অবৈধ সংযোগ বন্ধে চালু হতে পারে আবাসিক খাতের গ্যাস সংযোগ

অবৈধ সংযোগ বন্ধে চালু হতে পারে আবাসিক খাতের গ্যাস সংযোগ

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর আবার চালু হতে পারে আবাসিক খাতে পাইপলাইন গ্যাসের সংযোগ। একইসঙ্গে চুলা বা বার্নার বর্ধিত করার বিষয়টিও অনুমোদন পেতে পারে। তিতাস গ্যাস কোম্পানির মাধ্যমে পেট্রোবাংলা হয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে এমন প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর আবার চালু হতে পারে আবাসিক খাতে পাইপলাইন গ্যাসের সংযোগ। একইসঙ্গে চুলা বা বার্নার বর্ধিত করার বিষয়টিও অনুমোদন পেতে পারে। তিতাস গ্যাস কোম্পানির মাধ্যমে পেট্রোবাংলা হয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে এমন প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক যুগ ধরে বৈধভাবে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে রেখেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। মূলত গুটিকয়েক এলপিজি (বোতলজাত গ্যাসের সিলিন্ডার) ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, কার্যত আবাসিক গ্যাস সংযোগ বৈধ উপায়ে বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ গ্রাহক অবৈধ উপায়ে নিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি পুরোনো গ্রাহকেরই বার্নার সংখ্যা বেড়েছে। এতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সম্প্রতি তিতাস গ্যাস কার্যালয়ে সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, দিনের পর দিন আবাসিক খাতে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও অভিযান চালিয়ে সবাই প্রায় ক্লান্ত। কারণ, আবাসিক খাতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা চিহ্নিত করা তিতাসের জন্য কঠিন কাজ। তবে গ্রাহকরা অবৈধভাবে ব্যবহার করতে চান না। বৈধ সংযোগ বন্ধ থাকায় অবৈধ ব্যবহার বাড়ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, মোট গ্যাসের শতকরা ১২ শতাংশ ব্যবহার করা হয় আবাসিক খাতে। বাকিটা শিল্প ও অন্যান্য খাতে। অথচ প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে আবাসিক খাতে অবৈধ ব্যবহার বন্ধের অভিযানে। অন্যদিকে শিল্পে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ থাকলেও সেদিকে নজর কম দেওয়া হচ্ছে।

মাঠ কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ বা বার্নার বর্ধিত করার অনুমোদন দিলে বিদ্যমান ব্যবহারের মধ্যেই শত কোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে। নতুন গ্যাস বরাদ্দের দরকার হবে না। গ্রাহকরা কেবল কাগজ কলমে বৈধতা পাবে।

তিতাস সূত্রে আরও জানা যায়, বিগত সরকারের প্রতিমন্ত্রী এবং জ্বালানি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সচিবরা গ্যাসের লোকসান কমাতে বারবার চেষ্টা করেছেন আবাসিক সংযোগ চালু এবং বার্নার বর্ধিতের অনুমোদন দিতে। কিন্তু গুটিকয়েক এলপিজি ব্যবসায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে আবাসিক খাতে সংযোগসহ চুলা বর্ধিত করা বন্ধ রাখে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, শুধু তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে আবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য ৫৬ হাজার গ্রাহক ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে গ্যাস সংযোগ পাননি। তাদের সংযোগও দেওয়া হয়নি, আবার টাকাও ফেরত দেয়নি। একপর্যায়ে তিতাস সিদ্ধান্ত নেয়, কেউ চাইলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তবে অধিকাংশ গ্রাহক টাকা ফেরত নেননি।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেওয়া এখন অত্যন্ত সহজ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানে একাধিক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এসব সিন্ডিকেটকে প্রভাবশালী স্থানীয় মহল সমর্থন দিয়ে আসছে। ফলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো চাইলেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করতে পারছে না।

তিনি বলেন, যাদের আগে একটা বা দুটো গ্যাসের বার্নার অনুমোদন ছিল সময়ের সঙ্গে তারা বাড়িয়ে নিয়েছে। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলো যথেষ্ট লোকবলের অভাবে সব বাড়ি বাড়ি গিয়ে এগুলো চেক করতে পারছে না। অন্যদিকে যাদের চেক করে দেখার দায়িত্ব তারাও অনেক সময় অবৈধ সুযোগ নিয়ে চলে আসছেন। ফলে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া নতুন বাড়িঘরে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিতাস বর্তমানে তার বিতরণ এলাকায় সাড়ে ২৮ লাখের বেশি গ্রাহকের কাছে আবাসিক গ্যাস সরবরাহ করছে। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার ধারণা, বৈধভাবে সাড়ে ২৮ লাখ আবাসিক গ্রাহক থাকলেও অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যাও প্রায় সমান। একদিকে তিতাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে, অন্যদিকে আবার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ নিয়ে নিচ্ছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে জ্বালানি বিভাগ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় আবাসিক খাতে আর কোনো গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। ডিমান্ড নোট ইস্যু করা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্রাহকদের ডিমান্ড নোটের টাকা ফেরত দিতে একটি কমিটি করেছিল। কমিটির দায়িত্ব ছিল সঠিক গ্রাহক চিহ্নিত করে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া খুঁজে বের করা। তবে ২০২৪ সালেও তারা গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারেনি।

ওএফএ/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *