আন্দোলনকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষায় ‘আঁচলে’র ছয় প্রস্তাব

আন্দোলনকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষায় ‘আঁচলে’র ছয় প্রস্তাব

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। যা স্বল্পমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশন। সে বিবেচনায় আক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় এবং সঠিক ইকোসিস্টেম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের প্রতি ছয়টি প্রস্তাবনা রেখেছে সংগঠনটি।

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। যা স্বল্পমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশন। সে বিবেচনায় আক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় এবং সঠিক ইকোসিস্টেম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের প্রতি ছয়টি প্রস্তাবনা রেখেছে সংগঠনটি।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে সরকারের সরাসরি চান তারা।

প্রস্তাবনাগুলো হলো–

১. মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য অভিজ্ঞ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলো উদঘাটন করে সমাধানের ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা।

২. জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তাদের তালিকা তৈরি করে মানসিক সেবা প্রদান করা। আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যকে সরকারি/বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করা (সব শ্রেণি, পেশার মানুষ ও সংখ্যালঘুরা এর আওতায় পড়বে)।

৩. প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং মনোবিজ্ঞানী/মনোচিকিৎসক এই দুইয়ের সমন্বয় করে সব জেলা-উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একটি মানসিক স্বাস্থ্য কর্নার তৈরি করা। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ট্রেনিংয়ের আওতায় এনে দক্ষ জনবলে রূপান্তর করা এবং প্রয়োজনে তাদের মাধ্যমে স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান সচল রাখা।

৪. স্কুল, কলেজ, আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য ট্রমা রিকভারির কর্মশালা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা।

৫. সরকারি উদ্যোগে একটি ‘হটলাইন সেবা’ চালু করা, যার মাধ্যমে সব অঞ্চলের ছাত্র-জনতা মনোবেদনা শেয়ার করতে পারেন এবং প্রয়োজনে কাছাকাছি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

৬. একটি গবেষণা সেল গঠন করা এবং বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহার করে সেবা প্রদান পরবর্তী পুরো সময়ের গবেষণালব্ধ তথ্য জাতীয়ভাবে সংরক্ষণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত বা প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। যার মধ্যে অনেকেই বিভিন্নভাবে আমাদের থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে তাদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের মধ্যে আমরা এমন রোগীদের পাচ্ছি, যারা আন্দোলনের পর আর ঘুমাতে পারছেন না। বারবার বন্ধু বা আশপাশের মানুষের মৃত্যুর স্মৃতিগুলো তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাই তাদের মানসিকভাবে স্বাভাবিক করতে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

সংগঠনটির সভাপতি তাহসেন রোজ বলেন, আমরা দেখেছি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আহত-শহীদদের তালিকা, চিকিৎসা সেবা দিতে স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখানে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যথাযথ মনোযোগ প্রদান না করলে এ প্রবণতা আমাদের সামাজিক কাঠামো এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কামাল ‍উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *