পেটের দায়ে দুর্যোগ মানছি না, কাঁপছি উপায় নেই

পেটের দায়ে দুর্যোগ মানছি না, কাঁপছি উপায় নেই

‘সকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে রিকশা চালাচ্ছি। আর কত চালাব। এখন বিকেল সাড়ে তিনটা বাজে। ভেজা শরীরে হোটেলে কাঁপতে কাঁপতে দুপুরের খাবার খেলাম। ঠান্ডায় শরীরের ভেতর থেকে কাঁপনি উঠে গেছে। বাতাস বইছে সড়কে ঠান্ডায় টেকা যাচ্ছে না। পেটের দায়ে দুর্যোগ মানছি না। কাঁপছি, উপায় নেই। এখন বাড়িতে চলে যাব।’

‘সকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে রিকশা চালাচ্ছি। আর কত চালাব। এখন বিকেল সাড়ে তিনটা বাজে। ভেজা শরীরে হোটেলে কাঁপতে কাঁপতে দুপুরের খাবার খেলাম। ঠান্ডায় শরীরের ভেতর থেকে কাঁপনি উঠে গেছে। বাতাস বইছে সড়কে ঠান্ডায় টেকা যাচ্ছে না। পেটের দায়ে দুর্যোগ মানছি না। কাঁপছি, উপায় নেই। এখন বাড়িতে চলে যাব।’

এভাবে কথাগুলো বলছিলেন, রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভা এলাকার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক সাইফুল ইসলাম (৫৫)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী শহরে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য শুক্রবার বাড়ি থেকে বের হয়নি। শনিবারও দেখছি বৃষ্টি হচ্ছে। সেদিনও বাড়ি থেকে বের হয়নি। এভাবে বৃষ্টির জন্য বাড়িতে বসে থাকলে তো পেটে ভাত জুটবে না। তাই আজ ভেবেছি যতই বৃষ্টি হোক কাজে যাব। তাই সকালে ট্রেনে রাজশাহীতে এসেছি। এরপরে গ্যারেজে গিয়ে রিকশা নিয়ে কাজে নেমে পড়েছি। শরীরে রেইনকোট আর লুঙ্গি আছে। তারপরও ভিজে গিয়েছি।’

আরেক রিকশাচালক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বৃষ্টিতে রিকশা কম। যাত্রীও কম। তবে ভাড়া তুলনামূলক ভালো হচ্ছে। যাত্রীরা ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি ভাড়া দিচ্ছে বৃষ্টির কারণে। সবমিলিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন হয়েছে।’  

সাইফুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদের মতো অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে জীবিকার তাগিদে রিকশা চালাচ্ছেন। গত শুক্রবার সকালে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। বৃষ্টিতে ভিজেই তাদের রিকশা নিয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাত্রীদের নিয়ে ছুটে চলতে হচ্ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আনোয়ার বেগম জানান, রাজশাহীতে গত ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ শনিবার বিকেল চারটা থেকে রোববার একই সময় পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার। রোববার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১ দশমিক ৮ মিলিমিটার। এছাড়া শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৫ দশমিক ২ মিলিমিটার। এছাড়া শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৭২ দশমিক ২ মিলিমিটার।

টানা গরমের পর স্বস্তির এ বৃষ্টিতে ভিজছে বরেন্দ্র অঞ্চল। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে রাজশাহী নগরীর নিম্ন এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে সাময়িক দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। তবে স্বস্তির এ বৃষ্টি সবচেয়ে ভালো প্রভাব ফেলেছে জনস্বাস্থ্য ও কৃষিতে।

বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে চলছে ধান, কপিসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসলের চাষ। বিশেষত ধানের খেতে সেচ দেওয়া নিয়ে কৃষকেরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছিলেন। লোডশেডিং তীব্র হওয়ায় আবাদ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন। সেখানে আশির্বাদ হয়েই ঝরলো শুক্রবারের বৃষ্টি।

কৃষকরা বলছেন, যখন সেচ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সে মুহূর্তেই আকাশের বৃষ্টি হলো। একবারের সেচ খরচ বাঁচলো। এছাড়া তীব্র গরমে যারা কপি চাষ করছেন, তারা কিছুটা বিপাকে পড়েছিলেন। তীব্র রোদে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। এ বৃষ্টি সব ফসলের জন্যই উপকারী।  

পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের হাজরাপুকুর এলাকার বাসিন্দা রাজু আহম্মেদ বলেন, এই বৃষ্টির জন্য অনেক দিন অপেক্ষায় ছিলাম। দুই থেকে তিন দিন বৃষ্টি হলে ধানের বীজতলা ফেলব, এমন আশা ছিল। অবশেষে ধানের বীজতলা তৈরি করতে যে পানির প্রয়োজন হয় একদিনেই হয়ে গেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, এই বৃষ্টি ফসলের জন্য ভালো হলো। বিশেষ করে রোপা আমনের জন্য খুবই ভালো। এছাড়া বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন শাক সবজির উৎপাদনও ভালো হবে।

শাহিনুল আশিক/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *