তরুণ বয়সেই সফল হয়েছিলেন যে দুই মুসলিম বিজেতা

তরুণ বয়সেই সফল হয়েছিলেন যে দুই মুসলিম বিজেতা

বিল্পবী, বিজেতার মৃত্যু নেই, নির্দিষ্ট বয়স নেই। বিল্পবী, বিজেতারা জীবিত থাকেন যুগ থেকে যুগান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে। পৃথিবীর ধরাবাধা কোনো নিয়ম মেনে চলেন না বিপ্লবী, বিজেতারা। বিপ্লবের জন্য পরিণত বয়স প্রয়োজন হয় না, পরিণত বুদ্ধি, পরিকল্পনাই যথেষ্ট। ইতিহাসে এমন অনেক বিজয়ী আছেন যারা একেবারে কিশোর, তরুণ বয়সেই বিস্ময়কর বিজয় পেয়েছেন যা অনেক বড় বড় প্রতাবশালীর পক্ষেও সম্ভব হয়নি।

বিল্পবী, বিজেতার মৃত্যু নেই, নির্দিষ্ট বয়স নেই। বিল্পবী, বিজেতারা জীবিত থাকেন যুগ থেকে যুগান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে। পৃথিবীর ধরাবাধা কোনো নিয়ম মেনে চলেন না বিপ্লবী, বিজেতারা। বিপ্লবের জন্য পরিণত বয়স প্রয়োজন হয় না, পরিণত বুদ্ধি, পরিকল্পনাই যথেষ্ট। ইতিহাসে এমন অনেক বিজয়ী আছেন যারা একেবারে কিশোর, তরুণ বয়সেই বিস্ময়কর বিজয় পেয়েছেন যা অনেক বড় বড় প্রতাবশালীর পক্ষেও সম্ভব হয়নি।

ইসলামের ইতিহাসে এমন দুইজন অল্প বয়সী কিশোর, তরুণ বিজেতা হলেন মুহাম্মদ বিন কাসিম। অপরজন হলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের ১০ম সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল ফাতিহ। 

মুহাম্মদ বিন কাসিম

মুহাম্মদ বিন কাসিম ইসলামের ইতিহাসে একজন অমর বীর। জীবন তাকে খুব বেশি সময় দেয়নি। পৃথিবীর আলো-বাতাসে বেঁচেছেন মাত্র ২০ বছর। এই সময়েই  মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি সিন্ধু হয় করেন। তার সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমেই দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলমানদের আগমনের সূচনা হয়। 

মুহাম্মদ বিন কাসিম ৬৯৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর আরব উপদ্বীপে জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবেই তিনি বাবাকে হারান। ছোট থেকেই মুহাম্মদ বিন কাসিম সমরশাস্ত্রে আগ্রহী ছিলেন। ঘোড়ায় চড়া, তলোয়ার চালানো ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। ছেলের এ আগ্রহ বুঝে মা তাকে উমাইয়া সেনা বাহিনীতে পাঠিয়ে দেন। 

উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের সেনাপতি ছিলেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। সম্পর্কে তিনি মুহাম্মদ বিন কাসিমের আপন চাচা ও খালু হতেন। তিনি ভ্রাতুষ্পুত্রকে খুবই আদর ও স্নেহ করতেন। নিজ হাতে তিনি ভাতিজাকে গড়ে তোলেন। 

খুরাসান, খাওয়ারিজম ও তুর্কিস্তানের বেশ কয়েকটি অভিযানে মুহাম্মদ বিন কাসিম নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন।

মুহাম্মদ বিন কাসিমের বয়স যখন মাত্র ষোল কিংবা সতেরো। এ সময় সিন্ধুর রাজা দাহির আরব বণিকদের বাণিজ্য কাফেলা লুট করেন। 

হাজ্জাজ রাজা দাহিরের সঙ্গে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য উবায়দুল্লাহ নামে একজনকে পাঠান। কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়। খবরটি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কানে পৌঁছলে তিনি রাজা দাহিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সিন্ধুতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কর্তৃক প্রেরিত বাহিনীর সেনাপতি নির্বাচিত হন মুহাম্মদ বিন কাসিম।

মুহাম্মদ বিন কাসিম সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে প্রথমে দাহিরের সমুদ্রবন্দর দেবাল জয় করেন। দেবাল সমুদ্রবন্দর পদানত করার পর মুসলিম বাহিনী দেবাল দুর্গ অবরোধ করে এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।  ৭১২ হিজরির ১২ জুন ঐতিহাসিক এ বিজয় অর্জিত হয়।

দেবালের পতনের পর রাজা দাহির রাওয়ারে পালিয়ে যান। কিন্তু তাঁর শেষরক্ষা হয় না। মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে তাঁর বাহিনী পরাজিত হয় এবং রাজা নিহত হন। রাওয়ার চূড়ান্ত বিজয়ের আগে ও পরে মুসলিম বাহিনী ছোট ছোট বেশ কয়েকটি শহর বিজয় করে। এর মধ্যে রয়েছে বধু, নিরুন, ব্রাহ্মণ্যবাদ, আলোর, মুলতান ইত্যাদি।

মুহাম্মদ আল ফাতিহ

কনস্টান্টিনোপল বা ইস্তাম্বুল বিজয় নিয়ে রাসূল সা. নিজেই সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই কসতুনতুনিয়া (কনস্টান্টিনোপল) এক ব্যক্তির হাতে বিজিত হবে। সেই শাসক কতই না উত্তম আর সেই বাহিনী কতই না উত্তম বাহিনী! (মুসনাদে আহমাদ)।

এরপর থেকে অনেক মুসলিম বিজেতাই রাসুল সা.-এর বর্ণিত সেই সৌভাগ্যবান সেনানায়ক হতে ইস্তাম্বুলে অভিযান চালিয়েছিলেন। ৮০ বছর বয়সেও হজরত আবু আইউব আল আনসারী রা. কনস্টান্টিনোপল অবরোধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তবে আল্লাহ তায়ালা এই সৌভাগ্য দিয়েছিলেন উসমানি সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদকে।

তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও উন্নত প্রতিরক্ষা বেষ্টিত শহর ছিল কনস্টান্টিনোপল। যতবার আক্রমণ হয়েছে, সব হামলা কনস্টান্টিনোপলের বিরাটকার দেওয়ালের সামনে এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই কনস্টান্টিনোপল পেয়েছিল দারুণ এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। শহরের তিন দিক ছিল সামুদ্রিক জলভাগ বেষ্টিত বসফরাস প্রণালি, মারমারা সাগর এবং গোল্ডেন হর্ন। তাছাড়া স্থলভাগের অংশটুকু দানবের মতো উঁচু এবং চওড়া দেয়ালে সুরক্ষিত, যা ভেঙে শহরে প্রবেশ করা ছিল একপ্রকার দুঃসাধ্য।

১৪৫১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মুহাম্মদ যখন উসমানি সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসেন তখন তার বয়স ছিল ২০ বছরের আশপাশে। এত অল্পবয়স্ক একজনকে সুলতান হিসেবে মেনে নিতে অনেকেরই আপত্তি ছিল বেশ জোরালো। কিন্তু মুহাম্মদ ছিলেন দৃঢ়চেতা। তিনি ক্ষমতায় এসেই এক কঠিন লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলেন। আর তা ছিল প্রায় আটশত বছর আগে করা রাসুলুল্লাহ সা. এর সেই ভবিষ্যদ্বাণী; যাতে তিনি কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছিলেন।

কনস্টান্টিনোপলের মতো শহর জয় করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার ছিল, সুলতান মুহাম্মদ তার সবই সতর্কতার সঙ্গে অবলম্বন করেন। সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষিত করেন। যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই ১৪৫৩ সালে শহর অবরোধ করেন। সুলতান এটা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, নৌপথে প্রবল অবরোধ গড়ে তোলা ছাড়া কিছুতেই বিজয়ের আশা করা যাবে না। সেজন্য নৌবাহিনীকে সুসজ্জিত করা হয় এবং নৌবহরে যুক্ত করা হয় অসংখ্য যুদ্ধজাহাজ। স্থল, নৌ পথে দীর্ঘ প্রতিরোধ ও যুদ্ধ শেষে মাত্র ২১ বছর বয়সে ইস্তাম্বুল জয় করেন মুহাম্মদ আল ফাতিহ। তার মাধ্যমেই ১১০০ বছর আগে রোমান সম্রাট প্রথম কনসস্টাইনের প্রতিষ্ঠিত শহরটি মুসলিমদের পদানত হয়। যুগের পরিবর্তন হয় আর পাল্টাতে থাকে সবকিছু; নতুনভাবে রচিত হয় যুদ্ধের ইতিহাস।

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *