একাডেমিক সিলেবাসের যুগোপযোগী ও যৌক্তিক সংস্কার হবে

একাডেমিক সিলেবাসের যুগোপযোগী ও যৌক্তিক সংস্কার হবে

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের প্রায় সবাই পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) উপাচার্যও। পরে জবির শিক্ষকদের মধ্য থেকে নতুন উপাচার্য নিয়োগের দাবি ওঠে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে জবি থেকে প্রথমবারের মতো উপাচার্য হন অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের প্রায় সবাই পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) উপাচার্যও। পরে জবির শিক্ষকদের মধ্য থেকে নতুন উপাচার্য নিয়োগের দাবি ওঠে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে জবি থেকে প্রথমবারের মতো উপাচার্য হন অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নিজের স্বপ্ন ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নতুন উপাচার্য কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মাহতাব লিমন।

ঢাকা পোস্ট : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা শেষ করে অবসর নিয়েছিলেন। এখন আবার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হলেন। এ নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?

উপাচার্য : আমার অনুভূতি খুবই পজিটিভ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছি। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। জুলাই বিপ্লবের অসংখ্য শহীদ এবং আহতের যে আত্মত্যাগ সেটিকে মাথায় রেখে এবং তাদের যে প্রত্যাশা সেটি পূরণের জন্য কাজ করার চেষ্টা করব।

ঢাকা পোস্ট : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যালেঞ্জ তো অনেক। এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে আপনি কোনটিকে মনে করছেন?

উপাচার্য : এটি খুব বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু আয়তনের দিক দিয়ে সবচেয়ে ছোট। আমি যে এটিকে বড় বিশ্ববিদ্যালয় বলছি এর ভিত্তি হলো এখানকার হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী আর জ্ঞানী-গুণী শিক্ষকবৃন্দ।  আমার কাছে সবচেয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলো- আমাদের এত এত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্থান সংকুলান করা এবং তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা।

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমাদের সব কর্মকাণ্ডের প্রধান লক্ষ্য হবে গুণগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। আমাদের সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, নানান রকম অফিসিয়াল অসামঞ্জস্যতা। আমাদের অফিসগুলো যেন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ হয় সেদিকে নজর দিচ্ছি।

ঢাকা পোস্ট : প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আপনার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে কি না?

উপাচার্য : ইতোমধ্যে অফিসের নিয়মানুবর্তিতার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সবাইকে একটি সুনির্দিষ্ট বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছি যে, এই ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আমি জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। বিভাগের প্রধান ও দপ্তর প্রধানেরা আমাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

ঢাকা পোস্ট : শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এখানকার শিক্ষার্থীদের তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে কি না?

উপাচার্য : এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে আমাদের শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্য কোথাও যদি মেধাবী শিক্ষার্থী পাই সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তবে একটা পয়েন্ট মনে রাখতে হবে তাদেরকে আমাদের শিক্ষার্থীদের চেয়ে মেধাবী হতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ করা হয় তার দুই তৃতীয়াংশই বেতন-ভাতায় চলে যায়। বাকি এক শতাংশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়। বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কী?

উপাচার্য : বাজেট নিয়ে আমার প্রত্যাশাটা খুবই সুনির্দিষ্ট। বাজেট নিয়ে এইযে প্রহসন, তিনভাগের দুইভাগ বেতন ভাতায় বাকি এক ভাগ অন্যান্য কাজে, খুবই অল্প অংশ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় হওয়া- এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমার প্রচেষ্টা থাকবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়।

ঢাকা পোস্ট : বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আইন প্রণয়নের সঙ্গে আপনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। কিন্তু এসব আইনের অনেক ধারা উপধারা সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্গানোগ্রাম বিদ্যমান ছিল কিন্তু এখন নেই। এ বিষয়ে আপনার পদক্ষেপ কী হবে?

উপাচার্য : আইন সংশোধনের বিষয়টি একটু বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বিবেচনায় আনতে হবে। এ মুহূর্তে যেহেতু একটি বিপ্লবী সরকার তাই আইন সংশোধনের বিষয়ে আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। তবে অর্গানোগ্রাম যেহেতু আমাদের নিজেদের ব্যাপার তাই অতি অল্প সময়ে আমরা অর্গানোগ্রাম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব।

ঢাকা পোস্ট : দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে এখন পর্যন্ত যে কাজগুলো হয়েছে তাতে বিভিন্ন রকমের দুর্নীতির খবর ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি আপনি খতিয়ে দেখবেন কি না?

উপাচার্য : দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে বিগত দিনে কাজে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে তার জন্য বিভিন্ন সময় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেসব কমিটির রিপোর্টগুলো আমলে নিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা পোস্ট : দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের হল ও ভবনগুলো সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার। সেনাবাহিনীর কাছে কাজ দেওয়ার বিষয়ে আপনার মতামত কী?

উপাচার্য : আমরা সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করেছি এ রকমের একটা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনগত বাধা আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখছি। তবে আমরা আশাবাদী বর্তমান সরকার আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

ঢাকা পোস্ট : বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কী?

উপাচার্য : আমি নিজে একজন গবেষক। আমার শিক্ষকতা জীবনে বেশিরভাগ সময় গবেষণার বিষয় পড়িয়েছি। সত্যি কথা বলতে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার দিকে দৃষ্টি কম দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে আমাদের ভঙ্গুর গবেষণা খাতের দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে শুধু দেশের রিসোর্সের ওপর নির্ভর না করে আমাদের বিদেশি বিভিন্ন রিসোর্সের প্রতিও নজর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের বড় রকমের ভূমিকা পালন করতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক সিলেবাস একবার প্রণয়ন করা হলে সেটা আর সংশোধন করার নজির খুব কম দেখা যায়। অথচ সময় ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একাডেমিক সিলেবাস পরিবর্তন-পরিমার্জন করার কথা। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?

উপাচার্য : খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। এটার সত্যতা আমি মেনে নিচ্ছি। আমি নিজেও হয়তো এই দোষে দুষ্ট। আমার মনে হয় এখানে পরিবর্তন আসা জরুরি। শিগগিরই সিলেবাসকে যুগোপযোগী করে যৌক্তিক সংস্কার করতে যে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার আমরা তা করব। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। 

ঢাকা পোস্ট : বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ জকসু নিয়ে আপনার অবস্থান কী?

উপাচার্য : আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫-এ সুস্পষ্ট করে বলা আছে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না। তবে ছাত্রদের রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা নেই। আবার ছাত্রসংসদ জকসু নিয়েও কোনো কথা নেই আইনে। কিন্তু আমরা যদি একটি সুন্দর পলিসি বা নীতি প্রণয়ন করি তাহলে সেটা আইনের কোনো বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এ বিষয়ে আমাদের আইন উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে অতি দ্রুত আমরা জকসু বাস্তবায়ন করব। 

ঢাকা পোস্ট : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

উপাচার্য : আপনাকেও ধন্যবাদ। ঢাকা পোস্টের জন্য শুভকামনা।

এমএল/এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *