হাজির হননি, বিদেশে বসে দুদকে মেইল করেছেন নাফিজ সরাফাত

হাজির হননি, বিদেশে বসে দুদকে মেইল করেছেন নাফিজ সরাফাত

ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তলবি চিঠি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সংস্থাটিতে হাজির হননি তিনি। উল্টো সময় চেয়ে মেইল করেছেন।

ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তলবি চিঠি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সংস্থাটিতে হাজির হননি তিনি। উল্টো সময় চেয়ে মেইল করেছেন।

মেইলে অভিযোগের জবাবে কিছু বক্তব্য যোগও করেছেন তিনি। তবে এই মুহূর্তে কোন দেশে তিনি অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে কিছুই জানাননি।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদকের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদেশে বসে এই প্রক্রিয়ায় কোনো মেইল করার আইনগত বৈধতা নেই। তারপরও বিষয়টি নিয়ে দুদক লিগ্যাল উইংয়ের বক্তব্য নেওয়া যেতে পারে। 

এর আগে গুলশান ও খিলক্ষেতের বাসার ঠিকানায় তলবি চিঠি দিয়েছিল দুদক উপপরিচালক মাসুদুর রহমান। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঋণ জালিয়াতিসহ আর্থিক অনিয়মের অনেক অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাত থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ পাচার করে কানাডায় তিনি বাড়ি করেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পলাতক কিংবা দেশের বাইরে রয়েছেন।

২০১৭ সালে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর নাফিজ সরাফাত প্রতারণা, জালিয়াতি করে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নেন। যদিও ব্যক্তিগত ও স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তিনি চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন।

দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাফিজ সরাফাত ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান গ্রাম-বাংলা ফার্টিলাইজার কোম্পানিকে ৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন। সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে জেসিকা ইন্টারন্যাশনালের অনুকূলে ৬০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ১৫০ কোটি টাকা পদ্মা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা সিকিউরিটিজের মাধ্যমে নাফিজ সরাফাতের ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণাধীন স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এ ছাড়া, ফ্লোরা সফটওয়্যার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ নেন তিনি। পদ্মা ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা সিকিউরিটিজকে ব্যবহার করে শেয়ারবাজার থেকে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ রয়েছে।

নাফিজ সরাফাত চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের কারণে পদ্মা ব্যাংক দ্বিতীয়বারের মতো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। তিনি ৫০০ কোটি টাকার একটি অংশ দিয়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার কিনেছেন। কৌশলে তিনি নিজের স্ত্রী, সহযোগীসহ তিনজনকে ব্যাংকের পরিচালক পদে বসান। তিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ারও চেষ্টা করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে একটি প্লট নিয়মবহির্ভূতভাবে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে দেওয়া হয়। পদ্মা ব্যাংকের আগে আইএফআইসি ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক বিপর্যয়ের ঘটনায় জড়িত ছিলেন নাফিজ সরাফাত। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৩২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। ভুয়া ঋণ আদায়ের জন্য মামলা করে ৫ কোটি টাকা আইনজীবীর ফি হিসেবে আত্মসাৎ করা হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজ ও পরিবারের নামে অফিস ভাড়া ও অগ্রিম হিসাবে ২৫ কোটি টাকা নিয়েছেন ব্যাংক থেকে।

নাফিজ সরাফাতের ভগ্নিপতি ফারমার্স ব্যাংকের গাজীপুরের মাওনা শাখার ম্যানেজার শেখ কামরুল হোসেন শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কামরুল এই শাখা থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এ ছাড়া, মাওনা শাখা থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ২০১ কোটি টাকা অনিয়মিত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আরএম/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *