‘আমরা একতাবদ্ধ থাকলে কেউ বিভেদ ছড়াতে পারবে না’

‘আমরা একতাবদ্ধ থাকলে কেউ বিভেদ ছড়াতে পারবে না’

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ ‘ঐক্য’। এর বিপরীতে কোনো ‘দুষ্ট শক্তি’ দাঁড়ানোর সাহস পায় না। পিঁপড়া আর মৌমাছি, আমাদের এই শিক্ষাই দেয়। এত ছোট্ট শরীর নিয়েও কত সুশৃঙ্খল জীবন পরিচালনা করে এই প্রাণীগুলো। যা সম্ভব হয়েছে একমাত্র তাদের ঐক্যের জন্যই। এই ঐক্যের আরেকটি বলিষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে—‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। দল-মত নির্বিশেষে সবার ঐক্য আর রক্তের মধ্য দিয়েই আরেকটি স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ।

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ ‘ঐক্য’। এর বিপরীতে কোনো ‘দুষ্ট শক্তি’ দাঁড়ানোর সাহস পায় না। পিঁপড়া আর মৌমাছি, আমাদের এই শিক্ষাই দেয়। এত ছোট্ট শরীর নিয়েও কত সুশৃঙ্খল জীবন পরিচালনা করে এই প্রাণীগুলো। যা সম্ভব হয়েছে একমাত্র তাদের ঐক্যের জন্যই। এই ঐক্যের আরেকটি বলিষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে—‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। দল-মত নির্বিশেষে সবার ঐক্য আর রক্তের মধ্য দিয়েই আরেকটি স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ।

এই ঐক্যের স্মৃতি ধরে রাখতেই কাঁচপুর ব্রিজের পূর্ব পাশের আন্ডারপাসের দেয়ালে ছয় হাজার বর্গফুটের সুবিশাল এক ক্যালিগ্রাফি এঁকেছেন মোল্লা মোহাম্মদ হানিফ। তিনি একজন ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট। ২০১২ সালে ঢাকার মতিঝিলস্থ জামিয়া দ্বীনিয়া শামছুল উলূম মাদরাসা থেকে কুরআনের হাফেজ হন তিনি। ২০২২ সালে ঢাকার যাত্রাবাড়িস্থ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম আল-মাদানিয়া মাদরাসা থেকে হাদিস পাস করেন। বর্তমানে পেশাদার ক্যালিওগ্রাফি এ আর্টিস্ট ‘শৈল্পিক কওমি আর্ট ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোল্লা মোহাম্মদ হানিফ। একইভাবে তিনি ‘আল আহনাফ ক্যালিগ্রাফি অ্যাকাডেমি’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকও।

মোল্লা মোহাম্মদ হানিফের কাঁচপুরের দৃষ্টিনন্দন এই ক্যালিগ্রাফি সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের মানুষের মাঝে ঐক্যের বীজ বপন করে এক ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চান তিনি। পাশাপাশি স্বপ্নবাজ মোল্লা মোহাম্মদ হানিফ ‘ক্যালিগ্রাফিকে’ এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায়।

একান্ত সাক্ষাৎকারে মোল্লা মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে আমরা মোটা দাগে তিনটি মেসেজ দিয়েছি, যা একইভাবে একই সুতোয় গাঁথা। মেসেজ তিনটি ভাগ করলে যা পাওয়া যায়, আমরা একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত উল্লেখ করেছি। যা দিয়ে মানুষের ঐক্যবদ্ধতাকে বোঝায়। দ্বিতীয়ত, একতাই শক্তি। ক্যালিগ্রাফিতে আরবিতে লেখা আছে, ‘আল কুআতু ফিল্ ওয়াহ্দা’ অর্থাৎ একতাই শক্তি। পরবর্তীতে মাঝখানে জোড়া হাতের চতুর্দিকে ছোট করে কবিতা লেখা হয়েছে। যাতে ইনকিলাব, ইত্তিহাদ এবং ইন্তিফাদার বার্তা দেওয়া রয়েছে। যা আন্দোলন এবং আন্দোলনের সময় একতাবদ্ধ থাকা এবং পরবর্তী সময়ে সংস্কারের আমাদের উৎসাহ যোগায়।

নিজের কাজ নিয়ে আত্মতৃপ্ত মোল্লা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের এই ক্যালিগ্রাফি নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া আলজাজিরা ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা গর্বের। আমাদের মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল আমরা বাংলাদেশে যে আন্দোলনের মাধ্যমে, ইনকিলাবের মাধ্যমে একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি তা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।

প্রতিভাবান এই আর্টিস্ট বলেন, আমরা একটা সুন্দর দিনের স্বপ্ন দেখি। এই মেসেজটা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই। যাতে বিশ্বের কোনো মানুষ জুলুমের শিকার না হয়। সে যেই ধর্মের বা বর্ণের হোক। যদি জুলুম এবং মজলুমের কথা আসে, বর্তমান বিশ্বে ফিলিস্তিনকে সবার আগে রাখতে হবে। কারণ সেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল যে পরিমাণ নির্মমতা চালাচ্ছে এটা আমাদের কারও অজানা নয়। আমরা ফিলিস্তিনি ভাইদের সঙ্গে একতাবদ্ধ আছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাংলাদেশের পতাকার সঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকা দিয়ে আমরা বলতে চেয়েছি, আমরা একতাবদ্ধ থাকলে চীন আরব এবং হিন্দুস্থান এবং গোটা বিশ্বই বিজয়ের পদ চুম্বন পাবে ইনশাআল্লাহ। আমরা মূলত এই মেসেজটাই মৌলিকভাবে দিতে চাই যে, আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। তাহলে আমাদের মধ্যে কেউ বিভেদ ছড়াতে পারবে না।

আরবিতেই কেন ক্যালিওগ্রাফি, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সৌন্দর্যের দিক দিয়ে পুরো বিশ্বব্যাপী আরবির যে সৌন্দর্য এটা মানুষের কাছে অনেক বেশি পরিচিত। সেখান থেকেই আমাদের শতাধিক সদস্যের গ্রাফিতির টিম পুরো বাংলাদেশের সকল জেলাতেই কাজ করছে। বিশেষ করে জেলা শহরগুলোতে।

কাঁচপুরের এই জায়গাটি নির্বাচন করার কারণ

তিনি বলেন, এই মহাসড়কটা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট—এই দুটি বিভাগের ঢাকামুখী লেন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ এই পথ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। তাই এটা খুবই চমৎকার একটা স্পট বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এখানে একটা মেসেজ দিলে, এখানে স্বাধীনতা-পরবর্তী সংস্কারের জন্য একটা ঐক্যের ডাক দিলে খুব সুন্দর হয়। স্বাধীনতাকে ধরে রাখার জন্য দেশকে পুনরায় সুন্দরভাবে সংযুক্ত করার জন্য এখানে ঐক্যের একটি মেসেজ দেই। সেই চিন্তা ধারণা থেকেই আমি এই জায়গাটি নির্বাচন করি।

১২ সদস্যের ১২ দিনের কাজ এই ক্যালিগ্রাফি

আমরা আমাদের টিমের প্রায় ১২ জন সদস্যের ১২ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে পুরো বাংলাদেশের মানুষের সামনে আমাদের এ গ্রাফিতি শেষ করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের আগমীদিনের চাওয়া হচ্ছে—বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ শিল্পী তৈরি হোক। সেজন্য আমরা আগামীতে বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমাদের বিভাগীয় শহরগুলোতে ক্যালিগ্রাফি এবং গ্রাফিতির ওপরে ফ্রি কোর্স ও কর্মশালা করানো। বর্তমান সময়ে যারা সারা দেশে গ্রাফিতি করেছেন, তাদেরকে অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা দেওয়া। এ সমস্ত শিল্পীদেরকে জাতির সামনে তুলে ধরা। এগুলো আমাদের ইমিডিয়েট কর্মসূচি।

এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *