কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারী বাবুকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে হত্যার হুকুমের আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাতে রাইসুল হক বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলার কোনো আসামিকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারী বাবুকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে হত্যার হুকুমের আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাতে রাইসুল হক বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলার কোনো আসামিকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীসহ মোট ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০/৫০ জন। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান।
নিহত বাবু কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের শালদহ এলাকার মৃত নওশের আলীর ছেলে। বাবু পেশায় স্বর্ণকার ছিলেন।
বাবু হত্যা মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে-কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীকে।
এ ছাড়াও এ মামলার আসামি করা হয়েছে-কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম বাবুসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মীসহ মোট ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
স্বর্ণকার বাবু হত্যা মামলার বাদী রাইসুল হক এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করি। আমি, বাবুসহ (নিহত) অনেক লোকজন গত ১৭ জুলাই থেকে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্নস্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে বকচত্বরে অবস্থানকালে আসামিরা হাতে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁঠা ও ধারালো চাপাতি নিয়ে আমাদের পথরোধ করে। ১.২, ৩ ও ৪নং আসামি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী হুকুম দিয়ে বলেন, ‘শালাদের খুন করে ফেল’। তাদের হুকুম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসামিরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁঠা ও ধারালো চাপাতি নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমাদেরকে ধাওয়া করে। তখন আমরা জীবন বাঁচানোর জন্য ছয় রাস্তার দিকে দৌড় দিই। এরপর আমরা থানাপাড়ার আড়ংয়ের সামনে রাস্তায় গেলে আসামিরা বাবুর কাঁধে ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। এতে বাবু তাৎক্ষণিক রাস্তার ওপর পড়ে যায়। তখন ৫নং আসামি (কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী) বাবুকে হত্যার উদ্দেশ্যে চাপাতি দিয়ে তার মাথার ডান পাশে একটি কোপ মেরে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।
৭নং ও ৮নং আসামি (কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস) ধারালো চাকু দিয়ে ভিকটিম বাবুর শরীরের বিভিন্নস্থানে কোপ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। ১০ নম্বর আসামি (কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম) বাবুর ডান হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তার হাড়ভাঙা জখম হয়। ১১, ১২, ১৩ নম্বর আসামি (মহিদুল কমিশনার, মাহাবুল ও কৌশিক কাউন্সিলর) বাবুকে ধারালো চাপাতি ও চাকু দিয়ে আঘাত করলে শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম হয়। অন্যান্য আসামিরা বাবুকে মারপিট করে। আমরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ৬ ও ৯ নম্বর আসামি (হাসিব কুরাইশি ও হাবিবুর রহমান হাবি) আমাদের দিকে লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে গুলি করে এবং সামনে আগাইয়া আসলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বাবু নিস্তেজ হয়ে গেলে আসামিরা উল্লাস করতে করতে বকচত্বরের দিকে চলে যায়। তখন আমরা ভিকটিম বাবুকে আহত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবুকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, বাবু হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
এ ছাড়াও ৫ আগস্ট বিকেলের দিকে কুষ্টিয়া শহরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছয় রাস্তার মোড়ে আব্দুল্লাহ নামে এক শিশুকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পৃথক একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে হত্যার হুকুমের আসামি করা হয়েছে। অস্ত্র দিয়ে গুলি করার আসামি করা হয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতাকে।
বৃহস্পতিবার নিহত আব্দুল্লাহর বাবা লুকমান হোসেন কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৫ অগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শহরের ছয় রাস্তার মোড়ে আব্দুল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আব্দুল্লাহ কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস অফিস-সংলগ্ন চায়ের দোকানে বাবার সঙ্গে কাজ করতো। আব্দুল্লাহ চর থানা পাড়ার লোকমান হোসেনের ছেলে।
আব্দুল্লাহ হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে করা হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীসহ মোট ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০/২০ জনকে।
রাজু আহমেদ/এএমকে