‘আর নয় রোহিঙ্গা’, তবুও থামছে না অনুপ্রবেশ

‘আর নয় রোহিঙ্গা’, তবুও থামছে না অনুপ্রবেশ

নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়ে নীতিগতভাবে পক্ষে নয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না অনুপ্রবেশ। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে।

নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়ে নীতিগতভাবে পক্ষে নয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না অনুপ্রবেশ। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের সঙ্গে প্রকৃত অবস্থান শক্ত নয়। কেননা, সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অবস্থান অনেকাংশে ঢিলেঢালা। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় চেক পোস্টে বিজিবির নজর থাকলেও অন্যত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। সেজন্য রোহিঙ্গারা খুব সহজে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ঢাকা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে এই সংখ্যার তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৫০ হাজারে পৌঁছে গেছে।

এদিকে গত সাত বছর থেকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে ঝামেলায় আছে বাংলাদেশ। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে না পারার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার সীমান্তে চলমান অস্থিরতা এবং নতুন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে ঝামেলা লেগেই ছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাস দুয়েকের ব্যবধানে নতুন করে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলো।

গত সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে সীমান্তে অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ করে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটিকে বাংলাদেশের পক্ষে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশের পক্ষে আর রোহিঙ্গা নেওয়া সম্ভব নয়। ওই সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, যারা রোহিঙ্গাদের নিতে উপদেশ দিতে আসে তারা বরং তাদের নিয়ে যাক।

সংস্থাটিকে না করার পর মাস দুয়েকের ব্যবধানে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ নিয়ে ঢাকার এক জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, রোহিঙ্গাদের নেওয়ার বিষয়ে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা নতুন করে একটি রোহিঙ্গাকেও নেওয়ার পক্ষে নই। কিন্তু এরপরও রোহিঙ্গারা ঢুকে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর বিষয়ে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, আমরা আর একজন রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দিতে রাজি না। কিন্তু কিছু ঢুকে যাচ্ছে, এটা আমরা জানি। সেটাকে আমরা যতটুকু পারা যায় ঠেকানোর চেষ্টা করছি।

গত ১৬ অক্টোবর ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের নতুন রাষ্ট্রদূত কাও সো মো উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন পর্যন্ত নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার। ওই বৈঠকে ৪০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে সরকার।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এছাড়া, প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে। সম্প্রতি নতুন করে আসা ৫০ হাজার রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

এনআই/এমএসএ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *