নগর ভবনে ফেরেননি বরিশাল সিটির মেয়র-কাউন্সিলররা

নগর ভবনে ফেরেননি বরিশাল সিটির মেয়র-কাউন্সিলররা

গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন রয়েল এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেহেদী পারভেজের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ওয়ার্ডবাসীর জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, প্রত্যায়নসহ এলাকাবাসীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যায়। ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে প্রকাশ্যে আসেননি এই দুজন কাউন্সিলর।

গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন রয়েল এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেহেদী পারভেজের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ওয়ার্ডবাসীর জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, প্রত্যায়নসহ এলাকাবাসীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যায়। ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে প্রকাশ্যে আসেননি এই দুজন কাউন্সিলর।

আনোয়ার হোসেন রয়েল বলেন, ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের গুরুত্বপূর্ণ কাগজ কার্যালয়ে রাখা ছিল। সবকিছুই পুড়ে ছাই। অনেক ডকুমেন্টস ছিল আমার ল্যাপটপে। তাও নিয়ে গেছে। আমার হয়তো কার্যালয়, আসবাবপত্র পুড়েছে— কিন্তু মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের। তাদের জন্মনিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পুড়ে যাওয়ায় এগুলো সংগ্রহ করা তাদের জন্য সত্যিই কষ্টসাধ্য।

তিনি বলেন, আমি ঘরে থেকেই যতটুকু পারছি কাজ করছি। কার্যালয় না থাকায় কেউ কেউ বাসায় আসেন। তখন তাদের কাজ করে দেই।

আনোয়ার হোসেন রয়েল এলাকায় ফিরলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনপ্রতিনিধি এলাকা ছাড়া। খোদ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ প্রকাশ্যে আসছেন না। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, তিনি বরিশাল ত্যাগ না করলেও ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের অস্থিরতায় তিন-চারদিন নগর ভবনে নাগরিক সেবায় বিঘ্ন ঘটলেও বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় কার্যক্রম চলছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেনের তত্ত্ববধায়নে কার্যক্রম চলছে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মোট ৪০টি ওয়ার্ড। এর মধ্যে ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং সাধারণ ওয়ার্ড নিয়ে ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড। এর মধ্যে সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এলাকায় থাকলেও ২০-২২ জন কাউন্সিলর পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। ফলে যেসব কাউন্সিলর এলাকায় আছেন তাদের দ্বারা নাগরিক সুবিধার কাজ হলেও অন্য ওয়ার্ডগুলোতে বিপাকে আছে সাধারণ মানুষ।

১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল রায়হান বলেন, সাদিক আব্দুল্লাহর বাসায় অগ্নিসংযোগে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটু পুড়ে মারা গেছেন। তিনি না থাকায় আমরা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কবে নাগাদ আবার নির্বাচন ও কাউন্সিলর পাব তা অনিশ্চিত।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাওন বলেন, সরকার পতনের খবর পেয়েই আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনি পালিয়েছেন। তিনি সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। খুব শিগগিরই যে এলাকায় ফিরতে পারবেন তাও বলা যাচ্ছে না। আমরা খুব অসুবিধায় পরেছি। তার কার্যালয়ে আমাদের বেশ কিছু কাগজ আটকে পড়েছে।

এছাড়াও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুন্না হাওলাদার, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ শামসুদ্দোহা, ৬ নম্বর  ওয়ার্ডের খান মো. জামাল হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম খোকন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ হুমায়ুন কবির লিংকু, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জয়নাল আবেদীন হাওলাদার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাকিল হোসেন পলাশ, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সামজিদুল কবির, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাহিন শিকদার, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের আকতার উজ্জামান গাজী, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়াউল হক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়াউর রহমান, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের এনামুল হক বাহার, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতান মাহমুদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ুন কবির, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরুজ্জমান তালুকদার, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ুন কবির, ২৯ নম্বর  ওয়ার্ডের ইমরান মোল্লা ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের খায়রুল মামুন এলাকা ছাড়া।

সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডের (সাধারণ ১,২,৩) কাউন্সিলর ডালিয়া পারভীন বলেন, সিটি কর্পোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ডের পুরুষ কাউন্সিলরবৃন্দ অনেকেই এলাকা ছাড়া। বিভিন্ন কারণেই তারা এলাকায় ফিরছেন না। এতে নারী কাউন্সিলরদের ওপর কাজের চাপ বেড়েছে। আমার কার্যালয় নিয়মিত খুলছি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের ভিড় লেগেই থাকছে। পুরুষ কাউন্সিলররা এলাকায় ফিরলে কাজের চাপ কমে আসবে।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক বলেন, রাজনৈতিক দলের কাউন্সিলরবৃন্দ এলাকা ছেড়েছেন। তবে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আমি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। আরও কয়েকজন এলাকায় আছেন। নগর ভবনে প্রথম ২-৩ দিন একটু সমস্যা হয়েছিল। তবে এখন সবই স্বাভাবিক। আজকেও আমরা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করেছি। মূলত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এখন নগর ভবনের তত্ত্বাবধায়ন করছেন। আশা করছি, দিন যত যাবে আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে পরিস্থিতি।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার জন্য মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ প্রকাশ্যে আসছেন না। ৫ আগস্টের পর আজ পর্যন্ত তিনি অফিসে অসেননি। দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অফিস না করলেও সকলের সাথে যোগাযোগ রেখে জনসেবা নিরবচ্ছিন্ন করে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। এমনকি জুলাই মাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১৪ আগস্ট পরিশোধ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা বলেন, মেয়র বরিশালেই আছেন এবং নগর ভবন সচল রাখতে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখছেন। তিনি তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করবেন বলেও জানান।

এ বিষয়ে জানতে মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর মুঠোফোনে কল করা হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল বলেন, নগর ভবনে সব সেবাই স্বাভাবিক গতিতে চলছে। আশা করছি ওয়ার্ড পর্যায়েও দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সচিব মাসুমা আক্তার বলেন, আমাদের সকল কার্যক্রমই স্বাভাবিক গতিতে পরিচালিত হচ্ছে। জনসেবা কোথাও বিঘ্ন হচ্ছে না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *