‘চার মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে ঘরে লাশ হয়ে শুয়ে থাকি’

‘চার মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে ঘরে লাশ হয়ে শুয়ে থাকি’

ঘরে থাকা আর মারা যাওয়া একই কথা। এক দিকে থাকলে মনে হয় ওইদিক ভেঙে পড়বে, অন্যদিকে থাকলে মনে এইদিক ভেঙে পড়বে। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি ঢুকে, রোদ হলে নামে। স্বামীর খবর নাই আজ দুই মাস। চার মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে ঘরে লাশ হয়ে শুয়ে থাকি।

ঘরে থাকা আর মারা যাওয়া একই কথা। এক দিকে থাকলে মনে হয় ওইদিক ভেঙে পড়বে, অন্যদিকে থাকলে মনে এইদিক ভেঙে পড়বে। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি ঢুকে, রোদ হলে নামে। স্বামীর খবর নাই আজ দুই মাস। চার মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে ঘরে লাশ হয়ে শুয়ে থাকি।

জরাজীর্ণ মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের বলছিলেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী ফুলজান বেগম।

জানা গেছে, স্বামীর ভিটা-বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই ফুলজান বেগমের। স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করেন। বাড়িতে ঠিকমতো টাকা পাঠাতে পারেন না। বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন ফুলজান। এভাবেই সন্তানদের মুখে আহার তুলে দেন তিনি। তার জোড়াতালি দেওয়া জরাজীর্ণ ঘরটি বন্যায় আরও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। বিবাহযোগ্য তিন মেয়ে থাকলেও ঘর না থাকায় তাদের বিয়ে হয় না। সন্তানদের নিয়ে রাতে যে ঠিকভাবে ঘুমাবেন তার উপায় নেই।

ফুলজান বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুখে খাবার নাই শরমের কথা বলে লাভ কী। এক বেলা খাই তো দুই বেলা না খেয়ে থাকি। ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করে। তাদের খরচ জোগাতে জীবন শেষ। বন্যায় ঘর ডুবে যাওয়ায় সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। সেখানে মানুষ যে খাবার দিসে তাই খাইসি। বাড়িতে আসার পর দেখি ঘর পড়ে গেছে। এখন ভয় হয় কখন এই ঘরের নিচে সন্তানসহ মারা পড়ি।

তিনি বলেন, স্বামী দিনমজুর। যা আয় করেন তা দিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করি। সেখান থেকে যা পাই তা এনে বাচ্চাদের খাওয়াই। ঘরে বিবাহযোগ্য তিন মেয়ে আছে। কিন্তু ঘরের এমন অবস্থা জন্য তাদের বিয়ে হচ্ছে না। বন্যায় আমাদের ঘরটা শেষ। চার মেয়ে-দুই ছেলে নিয়ে এমন ঘরে আছি যেটা কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না।

প্রতিবেশী কাজী আরমান বলেন, আমাদের এলাকায় এমন জরাজীর্ণ ঘর আর নেই। তাদের খুব কষ্ট হয়। দিনের বেলায় খেতে পারে না, রাতের বেলায় ঘরে ঘুমাতে পারে না। আগে তাও যেমন ছিল, এবারের বন্যায় তাও শেষ। বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে ফুলজান তার সন্তানদের নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে।

চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যায় চাটখিল উপজেলায় ফুলজান বেগমসহ অনেকের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করবো। পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারের পাশাপাশি যদি বিত্তবানরা এগিয়ে আসে তাহলে খুবই ভালো হয়।

হাসিব আল আমিন/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *