ইলিশ কিনতে এসেছি, পোঁয়া কিনে বাড়ি যাচ্ছি

ইলিশ কিনতে এসেছি, পোঁয়া কিনে বাড়ি যাচ্ছি

‘বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে এসেছি, দাম শুনে এখন পোঁয়া মাছ কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।’ বাজার শেষে বাড়ি ফেরার পথে এভাবেই আক্ষেপ করে কথাটি বলছিলেন নিম্নআয়ের মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তার মতে, ইলিশ এখন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে।

‘বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে এসেছি, দাম শুনে এখন পোঁয়া মাছ কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।’ বাজার শেষে বাড়ি ফেরার পথে এভাবেই আক্ষেপ করে কথাটি বলছিলেন নিম্নআয়ের মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তার মতে, ইলিশ এখন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে।

বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৩২ ভাগ উৎপাদন হয় দ্বীপজেলা ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগরের ১৯২ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে। চলতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন, যা গত বছরের চেয়েও বেশি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ভারতে দুই হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানি অনুমতির খবরে ভোলায় ইলিশের বাজারে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।

গত দুদিন ভোলার বিভিন্ন মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৭০০ গ্রাম ওজনের উপরের ইলিশ মাছ বাজারে সরবরাহ নেই। আর এতেই প্রভাব পড়ছে ছোট সাইজের ইলিশের দামের ওপর। স্থানীয় বাজারগুলোতে হঠাৎ ইলিশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ ঝাড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

 

খুচরা বাজারে ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭০০ টাকা কেজি দরে, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকার উপরে, আর ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৩৫০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকারও বেশি।

ইলিশ মাছ বিক্রেতা আলমগীর জানান, আড়ত থেকে বেশি দাম দিয়েই মাছ কিনে আনি। আমাদের যেমন দামে কিনি তেমন দামেই বাজারে বিক্রি করতে হয়। তবে ঢাকা, চাঁদপুর, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বড় পাইকারদের কারণে আড়ত থেকে এখন আর বড় ইলিশ কেনা সম্ভব হয় না, দাম বেশি দিয়ে হলেও তারা কিনে নেন। তবে তারা ছোট ইলিশ কেনেন না। ওই ছোট ইলিশগুলোই আমরা কিনে এনে বিক্রি করি। তাও বেশি দামে কিনে আনতে হয়।

তেঁতুলিয়া নদী এলাকার বাবুল মাঝি বলেন, ইলিশ মাছের দাম কই বাড়ছে? আড়তে আগেও যে দামে বেচতাম এখনো এই দামেই বেচি (বিক্রি করেন)। নদীতে মাছ মোটামুটি ভালোই পাচ্ছি। তবে গত কয়েকদিন ধইরা বড় ইলিশের অনেক চাহিদা।

দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের নীরব মাঝি বলেন, শুনেছি বাজারে ইলিশের দাম বাড়ছে। কিন্তু বাড়তি দামে আমরা আড়তে ইলিশ বিক্রি করতে পারি না। আবার যত টাকার মাছ বিক্রি করি তার ওপর ১০ ভাগ কমিশন কেটে রাখেন আড়তদার, সব লাভ আড়তদারদের।

সাধারণ ক্রেতা ফারুক জানান, ইলিশের বাজারে নৈরাজ্যের কারণে আমরা ভোলার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা ঠিকমতো ইলিশ মাছ কিনতে পারি না। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বড় ইলিশ ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠিয়ে স্থানীয়ভাবে ছোট ইলিশের দামের ওপর কৃত্রিম চাপ তৈরি করে। এর ফলে ছোট সাইজের ইলিশের দাম বেড়েছে। যা বর্তমানে আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

কিচেন মার্কেটে মাছ কিনতে আসা গৃহিণী শারমিন আক্তার জানান, অনেকক্ষণ বাজার ঘুরে দামাদামি করলাম। কিন্তু ইলিশ মাছের দাম আমার বাজেটের বাইরে, ছোট ইলিশের দামও অনেক বেশি। মাছ তো কিনতে হবে,তাই এখন পুকুরে চাষ করা মাছ দেখতেছি।

ক্রেতা সাইফুল আলম জানান, নিয়মিত বাজার মনিটরিং না করার ফলাফল হচ্ছে ইলিশের বাজারে নৈরাজ্য। বিক্রেতারা সব সময়ই সুযোগসন্ধানী। তাদের অজুহাতের শেষ নেই। ভারতে সরকারিভাবে ইলিশ মাছ রপ্তানির খবর শুনেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছেন। তিনি উল্টো প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন, ভোলায় কি ইলিশের আকাল চলছে? যে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হবে।

ভোলারখাল ও তুলাতুলি মৎস্য আড়ত মালিকরা বলছেন, বড় ইলিশের দাম বেশি হলেও প্রচুর চাহিদা। পাইকাররা দাম বেশি দিয়ে হলেও বড় ইলিশ কিনছেন। তারা ভারতে রপ্তানির উদ্দেশ্যে মাছ কেনেন। তবে আমরা ভোলার আড়তদাররা মাছ মজুদ করি না।

সরাসরি নদীপথেই বেশিরভাগ মাছ ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। যার কারণে ভোলায় ইলিশের বাজারে প্রভাব পড়ছে। 

ভোলা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোস্তফা সোহেল ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, নিয়মিত আমরা বাজার মনিটরিং করছি। এটা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। কোনো বিক্রেতার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।   

মো. খাইরুল ইসলাম/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *