দেয়ালের বুকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে রং-তুলির আঁচড়

দেয়ালের বুকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে রং-তুলির আঁচড়

কদিন আগেও যেসব দেয়ালে ছিল ঘৃণা ও দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ এখন সেসব দেয়ালই নজর কাড়ছে নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশার আহ্বানে। ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রং-তুলির রঙিন আঁচড়ে বদলে যেতে শুরু করেছে রংপুরের একেকটা দেয়ালের বুক। দলবেঁধে জরাজীর্ণ ও পুরোনো দেয়ালে থাকা পূর্বের নানা লেখা মুছে রং-তুলিতে বৈষম্যহীন স্বপ্নের বাংলাদেশকে আঁকছেন শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা।

কদিন আগেও যেসব দেয়ালে ছিল ঘৃণা ও দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ এখন সেসব দেয়ালই নজর কাড়ছে নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশার আহ্বানে। ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রং-তুলির রঙিন আঁচড়ে বদলে যেতে শুরু করেছে রংপুরের একেকটা দেয়ালের বুক। দলবেঁধে জরাজীর্ণ ও পুরোনো দেয়ালে থাকা পূর্বের নানা লেখা মুছে রং-তুলিতে বৈষম্যহীন স্বপ্নের বাংলাদেশকে আঁকছেন শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিত্র আর আবু সাঈদ-মুগ্ধদের মতো শিক্ষার্থীদের ত্যাগ স্মরণ করতেই দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হচ্ছে গৌরবময় নানা গ্রাফিতি। এতে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশের গল্প ও আন্দোলন অভ্যুত্থানের নানা ঘটনা। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছেন এই কাজে। ছাত্র আন্দোলনে জড়িতদের ত্যাগ মানুষের মাঝে স্মরণীয় রাখতেই এ উদ্যোগ, বলছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুপাশের দেয়ালে দেয়ালে বিজয় উল্লাসের বিভিন্ন গ্রাফিতি আঁকতে দেখা যায়। আর এতেই নতুনভাবে রংপুরের বিভিন্ন দেয়াল বদলে গেছে। দেয়াল সাজাতে উৎসাহমূলক নানা চিত্র, ছাত্র আন্দোলনের পটভূমি ও দেশ সংস্কারের নানা স্লোগানে শিক্ষার্থীদের রং-তুলির আঁচড় পড়েছে।

সকাল থেকে নগরীর জিলা স্কুল মোড় (স্বাধীনতা চত্বর), কাচারি বাজার সড়ক, ধাপ চেক পোস্ট, টাউন হল চত্বর, স্টেশন রোড, কলেজ রোড, লালবাগ, কারমাইকেল কলেজ রোড, পার্ক মোড় (শহীদ আবু সাঈদ চত্বর), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, মেডিকেল মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ও সড়কের দুপাশের দেয়ালে দেয়ালে এখন শিক্ষার্থীদের আঁকা শিল্পকর্ম নজর কাড়ছে পথচারীসহ সাধারণ মানুষের।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, একত্রে অনেক সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আন্দোলন ও ত্যাগের মহিমা তুলে ধরতেই সবাই মিলে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে কারমাইকেল কলেজ রোডে দেয়াল ও সড়কের আশপাশে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা যায় একঝাঁক শিক্ষার্থীদের। তারা দেয়ালে অঙ্কন করতে সঙ্গে এনেছে নানা রকম রং আর বাহারি তুলি।

সেখানে স্বেচ্ছাসেবী রেজওয়ান আহমেদ সৌধের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সমাজ বা রাষ্ট্রের কী চাওয়া সেটা তুলে ধরতেই শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগ। আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। কিছুদিন আগে যেখানে দ্রোহের আগুন ছিল এখন সেখানে দেশ গড়ার আহ্বান ফুটে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের রং-তুলির আঁচড়ে শুধু দেয়াল নয় তাদের আহ্বানে আমাদেরও বদলে যেতে হবে।

এদিকে দেয়ালে দেয়ালে ‘পানি লাগবে কারো’, ‘স্বাধীন করেছি, সংস্কারও করবো’, ‘আমিই বাংলাদেশ’, ‘আপনি কখনো মনে করবেন না যে, জালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন’ ‘দুর্নীতি রুখে দাও’, ‘নতুন বাংলাদেশ’, ‘আমার স্বাধীনতা’, ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’, ‘বল বীর, বল বীর, বল উন্নত মম শির’সহ এমন অসংখ্য লিখনি ও আন্দোলনের নানা চিত্রে রংপুরের দেয়াল এখন রঙিন।

রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী দেয়াল অঙ্কনের সময় বলেন, আমরা ভাঙতেও জানি, গড়তেও জানি। শ্রীহীন করেছিলাম আমার ভাই-বোনদের জীবনের দাবি জানিয়ে। যেহেতু দেশ আমাদের, এই নগরী আমাদের তাই এভাবে শ্রীহীন না দেখতে চেয়ে আমরা স্বপ্ন আঁকছি। রং-তুলির ছোঁয়ায় জানান দিচ্ছি আগামীর বাংলাদেশের চিত্র। আমরা আনন্দিত নিজ হাতে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার দৃশ্য তুলে ধরতে পেরে।

রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মোনাব্বর হোসেন মনা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রাফিতির মাধ্যমে আমাদের উদ্যোমী শিক্ষার্থীরা রংপুরের দেয়ালগুলো দৃষ্টিনন্দন করার পাশাপাশি তাদের চিন্তাচেতনা ও স্বপ্নকে আঁকছেন। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অবদান মনে রাখার মতো, তারই প্রতিচ্ছবি গ্রাফিতি।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মহানগরী ছাড়াও মিঠাপুকুর, পীরগাছা, কাউনিয়া, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, গংগাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতির কাজ করছেন শিক্ষার্থীসহ স্বেচ্ছাসেবীরা। এতে অনেক সংগঠন আর্থিকভাবে সহযোগিতাও করছেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *