ঘুমের মধ্যেই স্রোতে ভেসে যায় ঘরের মেঝে 

ঘুমের মধ্যেই স্রোতে ভেসে যায় ঘরের মেঝে 

মো. কালাম মিয়া (৪৫)। বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে পানি এসে আছড়ে পড়ে তার বাড়ির পেছনের খালে। সেই স্রোত প্রবল জোরে ধাক্কা লাগে তার দালানেও। তখনও বুঝতে পারেননি কতটা বিপদের সম্মুখে পড়তে যাচ্ছেন। মধ্যরাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সেই স্রোতে ভেসে যায় তার দালানঘরের বারান্দার নিচের মাটি। ভেঙে পড়ে ঘরের দুটি মেঝে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেই ভয়াল রাতের কথা জানান দুবাই প্রবাসী কালাম মিয়া।

মো. কালাম মিয়া (৪৫)। বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে পানি এসে আছড়ে পড়ে তার বাড়ির পেছনের খালে। সেই স্রোত প্রবল জোরে ধাক্কা লাগে তার দালানেও। তখনও বুঝতে পারেননি কতটা বিপদের সম্মুখে পড়তে যাচ্ছেন। মধ্যরাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সেই স্রোতে ভেসে যায় তার দালানঘরের বারান্দার নিচের মাটি। ভেঙে পড়ে ঘরের দুটি মেঝে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেই ভয়াল রাতের কথা জানান দুবাই প্রবাসী কালাম মিয়া।

কালাম মিয়ার বাড়ি আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামে। নয়াদিলে ভাঙন ধরা আখাউড়া-কসবা যাতায়াতের সেতুর কাছে তার বাড়ি। ২০২১ সালে প্রবাসের টাকায় নির্মাণ করেন এই দালানটি। আজ শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত দালানের সামনে যখন কালাম মিয়ার সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন পাশে তার মা হোসেদা বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন।

প্রবাসী মো. কালাম মিয়া জানান, দালানটি ছিল অর্ধনির্মিত। এতে শুধু তিনটি রুম তৈরি হয়েছিল। সেদিন রাতে পূর্ব দিকের একটি রুমে ঘুমাচ্ছিলেন কালাম মিয়া ও তার স্ত্রী লুৎফা আক্তার। আর পশ্চিম দিকের একটি রুমে মা হোসেদা বেগম ও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আঁখি আক্তার এবং ১০ মাসের ছেলে সন্তান আব্দুল্লাহ ঘুমাচ্ছিলেন। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল প্রচণ্ড, আর সঙ্গে পাহাড়ি ঢল। মধ্যরাতে স্রোতের শব্দ আতঙ্ক ধরিয়ে দিচ্ছিল। হঠাৎ মধ্যরাতে স্রোতের ঢেউয়ে সরে যায় দালানের মাঝখানের রুম ও বারান্দার অংশের নিচের মাটি। এতে মধ্যরাতে বিকট শব্দে ঘুম থেকে যায়। উঠে দেখেন ঘরের নিচ দিয়ে স্রোত বইছে। ঘরটির মেঝে ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। কষ্টের অর্জিত প্রবাসের টাকায় গড়া দালানের কিছু অংশ চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে গেল। নিজেদের সামলে তাৎক্ষণিক ঘর থেকে কিছু দরকারি মালামাল নিয়ে বের হয়ে আসেন।

তিনি বলেন, আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়েছেন। মেঝের সঙ্গে পুরো ঘর ভেঙে পড়লে সর্বহারা হয়ে যেতাম। পানির স্রোত যদি না কমে আসে তাহলে আমার পুরো দালানটি এখন বিলীন হয়ে যাবে।

বন্যায় কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে কালাম মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২১ বছরের কষ্টের টাকায় দালানটি নির্মাণ করেছি। ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তাও সস্পূর্ণ শেষ করতে পারিনি। ভেসে যাওয়া রুমে ছিল অনেক মালামাল। সব মিলিয়ে ৩ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছি।

কালাম মিয়ার মা হোসেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার পুতের (ছেলে) সব শেষ। বিদেশের কষ্টের টেকা (টাকা) দিয়া বাড়িডা তুলছিল। ঘুমের মধ্যে পানির বানে ঘরের মেঝে ভেঙে লইয়া গেসেগা। একটু একটু কইরা আরও ভাঙতাসে। কি হইব এহন আমডার। আমার পোলা তো অসুস্থ। আর বিদেশ করতারবোনি জানি না। আমডারে আপনারা একটু সাহায্য কইরেন।’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং ত্রিপুরা রাজ্যের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে আখাউড়ার ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি দল। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

মাজহারুল করিম অভি/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *