এখন রাজনীতি করার সময় নয়, নিজেদের বাঁচানোই প্রধান বিষয়

এখন রাজনীতি করার সময় নয়, নিজেদের বাঁচানোই প্রধান বিষয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের বেশিরভাগই দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন বলে জানা যাচ্ছে। আর যারা পালাতে পারেননি তারা দেশেই আত্মগোপনে আছেন। সেখান থেকে কোনো কোনো নেতা গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের বেশিরভাগই দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন বলে জানা যাচ্ছে। আর যারা পালাতে পারেননি তারা দেশেই আত্মগোপনে আছেন। সেখান থেকে কোনো কোনো নেতা গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।

গত জুলাই-আগস্টে সরকার পতনের আন্দোলন ঠেকাতে বেশ মারমুখী ছিলেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনের নেতারা। তাদের কেউ কেউ সরাসরি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছেন। যে কারণে সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

নিষিদ্ধ ঘোষণার পর গোপনে ছাত্রলীগ নেতাদের কেউ কেউ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে তারা এখন সংগঠনের চেয়ে নিজের জীবন বাঁচানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সংগঠনটির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, এখন রাজনীতি করার সময় নয়, নিজেদের বাঁচানোই এখন প্রধান বিষয়।

নাম ও স্থান প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, আমাদের নেতারা সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। এখন গা ঢাকা দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। আমাদের কোনো নির্দেশনাও নেই। সংগঠন নিষিদ্ধ করেছে, এটা সরকারের বিষয়। আমাদের সংগঠন তো মন-প্রাণের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, এখন রাজনীতি করার সময় নেই। নিজেদের রক্ষা করা প্রধান বিষয়। মব জাস্টিসের নামে নেতাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হচ্ছে। হামলা করা হচ্ছে। কোথাও নিরাপদ নেই। তাই অনেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে গেছেন। সেখান থেকেই মাঝে মধ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন।

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার আগে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তারভীর হাসান সৈকতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দলীয় সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় এখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতা ভারতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান মাঝে মধ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন। বিবৃতিতে দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দোষ ত্রুটি তুলে ধরেন তারা।

তবে ছাত্রলীগের আজকের এই অবস্থার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী বলে মনে করছেন অনেক সাবেক নেতা। তারা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের জাহির করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বলেছিলেন, তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মাঠে অবস্থান নিতে পারবেন, প্রতিরোধ কর্মসূচি দিয়ে সফল হবেন। কিন্তু দেখা গেল উল্টো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে আরও জোরালো করেছিল তারা। সেদিন তারা হার না মানলে আজ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হতো না।

ছাত্রলীগের সাবেক এক সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বর্তমান কমিটির নেতারা পালিয়ে আছেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা মাঝে মধ্যে মিছিল করছেন। সেই মিছিলের কারণেও অনেক সাবেক নেতার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ সব সময় থাকে, তেমনি ছাত্রলীগের প্রতিও মানুষের আগ্রহ রয়েছে। ছাত্রলীগ কী করে, সেটাও জানতে চায়।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

এমএসআই/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *