ঐতিহ্যবাহী ‘পলো বাওয়া উৎসব’ দেখতে শতাধিক মানুষের ঢল

ঐতিহ্যবাহী ‘পলো বাওয়া উৎসব’ দেখতে শতাধিক মানুষের ঢল

গ্রাম বাংলার পুরোনো একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হচ্ছে পলো বাওয়া। একসময় গ্রামজুড়ে বর্ষা মৌসুম শেষে শীতকে উপেক্ষা করে বাঁশ দিয়ে তৈরি পলো দিয়ে নদী-নালা ও খালবিলে সারিবদ্ধভাবে মাছ শিকার করতে দেখা যেতো মানুষদের।

গ্রাম বাংলার পুরোনো একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হচ্ছে পলো বাওয়া। একসময় গ্রামজুড়ে বর্ষা মৌসুম শেষে শীতকে উপেক্ষা করে বাঁশ দিয়ে তৈরি পলো দিয়ে নদী-নালা ও খালবিলে সারিবদ্ধভাবে মাছ শিকার করতে দেখা যেতো মানুষদের।

কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই পলো বাওয়া উৎসব। তবে বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকাল ৭টার দিকে ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের আদমপুর বিলে আয়োজন করা হয় পলো বাওয়া উৎসব। শেষ হয় সকাল ১০টার দিকে। আর এতে কয়েকশ শৌখিন মাছ শিকারি অংশ নেয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুব ভোরেই আদমপুর বিলে হইহুল্লোর করে একসঙ্গে পলো-জাল হাতে মাছ শিকারে নেমে পড়েন সবাই। ঝপ ঝপ শব্দের তালে চলতে থাকে পলো বাওয়া। কয়েক ঘণ্টার এই উৎসবে আশপাশের গ্রামের নানা বয়সের লোকজন, শিশু থেকে বৃদ্ধ যে যার মতো পলো বাওয়া উৎসবে মেতে ওঠেন। বিলের মধ্যে নানা বয়সের মানুষ মাছ ধরতে নামলে তাদের মাছ ধরা দেখতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন গ্রামের নারীরাও। কেউ আবার জাল থেকে মাছ ধরে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় তাদের হাতে নানা প্রজাতির মাছ দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময় পলো দিয়ে মাছ শিকারের অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতো গ্রামের ছোট-বড় সকল বয়সী মানুষ। কম বেশি প্রায় সবাই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করতো। আর সেই মাছ দিয়ে পরিবারের সকলে আনন্দের সঙ্গে রান্না করে খেতো। কিন্তু সেই বাংলার ঐহিত্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন নেই নদী-নালায় পানি, যতোটুকু আছে সেখানে অসাধু মাছ শিকারিরা চায়না দুয়ারি, কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে ছোট মাছগুলো মেরে দেশীয় মাছের বংশবিস্তারে বাধা সৃষ্টি করছে। তবে এবার মাছ ধরার সেই ঐতিহ্য ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় ফরিদপুর সদরেরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের আদমপুর বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসবের আয়োজন করা হয়। আর এতে কয়েক হাজার শৌখিন মাছ শিকারি অংশ নেন।

এলাকাবাসী জানান, পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিল শুক্রবার সকাল ৮টায় আদমপুর বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার করা হবে। এ সংবাদে কয়েকটি গ্রাম থেকে ৮টার আগেই শৌখিন মাছ শিকারিরা ভোর থেকে জড়ো হন বিল পাড়ে। ‘উন্মুক্ত জলাশয়ে ভেসাল, কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি চাই না’ স্লোগানে এ উৎসব দেখতে জড়ো হয় আশপাশের গ্রামের নানা বয়সী মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন শিকদার (২৬) বলেন, যান্ত্রিক যুগে আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম পলো দিয়ে মাছ ধরার কথা। আজ এই উৎসবের মধ্য দিয়ে শৈশবকে ফিরে পেলাম।

তিনি বলেন, এখানে মাছ তেমন পাওয়া যায়নি তবে সকালবেলা সবাই একত্রিত হওয়া, হাসি-তামাশা মিলে এক উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কি পেলাম কি পেলাম না সেই হিসাবের চেয়ে আমরা এটাকে উপভোগই বেশি করেছি।

আয়োজকরা বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলে উন্মুক্ত জলাশয়ে কারেন্ট জাল বা চায়না দুয়ারি দিয়ে দেশীয় মাছের বংশানুক্রম ধ্বংস করতে পারতো না। কিন্তু প্রশাসনের আন্তরিকতা না বাড়ালে একসময় দেশীয় মাছ চায়না জাল, কারেন্ট জালের বুকে বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে গ্রামীণ ঐতিহ্য পলো দিয়ে মাছ শিকারের মতো নানা উৎসবও। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, চায়না দুয়ারি জাল রোধে আমরা তৎপর রয়েছি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিনিয়ত অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগের চেয়ে চায়না দুয়ারির ব্যবহার কমেছে। এটা ব্যবহার করে যাতে দেশীয় মাছের ক্ষতি না করা হয় এ ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানেই থাকবো।

জহির হোসেন/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *