ভয়াবহ বন্যার কবলে কুমিল্লার ১৪টি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। বানের পানিতে সর্বহারা এসব মানুষের ভরসা এখন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ। পানিতে সবগুলো সড়কে বুকপানি। ফলে সেসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট। সেখানে ত্রাণ দেওয়ার জন্য কেউ গেলেই বুক পানি ডিঙিয়ে সেখানে হুড়মুড়িয়ে ছোটেন নারী-পুরুষ সবাই।
ভয়াবহ বন্যার কবলে কুমিল্লার ১৪টি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। বানের পানিতে সর্বহারা এসব মানুষের ভরসা এখন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ। পানিতে সবগুলো সড়কে বুকপানি। ফলে সেসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট। সেখানে ত্রাণ দেওয়ার জন্য কেউ গেলেই বুক পানি ডিঙিয়ে সেখানে হুড়মুড়িয়ে ছোটেন নারী-পুরুষ সবাই।
সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে গোমতীর বাঁধ ভাঙনকবলিত বুড়িচং উপজেলার খাঁড়াতাইয়া গ্রামে গেলে দেখা যায়, একটি দ্বিতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধশতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু।
ইঞ্জিনচালিত নৌকা কিংবা ট্রলারের শব্দ শুনেই একটু খাবার ও পানির আশায় ছুটে আসেন তারা। এ গ্রামের সব বাড়িতেই পানি। কেউ কেউ গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে, কেউ গোমতী বাঁধে। কেউবা আবার গ্রামের উঁচু ভবনে। তবে পুরুষদের কেউ কেউ পানিবন্দি হয়েই বাড়িতেই থেকেছেন মালপত্র রক্ষায়।
একটি ত্রাণবাহী নৌকায় উঠে খবর সংগ্রহে যায় ঢাকা পোস্ট। খাঁড়াতাইয়া গ্রামের চারদিকে থই থই পানি। কোথাও একটু মাটি দেখা যায়নি। এত পানি, এত সংকটের মাঝেও পানিবন্দি অনেকেই বাড়িতে থেকে গেছেন। নৌকার শব্দে ছুটে আসেন রফিকুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘরে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব পানিতে তলিয়ে গেছে। ত্রাণের নৌকা থেকে খাবারের সঙ্গে চেয়ে নেন মশার কয়েল, দুই বোতল দুধ ও খাবার পানি।
তিনি জানালেন, শুকনো খাবার যা পাচ্ছেন, তা দিয়ে কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছেন। খাবার পানির অনেক সমস্যা। কয়েকদিন হলো রান্না করা খাবার পাইনি।
ওই গ্রামের একটি দ্বিতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধশতাধিক বানভাসি। আফজাল হোসেন নামে একজন জানান, তিন সন্তান নিয়ে সেখানে আছেন তিনি। তাদের আরও ত্রাণ ও পানি দরকার। ভবনে আশ্রয় নেওয়া লোকদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার নেই।
এ সময় সেখানে আরও একটি ট্রলার নিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে যান ষোলনল ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন। তিনি দুর্গত লোকজনের জন্য কলাগাছের ভেলায় করে শুকনো খাবার বিতরণ করেন।
ত্রাণের ট্রলারের শব্দে বুক সমান পানি ভেঙে ছুটে আসেন পাশের বেড়াজাল গ্রামের মামুনুর রশীদ ও তার এক প্রতিবেশী নারী।
তারা জানান, এদিন (সোমবার) কোনো ত্রাণ পাননি তারা। দুই প্যাকেট ত্রাণ নিয়ে তারা ঘরে ফিরেছেন।
পাশের নানুয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। সেখানকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী ময়নাল হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে টিউবওয়েল নষ্ট, ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার ও যা পানি পাই তা দিয়ে চলতে কষ্ট হয়। বাড়িতে ধান-চাল সব ফেলে এসেছি, বাড়ি ফিরে খাব কি? এ চিন্তায় ঘুম আসে না।’
এ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন পাশের বাড়ির বাসিন্দা মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, গোমতীর পানি আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। ঘর ভেঙে গেছে। একই বাড়ির তিন পরিবারের ১৩ জন এ আশ্রয়কেন্দ্রে আছি।
অফুলা বেগম বলেন, ‘আমরা বেঁচে থেকেও যেন মরে গেছি। এখন শুকনো খাবার যা পাই, তা দিয়ে কোনোরকম চলছি। চার দিন গোসল নাই। এটা জীবন?’
বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুর্গত এলাকারও একই চিত্র। আশ্রয়কেন্দ্র ও বাড়িতে পানিবন্দি লোকজনের একই আকুতি ‘আরও ত্রাণ চাই, আরও পানি চাই। শিশুদের খাবার চাই।’ যদিও জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের কথা বলা হচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার বলেন, গোমতীর ভাঙনের কারণে এ উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সব এলাকায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।
আরিফ আজগর/এফআরএস