এম এল গনি
শত প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশে রাজনীতির পট পরিবর্তিত হয়েছে সম্প্রতি। বাস্তবতা মেনে নিয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন; সে সাথে পতন হয়েছে তার সরকারেরও। সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে সরকারে আছেন কয়েক শিক্ষার্থীও, যারা বয়সে তরুণ। সরকারের সিনিয়র আমলাদের একাংশ এ ধরনের তরুণ নেতৃত্বের অধীনে কীভাবে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন তা নিয়ে দ্বিধায়।
দুইদিন আগে আমার এক আমলা বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তন নিয়ে। বন্ধুটি অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার সরকারি কর্মকর্তা। কথায় কথায় তিনি আক্ষেপের সুরে প্রশ্ন করলেন, ‘এই যে দুই শিক্ষার্থী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা পদ পেল, ওদের কাছে সিনিয়র আমলারা নথি নিয়ে যাবেন কী করে ভেবেছেন?’
তেমন কিছু না ভেবেই বন্ধুকে উত্তর দিলাম, ‘কেন, নথি নিয়ে তাদের কাছে যেতে মন না চাইলে তারা চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। আমলারা তো সরকারি চাকরি চালিয়ে যেতে বাধ্য নন।’ আমার উত্তর বন্ধুর পছন্দ হলো না; তাই, তিনি দ্রুতই প্রসঙ্গান্তর করলেন।
দীর্ঘদিন দেশের বাইরে বসবাস করি। প্রায় দুই যুগ হতে চললো কানাডায়। কানাডায় টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দীর্ঘ সময় চাকরি করেছি। ভ্রমণ করেছি জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্সসহ নানা দেশ। স্বভাবতই, বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ/সংস্কৃতি (ওয়ার্ক কালচার) দেখার পর্যাপ্ত সুযোগ আমার হয়েছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকেই বন্ধুকে উত্তর দিয়েছি।
অন্যদিকে, আমার সে বন্ধুর দেশের বাইরের কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি নিয়ে অভিজ্ঞতা নেই বললে চলে। ফলে, আমার উত্তরের ব্যাপ্তি ও গভীরতা যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে না পারাই তার পক্ষে স্বাভাবিক।
শুধু আমার এ বন্ধুর নয়, এ উদ্বেগ তার মতো শত আমলার, যদিও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তাদের বয়সের প্রায় অর্ধেক বা তারও কম বয়সী একপ্রকার অভিজ্ঞতাহীন টিম লিডার, সুপারভাইজার বা বস-এর অধীনে চাকরি করা আসলেই খুব সহজ নয় তাদের পক্ষে। কারণ, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র এতে অভ্যস্ত নয়।
তবে, আমাদের দেশে এ চর্চা নতুন হলেও পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় তরুণদের অধীনে বয়স্কদের চাকরি করা নতুন ঘটনা নয়। পাশ্চাত্যের দেশগুলোয় এমন দৃষ্টান্ত অহরহ। সেসব দেশে কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি সিনিয়রিটি তথা বয়সের ভিত্তিতেই হতে হবে এমন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তাছাড়া বাড়তি কাজের ঝামেলা এড়াতে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা পদোন্নতি নিতেও চান না। এমন একাধিক দৃষ্টান্ত আমি কর্মক্ষেত্রে দেখেছি।
কেবল চাকরির ক্ষেত্রে নয়, আজকাল পৃথিবীর অনেক দেশে তরুণরা রাজনীতিতেও সফল নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক এক উদাহরণ হতে পারে ফ্রান্স। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল (Gabriel Attal)-এর বর্তমান বয়স মাত্র ৩৫ বছর।
অপরদিকে, নিউজিল্যান্ডে জেসিন্ডা (Jacinda Ardern) প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মাত্র ৩৭ বছর বয়সে। এমন দৃষ্টান্ত এক বা দুটি নয়, অসংখ্য। এসব তরুণ রাষ্ট্র প্রধানদের অধীনে সে দেশের আমলাদের দায়িত্বপালনে বিশেষ সমস্যা হয়েছে বলে আমরা কখনো শুনিনি।
তবে এও সত্য, দীর্ঘকাল ধরে যারা কর্মরত তাদের কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন সমস্যাদির মুখোমুখি হওয়া ও তার সমাধান খুঁজে বের করার অভিজ্ঞতাও তুলনামূলকভাবে বেশি। অন্যদিকে, তরুণরা আধুনিক ধ্যানধারণা, কর্মক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানের নবতর পন্থা ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে পুরোনোদের চেয়ে বহুগুণে বেশি এগিয়ে।
এ দুয়ের মেলবন্ধন ঘটানোর উপযোগী পরিবেশ তৈরি সম্ভব হলে বয়সে প্রবীণ কর্মচারীরাও বয়সে অপেক্ষাকৃত নবীনদের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
উন্নত দেশগুলোয় কীভাবে অফিস আদালতে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় তা থেকে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা জানাচ্ছি—
এক) বয়সে তরুণ বলেই আপনার সুপারভাইজার বা বস-কে অনভিজ্ঞ ধরে নেবেন না। কেননা, বয়স সবসময় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাপকাঠি নয়। বয়স্ক ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী বা অভিজ্ঞ হলে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি হতেন এ মুহূর্তে বেঁচে থাকা সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটি। বাস্তবতা কিন্তু তা নয়।
আপনাকে নতুন ধারণা ও জ্ঞান অর্জনের বিষয়টি ওপেন মাইন্ড বা খোলা মনে গ্রহণ করতে হবে। বয়সে আপনার চেয়ে তরুণ কেউ যে কর্মক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানে সৃজনশীল হতে পারেন তা আপনাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে এবং নির্দ্বিধায় তাদের পরামর্শ গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
দুই) আপনার তরুণ সুপারভাইজারের সাথে আপনার কোনো প্রকার কমিউনিকেশন গ্যাপ বা যোগাযোগের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সফল হতে টিম লিডারের সাথে ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন বা কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন অত্যাবশ্যক। অন্যথায়, লক্ষ্য অর্জনে সফলতা লাভ সম্ভব নয়।
আপনি যেমন আপনার বস-এর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য, ঠিক তেমনই, আপনার বস-ও তার উপরের পর্যায়ে জবাবদিহি করতে বাধ্য। চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়লে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না। সুপারভাইজার তরুণ বলে যাতে চেইন অব কমান্ডে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।
কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়োজনে আপনাকে আপনার সুপারভাইজারের সাথে প্রয়োজনে একান্তে বসে আপনার বিশেষ কোনো প্রশ্ন থাকলে তার উত্তর জেনে নিতে হবে। সে লক্ষ্যে বয়সের ব্যবধান ভুলে গিয়ে তার পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে শুনে তা পুরোপুরি অনুধাবনের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে আপনাকে।
তিন) প্রথম সাক্ষাতেই আপনার তরুণ সুপারভাইজারকে আপনার জীবনে অর্জিত বিপুল অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে নিজেকে সুপিরিয়র বা শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ভুলেও নেবেন না। এতে বুমেরাং হতে পারে। একজন অভিজ্ঞ অধস্তন হিসেবে আপনি অবশ্যই আপনার মূল্যবান অভিজ্ঞতা সুপারভাইজারের সাথে শেয়ার করবেন; তবে, তা হতে হবে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনে।
সুপারভাইজারের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করা বা তার দোষত্রুটি ধরে তা শুধরে দেওয়ার বিষয়টি যেন অন্য কলিগদের সম্মুখে দৃষ্টিকটুভাবে না করেন। তাতে তিনি বিব্রতবোধ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ তাকে বিষয়টি জানাতে পারেন এভাবে—’ওই বিষয়ে আমার একটু ভিন্নমত আছে যা আপনি অনুমতি দিলে শেয়ার করতে পারি।’ অথবা বলতে পারেন—’এই সমস্যা আমি এভাবে সমাধান করতাম।’ কখনোই বলবেন না, ‘ওই বিষয়ে আপনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা নিচ্ছেন।’
এভাবে, বস-এর সাথে সম্মানজনক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে তাকে সরাসরি আঘাত না করেও আপনি আপনার মূল্যবান অভিজ্ঞতা শেয়ার করে কর্মক্ষেত্রের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
চার) তরুণরা কারিগরি ও প্রযুক্তিজ্ঞানে প্রবীণদের চেয়ে বহুগুণে এগিয়ে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সী সন্তান ট্যাবলেট, আইফোন বা কম্পিউটার যেভাবে ব্যবহার করতে জানে আপনি সম্ভবত তার সিকিভাগও জানেন না। আপনার সুপারভাইজার বয়সে তরুণ হলে এমন কথা তার ক্ষেত্রেও খাটে।
এমন অবস্থার উন্নতি করতে হলে আপনাকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে আপনাকে পেশাগত উন্নয়নের (প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট) ট্রেনিং নিতে হতে পারে। আজকাল ইন্টারনেটের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরে বসেও অনেক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়।
নিজের পেশাগত উন্নয়নের পদক্ষেপ না নিয়ে আপনি পুরোনো ধ্যানধারণা বা পন্থা আঁকড়ে ধরতে চাইলে আজকের যুগের প্রতিযোগিতামূলক কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বেন। কেবল তথ্য প্রযুক্তি বলে কথা নয়, প্রকল্প ব্যবস্থাপনায়ও বর্তমান সময়ের নতুন নতুন ধারণা ও প্রযুক্তির সাথে আপনার জ্ঞান হালনাগাদ করতে হবে। অন্যথায়, আপনার তরুণ সুপারভাইজারের কাছে আপনি গুরুত্ব হারাবেন।
পাঁচ) বয়সে তরুণ সুপারভাইজারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। হতে পারে অভিজ্ঞতার অভাবে তিনি সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্তটি নিতে বা দিতে পারেননি। সেক্ষেত্রে, তিনি যাতে বিব্রতবোধ না করেন এমন উপায়ে আপনার পরামর্শ বা বিকল্প চিন্তা তার সাথে শেয়ার করুন।
পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি ও অবস্থাভেদে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার ধরন ভিন্ন হতে পারে। স্থান-কাল-পাত্র উপযোগী জুতসই পদক্ষেপ আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।
আপনার মনে নতুন কোনো আইডিয়া বা ধারণা থাকলে তা সরাসরি আপনার সুপারভাইজারকে বলুন। তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে এ জাতীয় বক্তব্য বা ম্যাসেজ বস-এর কানে দিলে তিনি তা পছন্দ নাও করতে পারেন।
তাছাড়া, আপনি যেভাবে একটা বিষয় তার কাছে তুলে ধরবেন তৃতীয় পক্ষের উপস্থাপনা হুবহু তা নাও হতে পারে। তাই, বস-কে যা বলার সুযোগ বুঝে আপনি নিজেই বলুন। বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন আপনার সুপারভাইজার বুঝতে পারেন আপনি শুধু পাণ্ডিত্য জাহির করতে চাইছেন না বা তার ভুল ধরতে চাইছেন না; বরং তাকে একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো কার্যকরভাবে সহায়তা দিতে চাইছেন।
ছয়) আপনার তরুণ সুপারভাইজার কোনো পদ্ধতিতে বা কীভাবে আপনার সাথে কাজের ব্যাপারে যোগাযোগে আগ্রহী তা ভালোমতো জেনে নিন। যেমন, অনেকে টেলিফোনে আলোচনার চেয়ে ই-মেইল যোগাযোগ বা সরাসরি সাক্ষাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তেমন ক্ষেত্রে, আপনার পছন্দও তার সাথে মেলানোর উদ্যোগ নিতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, ই-মেইল যোগাযোগে খুব বেশি অভ্যস্ত না হলে আপনি তা শিখে নেওয়ার প্রয়াস চালাতে পারেন। তা না করে আপনি আপনার পুরোনো দিনের যোগাযোগের প্রক্রিয়া আঁকড়ে ধরতে চাইলে আপনার সুপারভাইজার তা পছন্দ নাও করতে পারেন। মোটকথা, তার সাথে কমিউনিকেশনের ব্যাপারে আপনাকে যথাসম্ভব নমনীয় হতে হবে যাতে তিনি কাঠখড় না পুড়িয়ে আপনার সাথে দাপ্তরিক বিষয়ে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।
সাত) বয়সে প্রবীণরা নিজেদের প্রশংসা শুনে যতটা মজা পান এ যুগের তরুণরা ততটা না। ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রভাবে তারা ভিত্তিহীন প্রশংসার চেয়েও যোগ্যতাকে বেশি মূল্য দিয়ে থাকেন। তাই, তরুণদের অযাচিত প্রশংসা করে মন জয়ের চেষ্টায় না যাওয়াই উত্তম।
হুজুরের কথা মনে পড়ায় পুকুরের প্রথম ইলিশ মাছটি তার কাছে নিয়ে গেছেন অধস্তন কর্মচারী, এমন আজগুবি গল্প আজকের তরুণরা শুনতে চায় না; তারা কাজে বিশ্বাসী। ক্ষেত্র বিশেষে, আপনি আপনার তরুণ বস-এর আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, প্রযুক্তিজ্ঞান, নেতৃত্বগুণ বা অন্যান্য দক্ষতার পরিমিত প্রশংসা করতে পারেন, তবে তা যেন কোনোভাবেই মান্ধাতার আমলের তৈলমর্দন বিবেচিত না হয়।
আট) আপনি যখন আপনার তরুণ সুপারভাইজারের সাথে কাজ করবেন তখন তার বয়স বা অভিজ্ঞতার বিষয়টি ভুলে গিয়ে কাজে মনোযোগ দেবেন শতভাগ। তা না করে আপনি সুপারভাইজারের বয়স বিবেচনায় মনোনিবেশ করলে আপনার কাজের পারফরমেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে, আপনার সর্বোত্তমটি আপনি কর্মক্ষেত্রে দিতে পারবেন না।
আপনাকে মনে রাখতে হবে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ বিবেচনা করেই তরুণ সুপারভাইজারকে আপনার নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, অকারণে নয়। কাজেই, বয়সে তরুণ হওয়ায় কারণে অকারণে তাকে চ্যালেঞ্জ করার মানসিকতা আপনাকে পরিহার করতে হবে।
উন্নত দেশের কর্মক্ষেত্রে সিনিয়র কর্মকর্তাদেরও জুনিয়রদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে দেখেছি। বাংলাদেশে এ ধারা সচরাচর লক্ষ্য করা যায় না। এমনও দেখা যায়, জুনিয়র কেউ সিনিয়রকে সালাম দিলে তিনি তার জবাবও যথাযথভাবে দেন না বা ক্ষেত্রবিশেষে, সিনিয়ররা সিনিয়রিটি দেখাতে গিয়ে জুনিয়রদের সাথে প্রকাশ্যে দুর্ব্যবহার করেন।
এ ব্যবধানটি ঘোচানো একান্ত প্রয়োজন। কেননা, সিনিয়র-জুনিয়রের মাঝে ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক বজায় থাকলে কর্মদক্ষতা গুণে বা ভিন্ন কারণে কোনো জুনিয়র পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র হয়ে গেলে তার অধীনে কাজ করতে অস্বস্তিতে পড়তে হয় না।
সিনিয়র আমলাবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলি, প্রজন্মগত পার্থক্য বা বয়সের দূরত্ব ভুলে গিয়ে আপনার তরুণ সুপারভাইজারের সাথে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ বা কর্মক্ষেত্রের উপযোগী সম্পর্ক স্থাপনে সচেষ্ট হোন। উপযুক্ত পরিবেশে আপনি আপনার তরুণ সুপারভাইজারের আগ্রহ ও শখ সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন এবং তার বয়সে আপনার কী পছন্দ-অপছন্দ ছিল তাও তার সাথে শেয়ার করতে পারেন। সুযোগমতো আপনার অতীত কাজের অভিজ্ঞতা, ছাত্রজীবন, ইত্যাদি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
তবে, কেবল বক্তা নয়, মনোযোগী শ্রোতাও হতে হবে আপনাকে। তার কোনো অভিজ্ঞতা বা ঘটনা শেয়ার করতে চাইলে তাও গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। নতুন প্রজন্মের ঢালাও সমালোচনাও আপনাকে পরিহার করতে হবে।
অন্যথায়, আপনার বস ধরে নিতে পারেন আপনি প্রকারান্তরে তারই সমালোচনা করছেন। বয়সে তরুণ সুপারভাইজারের অধীনে কাজ করা বয়স্কদের জন্য আসলেই কঠিন। তারপরও, পরিবর্তিত পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার যথোপযোগী উপায় খুঁজে বের করাই বুদ্ধির পরিচয়।
এম এল গনি ।। কানাডীয় ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি)