চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় নেচে, গেয়ে এবং উল্লাস করতে করতে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় নেচে, গেয়ে এবং উল্লাস করতে করতে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে টানা অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন, ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী (৪২), আনিসুর রহমান (১৯) ও ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর।
এ ঘটনায় পরদিন আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এ সময় অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, আসামিরা ‘চট্টগ্রাম ছাত্র-জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য। গ্রেপ্তার ফরহাদ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটির অ্যাডমিন। আন্দোলনকারী মূল ধারার ছাত্র-জনতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ফরহাদ নিজে গ্রুপটি খুলেছিলেন।
পুলিশ জানায়, নগরের পাঁচলাইশ থানার ২ নম্বর গেট এলাকায় গত ১৩ আগস্ট ছিনতাইকারীরা ভুক্তভোগী শাহাদাত হোসেনকে ‘ধর ধর’ বলে চিৎকার করে ধাওয়া দিয়ে আটক করেন। এরপর তাকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ সময় অভিযুক্তদের ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গানটির সঙ্গে নেচে নেচে উল্লাস করতে দেখা যায়।
সিএমপির উত্তর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. জাহাংগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার সময় ছাত্ররা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। অনেক দুষ্কৃতকারী তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। ভুক্তভোগী যুবক নিজেই কয়েকটি ছিনতাই-ডাকাতি মামলার আসামি ছিলেন। হয়তো ঘটনার দিন কোনো ছিনতাই করতে গিয়ে তিনি জনতার হাতে আটক হন। এরপর তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন অভিযুক্তরা।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী শাহাদাত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। পরিবার নিয়ে শাহাদাত নগরের কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন।
গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের পাশের একটি বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনে থেকে পুলিশ শাহাদাতের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগী শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সারাদিন পর তার স্ত্রী শারমিন সন্ধ্যার দিকে ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাকে ফোন করেন বাসার লোকজন। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তার ভাতিজার মরদেহ পড়ে আছে।
এর আগে, ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফ এইচ) হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন একদল শিক্ষার্থী। একই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে কয়েক দফা মারধর করে হত্যা করা হয়। এ দু’টি ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এমআর/কেএ