কুমিল্লায় ইলিশ উৎপাদন না হলেও পাশের উপকূলীয় জেলা চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে চলে ইলিশের রাজত্ব। এসব এলাকার জেলেরা ইলিশ ধরে ঘাটে নিয়ে এসেই বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। সেই পাইকাররা তা বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের কাছে। আর ব্যবসায়ীদের একটি অংশের লক্ষ্য থাকে ইলিশ পাচার করা। সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পাচার হওয়া ইলিশের সিংহভাগই যায় কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে।
কুমিল্লায় ইলিশ উৎপাদন না হলেও পাশের উপকূলীয় জেলা চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে চলে ইলিশের রাজত্ব। এসব এলাকার জেলেরা ইলিশ ধরে ঘাটে নিয়ে এসেই বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। সেই পাইকাররা তা বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের কাছে। আর ব্যবসায়ীদের একটি অংশের লক্ষ্য থাকে ইলিশ পাচার করা। সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পাচার হওয়া ইলিশের সিংহভাগই যায় কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে।
কুমিল্লার অপর প্রান্তের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবেশ করিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও বড় বড় শহরগুলোতে পাঠানো হয়। আর এ চক্রে জড়িত দুই দেশের বড় বড় পাচারকারী দল।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতে সবচেয়ে বেশি ইলিশ অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে যায়। পাচারের জন্য চক্রের টার্গেট কুমিল্লা সীমান্ত। এ জেলার ১০৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে চলে ইলিশ পাচার। ভারত ছাড়াও নেপাল ও মিয়ানমারেও চলে ইলিশ পাচার।
বাংলাদেশি ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে ভারতে। সারাবছরের বাইরেও সেখানের বাজারে ইলিশের কদর বাড়ে পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা ও সনাতনীদের বিভিন্ন উৎসবের সময়। তাদের উৎসবের এই সময়গুলোতে সবচেয়ে বেশি ইলিশ অবৈধভাবে ভারতে যায়। এই পাচারকাজে নিয়োজিত রয়েছে বেশ কয়েকটি পাচারকারী সিন্ডিকেট।
ইলিশের জেলাখ্যাত চাঁদপুর কুমিল্লার সবচেয়ে নিকটবর্তী জেলা। এছাড়া উপকূলবর্তী জেলা নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের সঙ্গে কুমিল্লার দূরত্ব কম। ফলে মেঘনা নদীতে ধরা পড়া ইলিশ জেলেদের হাত হয়ে স্থানীয় পাইকারদের মাধ্যমে পাচারকারীদের হাতে চলে আসে। ইলিশ একটি পচনশীল পণ্য হওয়ায় কম দূরত্বের সীমান্ত হিসেবে কুমিল্লাকেই বেছে নেয় পাচারকারীরা। বড় বড় বক্সে বরফ দিয়ে ঢেকে তার ওপর পলিথিনের তৈরি বস্তায় মুড়িয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সেগুলো পাচার করা হয় ভারতে।
কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরের দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার, লক্ষ্মীপুরের দূরত্ব ৮৯ কিলোমিটার এবং নোয়াখালীর দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার। মেঘনা নদী ঘেঁষা এই জেলা তিনটিতে যত ইলিশ ধরা পড়ে, তার বড় একটি অংশ ভারতে পাচার হয় কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে।
কুমিল্লার আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেশকিছু এলাকাজুড়ে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। ভারতের সঙ্গে সীমানা ভাগ হওয়া এসব উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক, ভারতীয় পোশাক, প্রসাধনী, ইলেক্ট্রনিক পণ্য এবং ইলিশ মাছ পাচারের কাজে ব্যস্ত থাকেন পাচারকারীরা।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশের ইলিশ পাচারে জড়িত পাচারকারীদের সঙ্গে সীমান্তের অপর পাশের পাচারকারীদের মধ্যে বড় একটি চুক্তি রয়েছে। উভয় দেশের পাচারকারীরা স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পাচারের কার্যক্রম চালান। বাংলাদেশের পাচারকারীদের কাছ থেকে নিয়ে ভারতের পাচারকারীরা সেদেশের ত্রিপুরা রাজ্যে নেন। পরে সেগুলো সেদেশের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করেন।
চলতি বছরের দুর্গাপূজা শুরু হওয়ার মাসখানেক আগে থেকেই ভারতে পাচার হতে থাকে টনকে টন ইলিশ। পাচারের সময় কুমিল্লায় বিজিবির হাতে ধরা পড়ে ইলিশের তিনটি চালান। এর মধ্যে গত ১১ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণপাড়া সীমান্ত থেকে ৬২০ কেজি ইলিশের চালান জব্দ করা হয়। দ্বিতীয় চালানটি জব্দ করা হয় ১৩ সেপ্টেম্বর। জব্দ হওয়া দ্বিতীয় চালানটিতে ৪৪০ কেজি ইলিশ ছিল। আদর্শ সদর উপজেলার চাঁন্দপুর ব্রিজ এলাকা থেকে মালিকবিহীন ইলিশগুলো জব্দ করা হয়। তৃতীয় চালানটি জব্দ করা হয় ১৫ সেপ্টেম্বর। সে চালানটিতে ৮৫০ কেজি মালিকবিহীন ইলিশ ছিল।
পাচারকারীদের লক্ষ্য থাকে বিজিবি ও বিএসএফের টহলের ওপর। পাচারচক্রে সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন জড়িত হওয়ায় তারা সহজে সব পথ চেনেন এবং বিজিবি ও বিএসএফের টহলে দৃষ্টি রাখতে পারেন সহজেই। ফলে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহল দল চলে গেলে পাচারকাজ পরিচালনা করেন দক্ষতার সঙ্গে।
অপরদিকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পাচার হয়ে যাওয়া ইলিশের পাচার রোধে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ইলিশগুলো পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখনো বন্ধ হয়নি অবৈধভাবে ইলিশ পাচার। সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অধিক মুনাফার আশায় এখনো ইলিশ পাচার অব্যাহত রেখেছে পাচার চক্র। ইলিশ পাচার রোধে সরকার ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আরও জোরালো পদক্ষেপের দাবি কুমিল্লার সুশীল সমাজের।
কুমিল্লার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি আলমগীর খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইলিশ একটি সুস্বাদু মাছ হিসেবে দেশেই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই ইলিশ পাচার রোধে আরও সচেতনভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। স্থায়ীভাবে পদক্ষেপ নিলে পাচার বন্ধ করা যাবে।
বিজিবি কুমিল্লার ১০ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইফতেখার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইলিশসহ যেকোনো পণ্যের অবৈধ পাচার রোধে বিজিবি নিরলসভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চালান আটক করা হয়েছে। বিজিবির শক্ত নজরদারির ফলে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ইলিশ পাচারের সুযোগ নেই।
আরিফ আজগর/এমএ