৫০ এর দশকের শুরু হতে ভবনটি প্রধান বিচারপতির বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শতবর্ষী এ স্থাপনাটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হলে  ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এর ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট স্থাপনাটির গুরুত্ব ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এমএইচডি/এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *