উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অনুদান পেতে ঠাকুরগাঁওয়ে ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া আবেদন পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদান প্রাপ্তির লক্ষ্যে এ আবেদন করা হয়। আবেদনে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যায়ন পত্র সংযুক্ত করার নিয়ম রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সেই প্রত্যায়ন পত্রে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেনের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে পাঠানো হয়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে এই ভুয়া আবেদন পাঠানো হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— সদর উপজেলার ঝাড়গাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, জাঠিভাঙ্গা শিডিউল কাস্ট উচ্চ বিদ্যালয়, ফাড়াবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বগুলাডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়, দেওগাঁও দোয়েল উচ্চ বিদ্যালয়, মোলানখুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, ভগদগাজী উচ্চ বিদ্যালয়, শিবগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঝাড়গাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পারপূগী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়, পলাশ বাংলা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, পুরাতন ঠাকুরগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাচারী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, কশালবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, দারাজগাঁও হামিদ আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়, কদম রসুল হাট উচ্চ বিদ্যালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাড়াবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ রায় বলেন, আমাদের কাছ থেকে শুধু কিছু কাগজপত্র নেওয়া হয়েছে। বাকি সব তারা করে দিয়েছেন। ইউএনও স্যারের প্রত্যয়ন পত্র আমাদের নেওয়া হয়নি। তারা সবকিছু করে দেওয়ার কথা বলেছেন। তাদের সাথে আর যোগাযোগ ও নম্বরও নেওয়া হয়নি।
শিবগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদেমুল ইসলাম বলেন, পাশে পারপূগী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রহমতুল্লাহ স্যারের মাধ্যমে কয়েকজন স্কুলে আসেন। তাদের মাধ্যমে এসব হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পারপূগী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রহমতুল্লাহ বলেন, আমাদের ইউনিয়নের রইসুল নামে একজন স্কুলে আসেন। তার সাথে আরও কয়েকজন এসে আমাদের অনুদানের ব্যাপারে বুঝিয়েছেন। অনুদান পাওয়ার পরে কিছু তারা নিতে চেয়েছিলেন। তারা আমাদের না বলেই এসব জাল কাগজপত্র বানিয়েছেন।
অভিযুক্ত রইসুলের বাড়ি জামালপুর ইউনিয়নের বড়পূগী গ্রামে। তার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রত্যয়ন পত্রের স্মারক নম্বরে আকাশ চুম্বি পার্থক্য দেখে আমাকে অবহিত করা হয়। সেই সাথে মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে সবগুলো প্রত্যয়নপত্র পাঠানো হয়। এতে আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে পাঠানো হয়েছে। এর সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এমন জালিয়াতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আখতার বলেন, আমাদের কাছে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রত্যয়নপত্র এসেছে। সেগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি অনেক বেশি স্পর্শকাতর। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, স্বাক্ষর জালিয়াতি করার অপরাধে যা শাস্তি হওয়া উচিৎ সেটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আরও বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরিফ হাসান/এনএফ