এখন হেমন্তকাল, এই সময়ে জানান দেয় ছাতিম ফুলের তীব্র সুবাস। সকালে পুবের নরম রোদে ফুলগুলো চিকচিক করে আর হেমন্তের সন্ধ্যার বিবরণ পূর্ণাঙ্গ হয় না ছাতিম ফুলের এই তীব্র ঘ্রাণ ছাড়া। ছাতিম যেন হেমন্তেরই গায়ের ঘ্রাণ।
এখন হেমন্তকাল, এই সময়ে জানান দেয় ছাতিম ফুলের তীব্র সুবাস। সকালে পুবের নরম রোদে ফুলগুলো চিকচিক করে আর হেমন্তের সন্ধ্যার বিবরণ পূর্ণাঙ্গ হয় না ছাতিম ফুলের এই তীব্র ঘ্রাণ ছাড়া। ছাতিম যেন হেমন্তেরই গায়ের ঘ্রাণ।
পিরোজপুর শহরের নতুন পৌরসভা ভবনের সামনের সড়কে পিরোজপুর ল’কলেজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ছাতিম গাছ ও তার ফুলের তীব্র ঘ্রাণই জানিয়ে দেয় হেমন্তের সরব উপস্থিতি। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতের পুরো সময়টায় এ ঘ্রাণ ছড়ায়। সারা দিনের পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় প্রকৃতিতে বয়ে বেড়ানো হালকা বাতাসের সঙ্গে থেকে থেকে ভেসে আসে ছাতিম ফুলের এই মিষ্টি ঘ্রাণ। ফুলের সেই সুবাসে মুগ্ধ পথচারী।
হেমন্তকালে প্রকৃতিতে সাধারণত তেমন কোনো ফুল ফুটতে দেখা যায় না। প্রকৃতি যখন কিছুটা ফুলশূন্য হয়ে পরে তখন ফোটে ছাতিম। হেমন্তের গোধূলি লগ্ন থেকে রাত অবধি মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে এই ছাতিম। বাতাসে ছাতিমের সুবাস অন্য ধরনের মাদকতা ছড়ায় হৃদয়ে।
এক সময় গ্রাম কিংবা শহরে সবজায়গায় দেখা মিলতো ছাতিম গাছের, কিন্তু এখন এটি অবাধ নিধনের শিকার। এখন আর সেভাবে দেখা মেলে না এ গাছের। তাই বলে ছাতিমকে দুর্লভ বলা যাবে না। সন্ধ্যার পর পথ চলতে চলতে হঠাৎ নাকে এসে লাগা বুনো সৌরভের ঝাপটা জানান দেয় এই গাছ ও তার ফুলের অস্তিত্ব। তবে দৃষ্টিসীমার চেয়ে খানিকটা উঁচু বলে সাধারণ অবস্থান থেকে গন্ধ বিলানো ছাতিমের ফুল সহজে চোখে পড়ে না। কিছুটা উঁচু জায়গায় উঠলে দেখা যায় গাছজুড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ হালকা ঘিয়ে রঙের ফুল। মনে হবে যেন কেউ অসংখ্য ফুলের স্তবক তৈরি করে রেখেছে।
পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, শুধু ফুলের সুবাসই নয়, ছাতিম গাছ দেখতেও সুন্দর। এর ওপরের দিকটা ছাতার মতো ছড়ানো। এই গাছ প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একাধিক শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট গাছটির ছাল অসমতল ও ধূসর। এর পাতার ওপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধূসর। ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা পাতা হয়। একই মূলাবর্তে চার থেকে সাতটি পর্যন্ত পাতা থাকে। বছরের এ সময়টায় সারা গাছ ভরে গুচ্ছবদ্ধ, তীব্রগন্ধি, হালকা ঘিয়ে রঙের ছোট ছোট ফুল ফোটে।
তিনি আরও বলেন, গাছটির সংস্কৃত নাম সপ্তপর্ণী। অঞ্চলভেদে একে ছাতিয়ান, ছাইত্যান, ছাতইনসহ নানা নামে ডাকা হয়। ইংরেজিতে একে ডাকা হয় ডেভিলস ট্রি (Devils tree) নামে। ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালস্টনিয়া স্কলারিস (Alstonia scholaris)। স্কলারিস শব্দটির সঙ্গে বিদ্যা অর্থাৎ লেখাপড়ার যোগ আছে। এ ধরনের নামকরণের কারণ, ছাতিমের নরম কাঠ থেকে ব্ল্যাকবোর্ড ও পেনসিল তৈরি হয় বলে। এ ছাড়া ছাতিম কাঠ দিয়ে কোথাও কোথাও কফিন বানানো হয়ে থাকে। গাছটি একসময় খুব দেখা গেলেও এখন তেমন একটা দেখা যায় না এটি পরিবেশের জন্য বেশ উপকারী, তাই আমাদের এই গাছকে সংরক্ষণ করা উচিত।
পিরোজপুর সিও অফিস মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. পারভেজ হাওলাদার বলেন, আমাদের বাসা থেকে পিরোজপুর শহরে যেতে সবসময়ই নতুন পৌরসভার সামনে ল’কলেজের পাশের ছাতিম গাছ দুটি চোখে পরে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বাতাসে ভেসে আসা সুবাসে গাছ দুটিকে খুঁজে নেওয়া যায় খুব সহজেই। গাছ দুটি আমাদের বেশ প্রশান্তি দেয়। এক সময় গ্রামের রাস্তার পাশে, বনে-জঙ্গলে অহরহ এ গাছ থাকলেও বর্তমানে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া সহকারী জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রাহাত হাওলাদার বলেন, আমাদের অফিসে যেতে-আসতে দুইবার ছাতিম গাছ দুটি আমাকে বিমোহিত করে। ছাতিম ফুলের তীব্র ঘ্রাণ আমার বেশ ভালো লাগে বিধায় এর একটি গাছের চারা আমার বাড়িতে রোপণ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু শহরের কোনো নার্সারিতে এ গাছের চারা খুঁজে পাইনি। যেহেতু এ গাছটি এখন তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না এবং প্রকৃতিতে এর বেশ উপকারিতা আছে তাই এ গাছটির কিছু চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা উচিত।
প্রাকৃতিক সুগন্ধে ভরপুর সাতিম গাছ যাতে এলাকা থেকে বিলীন হয়ে না যায় সে ব্যাপারে সবাই সচেষ্ট হবে—এমন প্রত্যাশা করেন এলাকাবাসী।
শাফিউল মিল্লাত/এএমকে