অবৈধ ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ৫ দিন ধরে শ্রমিকদের অবস্থান

অবৈধ ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ৫ দিন ধরে শ্রমিকদের অবস্থান

গাজীপুরের টঙ্গীতে চাকরিচ্যুত ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়েছেন শ্রমিকরা।

গাজীপুরের টঙ্গীতে চাকরিচ্যুত ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়েছেন শ্রমিকরা।

টঙ্গীর কাদেরিয়া এলাকার ফেমাস গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ফেমাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) থেকে শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত আট দফা দাবি জানিয়ে কারখানায় এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাটিতে ১২৭ জন শ্রমিক কাজ করতেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানার সকল শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতের বিষয়টি মৌখিক ঘোষণা করেন। ঘোষণার পর শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে অবস্থান নেয়। বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকালে কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশ বোর্ডে চাকরিচ্যুত ও কারখানা বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়।

কারখানাটির সকল শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের গত অক্টোবর মাসের বেতন, অতিরিক্ত মজুরি পরিশোধ করেননি মালিক। এ সময় শ্রমিকরা তাদের পাওনা পরিশোধের দাবি জানালে কারখানা মালিক অপারগতা প্রকাশ করেন। শ্রমিকরা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ জানিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী কারখানাটির ভেতরে অবস্থান করছেন।

এরপর কারখানা মালিকের সঙ্গে কথা বলার জন্য শ্রমিকরা কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারখানা মালিক কথা বলতে রাজি হননি। পরে পাওনা আদায়ে সহযোগিতা চেয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শিল্প পুলিশসহ (আইআরআই) বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের কাছে আবেদন করেছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকদের আট দফা দাবি হলো—কারখানা বন্ধের নোটিশের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন মাসের মূল বেতন, প্রতি বছর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ বোনাস (সার্ভিস বেনিফিট), গ্র্যাচুইটি প্রদান, অব্যাহতি অর্জিত ছুটির টাকা প্রদান, কারখানার মূল লভ্যাংশের শেয়ার টাকা প্রদান (প্রফিট শেয়ার), অক্টোবর মাসের বেতন, গ্রুপ বীমার সুবিধা, বকেয়া রেশন সুবিধাসহ অন্যান্য সকল সুবিধা দেওয়া।

শ্রমিকরা বলেন, গত অক্টোবর মাসের বেতন, শ্রমের অতিরিক্ত মজুরিসহ (ওভারটাইম) আমাদের আট দফা দাবি জানিয়েছি। কারখানা মালিক পাওনা পরিশোধ না করে চাকরিচ্যুতের কথা জানিয়ে দেয়। তারপর কারখানাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফেমাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা অবস্থান করছেন। কারখানা মালিক আমাদের কোনো দাবি মেনে নেয়নি। বকেয়া বেতনও পরিশোধ করছেন না। আমরা জানতে পেরেছি কারখানাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য যৌক্তিক দাবি আদায়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। রোববার বিকেলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করতে আমাদের শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিকে যেতে বলা হয়েছে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, কারখানা মালিকের প্রতিনিধি মো. রানা আমাদের জানিয়েছেন রোববার বিকেলে কারখানাটির মালিক মোহাম্মদ হাসান আমাদের কার্যালয়ে আসবেন। সেইসঙ্গে সকল শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে ১০ জন শ্রমিকও আসবেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (টঙ্গী জোন) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা অবস্থান করছেন। কারখানায় বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুর থেকে বিরত থাকতে শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কারখানা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কারখানার ভেতরে শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ফেমাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড কারখানা মালিক মোহাম্মদ হাসানের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

শিহাব খান/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *