স্বামী হত্যার আসামিরা প্রকাশ্যে, হুমকি পেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নারী

স্বামী হত্যার আসামিরা প্রকাশ্যে, হুমকি পেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নারী

স্বামীকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করে বেশ চাপে ছিলেন ভুক্তভোগী এক নারী। এর মধ্যে স্বামী হত্যা মামলার আসামি এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা আবারো ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার শিকার হন। বিচার পাওয়ার আশায় আবারো মামলা দায়ের করেন তিনি। ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে নতুন বাংলাদেশে এবার অন্তত বিচার পাবেন, আসামিরা পাবেন শাস্তি। তবে, সেটি এখনো হয়নি, আসামিরাই রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এমনকি আসামিদের প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

স্বামীকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করে বেশ চাপে ছিলেন ভুক্তভোগী এক নারী। এর মধ্যে স্বামী হত্যা মামলার আসামি এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা আবারো ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার শিকার হন। বিচার পাওয়ার আশায় আবারো মামলা দায়ের করেন তিনি। ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে নতুন বাংলাদেশে এবার অন্তত বিচার পাবেন, আসামিরা পাবেন শাস্তি। তবে, সেটি এখনো হয়নি, আসামিরাই রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এমনকি আসামিদের প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

তার অভিযোগ, আসামিরা প্রভাবশালী। বিশেষ করে এক নম্বর আসামি শ্যামল হাসান রুবেল ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক কাউন্সিলর সলিমুল্লা সলুর প্রধান সহযোগী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় সুজন নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় একটি হত্যা মামলায় র‌্যাবের বের হাতে গ্রেপ্তার হন সলু। কিন্তু থামেনি তার সহযোগী রুবেলের বেপরোয়া জীবনযাপন। মূলত রুবেলের হুমকির কারণে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই নারী।

ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় ভুক্তভোগী নারীর দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করার জন্য যান ওই নারী। এ সময় তাকে স্বামী মো. রানাকে হত্যা মামলার আসামি সবুজ, শাহ আলমের সঙ্গে আসে নতুন দায়ের করা মামলার ১ নম্বর আসামি শ্যামল হাসান রুবেল, সাজ্জাদ, মল্লিক পারভেজ, পূর্ব পরিচিত পলাশ, মো. হীরা, চাঁন মিয়া বেশ কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরেন। তাদের সঙ্গে স্বামী হত্যা মামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।

কেরাণীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সামনের রাস্তায় একা পেয়ে কথা আছে বলে তারা ওই নারীর গতিরোধ করেন। একপর্যায়ে সবুজ ও শাহ আলমদের বিরুদ্ধে করা পিটিশন মামলা তুলে নিতে বলা হয়। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই নারীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা উঠিয়ে ঝিলমিল প্রজেক্টের ভেতর পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে সবাই মিলে ধর্ষণচেষ্টা করেন। শ্যামল হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করেন। গলা টার্গেট করে কোপ দিলে সরে যাওয়ায় বাম হাত কেটে যায়। ৮ থেকে ১০ ইঞ্চির মতো কেটে যায়, ধস্তাধস্তি ও ব্যাপক মারধরের শিকার নারীকে জামা-কাপড় টেনে ছিড়ে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করা হয়। 

তবে, ভুক্তভোগীর চিৎকারে পথচারী ও স্থানীয়রা এগিয়ে এলে সটকে পড়েন আসামিরা। চলে যাওয়ার সময় বলেন, আজকে তুই কোনোমতে বেঁচে গেলি, কিন্তু মামলা তুলে না নিলে মেরে লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে যান। এরপর স্থানীয় এক নারীর সহযোগিতায় মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ভুক্তভোগী নারী। পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে চার দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন ওই নারী। মামলা নম্বর ১৯/৫৮৩।

মামলার সূত্র মতে, আসামিরা হলেন, শ্যামল হাসান রুবেল, মো. সাজ্জাদ, মল্লিক পারভেজ, পলাশ, মো. হীরা, চাঁন মিয়া, সবুজ, শাহ আলম। ভুক্তভোগী নারীর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরে। 

ভুক্তভোগী বাদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী ভাঙারির ব্যবসা করতেন। একবার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে থানা যাত্রাবাড়ী থানা হেফাজতে নিয়ে আমার স্বামীকে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় একটি মামলা করছিলাম। স্বামীকে হারিয়ে আমিই হুমকিতে ছিলাম। ওই মামলাটাই তুলে নিতে বারবার চাপ ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম, বাঁচতে তো হবে। সে জন্য গত ৪ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলাম কেরাণীগঞ্জে পাসপোর্ট অফিসে। সেখান থেকে আমাকে জিম্মি করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়। সে দিন কোনোরকমে জখম নিয়ে বেঁচে আসছি।

তিনি বলেন, আমি ভুক্তভোগী, অথচ আমাকেই হুমকিতে রাখা হয়েছে। আমার এক মেয়ে দুই ছেলে। স্বামী হারিয়ে বিপাকে আছি। এখন তো স্থির হতে পারছি না, চাকরিও করতে পারছি না। স্বামী হত্যা মামলা তুলে নেওয়ার চাপ তো আছেই। ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আমার দায়ের করা মামলার ১ নম্বর আসামিসহ অন্যদের প্রাণনাশের হুমকির কারণে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দুই সাবেক কাউন্সিলরের সঙ্গে তাল দিয়ে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন ওই নারীর মামলার এক নম্বর আসামি শ্যামল। ডিএনসিসির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সলিমুল্লা সলু ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্টনের সঙ্গে সখ্যতার সুযোগে শ্যামল এলাকায় দাপট দেখিয়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে ‍যুক্ত। তার রয়েছে কিশোর গ্যাং গ্রুপ। যাদেরই হুমকি মনে করতেন, লেলিয়ে দিতেন কিশোর গ্যাং সদস্যদের। মুক্তিযোদ্ধাদের বরাদ্দকৃত জমি দখল, ফুটপাতের দোকান, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আবাসিক হোটেল থেকে মাসে প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকা চাঁদাবাজিতে সাবেক কাউন্সিলর রাষ্টনের হয়ে কাজ করতেন এই শ্যামল। 

দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা জেলা দক্ষিণ ডিবি পুলিশের হাতে মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ এখন মামলার অগ্রগতি ও আসামি গ্রেপ্তার সংক্রান্তে বলতে পারবে। 

ডিবি ঢাকা জেলা দক্ষিণ ডিবির ইন্সপেক্টর সাইদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাত্র মামলাটি হাতে পেয়েছি। মামলা হলেই তো আর আসামি ধরা যায় না। তদন্ত করার সময় তো দিতে হবে। আমরা মামলাটি হাতে পাওয়া মাত্র তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছি। সত্যতার ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। 

ঢাকার এসপি আহম্মদ মুঈদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগীর মামলার তদন্তের অগ্রগতি আমরা জেনে নিচ্ছি। মামলায় আসামি যারাই হোক না কেন, আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি।

জেইউ/কেএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *