জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তে বারবার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করছে ভারত। চার দিনে দুই দফায় তাদের বাধা দিয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তে বারবার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করছে ভারত। চার দিনে দুই দফায় তাদের বাধা দিয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের উচনা ঘোনাপাড়া সীমান্তে গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিজিবির বাধার মুখে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
গত পরশু থেকে একই উপজেলার সোনাতলা সীমান্তের কিছু অংশে আবার নতুন করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করে বিএসএফ। স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিজিবি সদস্যরা বিএসএফকে বাধা দেন। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে আবার কাজ শুরু করলে বিজিবি আবারও বাধা দেয়। দুপুরে এ নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে বৈঠক হয়েছে।
সীমান্ত এলাকায় গিয়ে বিজিবি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলার ভারত সীমান্তের গয়েশপুর ও বাংলাদেশ সীমান্তের সোনাতলা অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই। গত কয়েকদিন ধরে এই অংশের মেইন পিলার ২৮০ নম্বরের সাব পিলার ১২ ও ১৩ নম্বরের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে মাত্র ৫ থেকে ১০ গজের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএসএফ। অথচ নিয়ম হলো, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কেউ এ ধরনের বেড়া নির্মাণ করতে পারবে না।
স্থানীয়রা জানান, বিএসএফ সদস্যরা দিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালান আর রাতে কাঁটাতারের বেড়া দেন। এভাবে দুটি সাব পিলার অংশে তারা বেড়া দিয়ে ফেলেছেন। স্থানীয়রা বিজিবিকে বলার পর সেখানে বাধা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় রোববার দুপুরে ২৮০ মেইন পিলারের ১৫ নম্বর সাব পিলারের কাছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বৈঠক করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা বাংলাদেশ সীমান্তের জমির আইল, পুকুরের পাড়ে বসে রয়েছেন। আর বিজিবি সদস্যরা ধানখেতের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হাটখোলা বিওপি কমান্ডার সাইদুল বারীসহ বিজিবির কয়েকজন সদস্য বৈঠকের জন্য সাব পিলার ১৫ নম্বরে গিয়েছেন। সেখানে ভারতের গয়েশপুর ক্যাম্পের বিএসএফ কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে তার বৈঠক চলছে।
দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক ১টা পর্যন্ত চলে। বৈঠক শেষে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি হাটখোলা বিওপির কমান্ডার সাইদুল বারী।
সোনাতলা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহজাহান বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে তারা (বিএসএফ) এসব ঘিরে ফেলছে (বেড়া দেওয়া)। তারা দিন করে জঙ্গল (আগাছা) কাটে, আর রাত করে ওই জায়গা ঘিরে। বিজিবি নিষেধ করার পরে আজ বৈঠকে বসেছিল। বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি জানি না।
আরেকজন বাসিন্দা কামরুজ্জামান বলেন, তারা (বিএসএফ) কি আন্তার্জাতিক সীমানা মানবে না? তারা জোর করে এসব করতেছে। আমরা বিষয়টি দেখার জন্য বিজিবির ডিজি (মহাপরিচালক) মহোদয়ের কাছে অনুরোধ জানাই।
আরিফুল ইসলাম নামে একজন বলেন, বিজিবি গতকাল বাধা দিয়েছিল। রাতে কাজ বন্ধ থাকার পর সকালে আবার কাজ করা হয়। পরে বিজিবি বাধা দিয়েছে। এরপর তারা বৈঠক করেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য লাইজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি জানার পর বিজিবিকে জানানো হলে গতকাল (শনিবার) তারা বাধা দেয়। আজ সকালে বিএসএফ আবার কাজ শুরু করে। এরপর বিজিবি এসে বাধা দিয়ে তাদের (বিএসএফ) সঙ্গে বৈঠক করে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সীমানার ১৫০ গজের মধ্যে ঘেরাও করা যাবে না। কিন্তু তারা সেটি মানছে না।
জানতে চাইলে ২০ বিজিবির জয়পুরহাট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমরা বাধা দিয়েছি। তারা কাজ স্থগিত রেখেছে। তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে, আর কাজ করবে না বলে জানিয়েছে। যে অংশে কাজ করেছে সেটি তারা তুলে নিয়ে যাবে।
চম্পক কুমার/আরএআর